স্নান শেষে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে লক্ষ্য করলেন মুখে কয়েকটি ব্রণ উঠেছে। হাত ও পায়ের ত্বক আগের চেয়ে রুক্ষ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরপর হাতের ত্বক শুস্ক হয়ে যাচ্ছে। আর পায়ের কথা নাইবা বললাম। গোড়ালি ফেটে যাচ্ছেতাই অবস্থা! হ্যাঁ, শীত আসার আগে থেকে শুরু করে পুরো শীতে ত্বকের এমন নাজেহাল অবস্থা হয়। সেই সঙ্গে চুলেরও বারোটা বাজে। আবহাওয়া পরিবর্তন ও খুশকির কারণে হুট করেই আগের চেয়ে বেশি করে চুল পড়তে থাকে। এ সময় ত্বক ও চুল প্রাণবন্ত রাখতে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে।

ত্বকের যত্ন :শীতে ত্বকের যত্নটা ঠিক কেমন হবে? রূপ বিশেষজ্ঞ শোভন সাহা জানান, শীতে ত্বকের দৈনন্দিন যত্নগুলো নিতে যে শুধু পার্লারে যেতে হবে কিংবা দামি পণ্য কিনতে হবে এমনটা নয়। তিনি জানান, ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই নেওয়া যায় ত্বকের যত্ন। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় বেড়ে যায় ধুলাবালির পরিমাণ। তাই ত্বকের লোমকূপে জমে যায় বাড়তি ময়লা। বারবার ফেসওয়াশ ব্যবহারে ত্বকের স্বাভাবিক ময়েশ্চারাইজার নষ্ট হয়ে রুক্ষ হয়ে যায়। তাই ত্বক ক্লিনজার হিসেবে কাঁচা দুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি। কেননা দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন। গোসলের আগে সামান্য পরিমাণ কাঁচা দুধের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেললে সুন্দর ত্বক পাওয়া যাবে। এতে মুখের ময়লা দূর হবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

ত্বক সুস্থ রাখতে স্ট্ক্রাবিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। মরা চামড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দুই চা চামচ টক দইয়ের সঙ্গে এক চা চামচ ওটস মিশেয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। হালকা শুকিয়ে গেলে একটু পানি নিয়ে স্ট্ক্রাবিং করে ধুয়ে নিন। ত্বক পরিস্কার রাখতে টোনিং করতে পারেন। প্রতিদিন রাতে মুখ ভালোভাবে পরিস্কার করে গোলাপজলে তুলার বল ভিজিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। এটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করবে। ত্বক নরম, কোমল ও উজ্জ্বল করতে প্রতি সপ্তাহে দু'দিন টক দই, মধু, অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে কমলার রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। ক্রিম হিসেবে মুখে লাগাতে পারেন বাটার। এটি লিপ বা ঠোঁট ফাটা রোধ ও সতেজ করতে কার্যকরী। এ ছাড়া ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার, শাকসবজি ও পর্যাপ্ত পানি পান ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখবে।

কেবল মুখ ও চুল নয়, শীতের রুক্ষতা প্রভাব পড়ে হাত ও পায়ের ত্বকেও। অনেকেই ভোগেন পা ফাটা সমস্যায়। শীতে হাত ও পায়ের যত্নের ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে রূপ বিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি জানিয়েছেন। হাত ও পায়ের মৃত কোষ দূর করতে স্ট্ক্রাব হিসেবে একটি বাটিতে বাদামি চিনি বা সাধারণ চিনি নিন। এতে অলিভ অয়েল বা নারেকেল তেল মিশিয়ে পায়ের ত্বক এবং হাতের ত্বকে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। এক সময় দেখা যাবে চিনি গলে গেছে এবং তেলের মিশ্রণটি হাত-পা বা পুরো শরীরে বসে গেছে। এর পর নেইল কাটার দিয়ে নখের চারপাশ সুন্দর করে কেটে নিন। একটি কুসুম গরম পানির গামলাতে পা ডুবিয়ে রাখুন। এতে গোলাপজল, লেবু, আপেল সিডার ভিনেগার, শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন।

এতে করে পায়ের গোড়ালি আগের চেয়ে নরম হবে এবং নখের চারপাশের ময়লাও কেটে যাবে।
এর পর পাথরের টুকরো কিংবা ব্রাশ দিয়ে ঘষে গোড়ালির মৃত চামড়াগুলো ঘষে তুলে ফেলুন। একটি কটনবার দিয়ে নখের ভেতর এবং চারপাশ পরিস্কার করে নিন। এবার গামলার পানি বদলে আবার কুসুম গরম পানিতে অলিভ অয়েল ও গোলাপজল মিশিয়ে নিন। এর পর এক টুকরো মাল্টা কেটে নখসহ পুরো পায়ে মৃদুভবে ঘষে নিন। মাল্টায় থাকা ভিটামিন-সি ত্বককে উজ্জ্বল করবে এবং নখের ভেতর ও বাইরের কালচে দাগ দূর করবে।

হাতের ত্বক ভালো রাখতে একটি বাটিতে পরিমাণমতো চন্দন গুঁড়া নিয়ে তাতে মধু, গুঁড়া দুধ বা ঘন লিকুইড দুধ এবং গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে হাত এবং পায়ে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

কোমল ও সতেজ ঠোঁটের জন্য বাদামি চিনির সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে ঠোঁটে স্ট্ক্রাব করতে পারেন। আধা চা চামচ মধুর সঙ্গে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালেও সতেজ থাকবে ঠোঁট। ত্বক সতেজ রাখতে ভালো মানের লিপবাম ব্যবহার করতে হবে। ঠোঁটের চামড়া হাত দিয়ে বারবার ওঠানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রাণবন্ত চুলের জন্য :রূপবিশেষজ্ঞ রাজিয়া জানান, শীতকালে স্ক্যাল্পে খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে চুল ময়লাও হয় তাড়াতাড়ি। এ সময় প্রতিদিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে চুল অনেকটাই রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই শীতকালেও চুলের মসৃণতা ধরে রাখতে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। সুন্দর ও প্রাণবন্ত চুল পেতে কিছু টিপস দেন তিনি।

১. কুসুম গরম নারকেল তেলের সঙ্গে পেঁয়াজের রস, মেথি গুঁড়া, টক দই, একটি ডিম, ভিটামিন-ই ক্যাপসুল, ক্যাস্টল অয়েল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুশকির ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন। ডিম, টক দই, মধু দূর করবে রুক্ষতা।
২. চুল সতেজ করতে পাকা কলা, টক দই ও নারকেল তেলের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগিয়ে নিন।
৩. চুলের গোড়া শক্ত করতে মেহেদি পাতার সঙ্গে পেঁয়াজ ও ডিম মিশিয়ে প্যাক লাগিয়ে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এই প্যাকটি লাগানোর আগে চুলে অবশ্যই তেল লাগিয়ে নেবেন। ৪০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। 

বিষয় : সজীব ত্বক চলের যত্ন

মন্তব্য করুন