- ফিচার
- বিশ্বকাপের জার্সি উন্মাদনা
বিশ্বকাপের জার্সি উন্মাদনা

গত ২০ নভেম্বর শুরু হয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। কাতারে শুরু হওয়া এই বিশ্বকাপ চলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই ২৯ দিন ফুটবলপ্রিয় মানুষের মধ্যে থাকবে টানটান উত্তেজনা। কথার লড়াই, বিতর্ক, সেই সঙ্গে জার্সি গায়ে চলাচল এবং শো অফ তো থাকছেই।
তাছাড়া প্রিয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ কাজ করে। সেই সঙ্গে জার্সিটা কিন্তু প্রিয়জন, পছন্দের মানুষ এবং পরিবারের সদস্যদেরও উপহার হিসেবে দেওয়া যায়। তা ছাড়া একা একা জার্সি পরার চেয়ে একসঙ্গে পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা আপনার সঙ্গীর সঙ্গে জার্সি পরার আনন্দ অনেক গুণ বেশি। এখনকার ট্রেন্ড এমনটাই বলছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স সবকিছু ছাড়িয়ে এই বিনোদনটি সবাইকে আনন্দিত করছে একসঙ্গে। বছরে একবার হলেও সবাইকে জার্সিও ছোঁয়া দিচ্ছে এই আয়োজন।
বিশ্বজুড়ে আছে এই ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজ। ৩২টি দলের ৩২টি জার্সি থাকলেও সবচেয়ে বেশি সমর্থক রয়েছেন ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার। এই দুই দলের জার্সি এ অল্প সময়ে অনেক বিক্রি হয়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। আপনার পছন্দের দলের জার্সি যেটাই কিনুন না কেন অবশ্যই চাইবেন ভালো এবং টেকসই জার্সি কিনতে। কিন্তু অনেক সময় প্রিয় দলের শখের জার্সিটাই হয়ে যায় নিম্নমানের। অনেক সময় সেলাইও থাকে খারাপ। প্রিয় দলের জার্সিটি যখন কিনবেন অবশ্যই জার্সিটি যেন বেশিদিন ঠিক থাকে এবং টেকসই হয় সেটাই সবার আশা থাকে। তাই আসুন আজ জার্সি কেনা নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিই।
জার্সির কাপড় যেভাবে চিনবেন : ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাওয়ায় কিছু সমর্থকরা হয়তো প্রিয় দলের জার্সি কিনে ফেলেছেন। তবে এই উন্মাদনা আর উত্তেজনার মাত্রা যত বাড়বে, তত বেশি জার্সির চাহিদা বাড়বে। তা ছাড়া অনেকে কেনার অপেক্ষায় আছেন প্রিয় দলের জার্সিটি। তাই জার্সি কিনতে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরি।
বতর্মানে বেশিরভাগ জার্সি সিন্থেটিক ফাইবারের সঙ্গে সুতি মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, তুলা এবং সিন্থেটিক ফাইবার ছাড়াও সাধারণত প্রাকৃতিক তন্তু যেমন শণ, সিল্ক্ক, বাঁশ, লিনেন, উল, নাইলন, রেয়ন ইত্যাদি থেকেও জার্সি তৈরি করা হয়। জার্সি তৈরিতে কখনও কখনও অতিরিক্ত স্থিতিস্থাপকতা দেওয়ার জন্য লাইক্রা যুক্ত করা হয়। তবে বুননশৈলীর ওপর নির্ভর করে দুই ধরনের জার্সি ফেব্রিক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড জার্সি। একে একক বোনা বা সরল বোনা বলা হয়, এটি সুচের একটি সেট ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এবং একদিকে মসৃণ প্রদর্শিত হয়। আরেকটি হচ্ছে ডাবল বোনা জার্সি। এই জার্সি ফেব্রিকের দুটি স্তর একসঙ্গে বোনা হয় এ জন্য একে ডাবল বোনা জার্সি বা ইন্টারলক জার্সি বলা হয়।
জার্সি ফেব্রিক অন্যান্য ফেব্রিকের চেয়ে পৃথক, কারণ জার্সি ফেব্রিককে সাধারণত প্রসারিত না করার জন্য ডিজাইন করা হয়। জার্সি ফেব্রিক ইন্টারলক জার্সির চেয়ে ঘন, আরও স্থিতিশীল এবং প্রান্তগুলোতে কার্ল হয় না। জার্সি সব সময় নরম এবং মসৃণ হতে হবে। পরিধানকারীদের জন্য আরামদায়ক না হলে এটা ভালো মানের জার্সি বলা যায় না।
শীত ও গ্রীষ্ফ্ম দুই আবহাওয়া দুই ধরনের জার্সি পরিধান করা উচিত। যেমন গরমে জার্সি পরলে জার্সির কাপড় ঘামগুলো শুষে নেয় এবং জার্সির ভেতরে বাতাস প্রবেশ করে। মনে রাখবেন, গরমের জার্সিগুলোতে কাপড়ের ওপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূক্ষ্ণ ফাঁকা অংশ থাকে। যার মাধ্যমে বাতাস চলাচল করে। জার্সির বাইরের অংশে থাকে পলিয়েস্টার, যা জার্সিকে ঝকঝকে দেখায়। অন্যদিকে, ভেতরের অংশে থাকে কটন। এই কটনের কাপড় শরীরের ঘামটুকু শুষে নেয়। সেই সঙ্গে জার্সিটাকেও বাইরে থেকে ভেজা ভেজা মনে হয় না। অথচ আমরা যেসব জার্সি পরি সেসব জার্সি ঘামলে শরীরের সঙ্গে লেগে যায়। এতে পুরো শরীর অভয়ব স্পষ্ট দেখা যায়।
অন্যদিকে, শীতের সময় যে জার্সি পরিধান করবেন সেটাও একই কাপড়ের। শুধু কাপড়ের পরিমাণ এদিক-সেদিক হবে। জার্সির বাইরের অংশে থাকবে পলিয়েস্টার, যা জার্সিকে ঝকঝকে দেখাবে। অন্যদিকে, ভেতরের অংশে থাকবে কটন। এসব জার্সিতে পলিয়েস্টারের পরিমাণ বেশি থাকে। সেই সঙ্গে কাপড় একটু মোটা হয়। এই জার্সিগুলোতেও কাপড়ের ওপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূক্ষ্ণ ফাঁকা অংশ থাকে।
মানভেদে জার্সির দাম :জার্সি কোয়ালিটিভেদে বিভিন্ন দামের পাবেন। একদম নরমাল থেকে আপনি ফ্যান এডিশনসহ কয়েক কোয়ালিটির জার্সি পাবেন বাজারে। শিশুদের জন্য ছোট সাইজের একটি নরমাল জার্সির দাম পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ভালো কোয়ালিটির জার্সি ৫০০ থেকে হাজারের ওপরেও পড়বে। অন্যদিকে, মাঝারি ও বড় সাইজের একটি নরমাল কোয়ালিটির জার্সির দাম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাবেন। আর ভালো মানের প্রিমিয়াম কোয়ালিটির একটি জার্সির দাম পড়বে ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
যেখানে পাবেন প্রিয় দলের জার্সি :বড় বড় শপিংমলে ভালো মানের জার্সি পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় সাধারণ জার্সিও পাবেন। বিভিন্ন ভ্যানেও আজকাল সাধারণ জার্সি পাওয়া যায়। তবে ভালো এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জার্সি পেতে বিভিন্ন স্পোর্টস সামগ্রীর দোকানে পাবেন। এ ছাড়া অনলাইনেও পাবেন বিভিন্ন দামের বিভিন্ন মানের জার্সি। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর জার্সি কেনার বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট রয়েছে। যেমন দারাজ, ফেব্রিলাইফ, ডেলিভারি হবে, নেইম্যাট, জার্সি.নেট.বিডি, জার্সি শপ বিডি, শপ্জ্, দিয়ামু, অ্যাটায়ার গুরু, বিবর্তন, শেষাংশ। এই ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর নতুন আপডেট জার্সি পাবেন। কেনাকাটার এই জিনিসটা যাদের বিরক্ত লাগে, তাদের জন্য এটা বেশ ভালো একটা দিক। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই সংগ্রহ করা যাবে আপনার পছন্দের দলের জার্সি।
মডেল :নাবিলা ও সেলিনা
মন্তব্য করুন