তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘিষ্ঠ জনগণের উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার একগুঁয়ে মানসিকতার পরিচয় দেয়। পূর্ব বাংলার সচেতন বুদ্ধিজীবী সমাজ ও জনগণ এর প্রতিবাদ করে এবং শুরু হয় বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আর্থসামাজিক ও স্বাধিকার অর্জনের পরিকল্পিত কার্যক্রম।
এই কর্মচেতনার নাট্যরূপায়ণ 'কবর', যা মুনীর চৌধুরীর রাজনৈতিক ও শৈল্পিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক। মাতৃভাষা আন্দোলনের মতো জাতীয় জীবনের অতীব গুরুত্ববহ ঘটনা ও শুদ্ধ চেতনাসঞ্চারী শিল্পোত্তীর্ণ প্রতিবাদী নাটক বাংলা নাট্যসাহিত্যে দ্বিতীয়রহিত। নাট্যাঙ্গনের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েও নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতাবলে যে শিল্পসফল নাটক লেখা সম্ভব, কবর এর উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
১৯৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণর ফলে অনেকে শহীদ হন। ঘটনাটি মুনীর চৌধুরীর শিল্পমানসে প্রচণ্ড নাড়া দেয়। রচিত হয় কালজয়ী নাটক 'কবর'। নাটকটি রচনার স্থান, কাল ও বাহ্যিক প্রেরণাও স্মরণযোগ্য। মুনীর চৌধুরী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক।
ভাষা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে তাঁকে দ্বিতীয়বার কারাবরণ করতে হয় ১৯৫২-৫৪ কালপরিসরে। ১৯৫৩-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী জেলখানাতে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন কতিপয় প্রগতিশীল রাজনৈতিক বন্দি। বামপন্থি বন্দি রণেশ দাশগুপ্ত মঞ্চায়নের জন্য ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে একটি নাটক রচনার অনুরোধ জানিয়ে মুনীর চৌধুরীকে গোপনে চিঠি দেন। কিছু নাট্যপ্রকৌশলগত শর্তসাপেক্ষে তিনি 'কবর' নাটকটি রচনা করেন এবং যথাসময়ে কারাকক্ষে মঞ্চস্থ হয়।
ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের দিবাগত রাতে কারফিউ জারি করে সব লাশের কবর দিতে গোরস্তানে নিয়ে আসা হয়েছে। ইন্সপেক্টর হাফিজকে এ দায়িত্ব অর্পণ করা হলেও নিখুঁত নির্ঝঞ্ঝাট ও গোপনীয়তার সাথে কর্ম সমাধানের জন্য স্বয়ং নেতা কবরস্থানে উপস্থিত হন। রাত প্রায় শেষ প্রহর। ভোর হবার পূর্বেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু এ স্বল্প সময়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশগুলো মিলিয়ে আলাদা আলাদাভাবে দাফন করা সম্ভব নয় বলে সবাইকে এক গর্তে পুঁতে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। ইসলাম ধর্মের রীতিবিরুদ্ধ বলে গোর- খোঁড়ার দল তাতে বাদ সাধে, আর বারুদের গন্ধ পেয়ে মুর্দা ফকির অভিযোগ তোলে এ-লাশ গুলিবিদ্ধ লাশ, আন্দোলনকারীর লাশ, এ-লাশ করবে যাবে না। অতিরিক্ত মদ্যপান ও ভীতির কারণে নেতা হাফিজের মনে অতিপ্রাকৃত আবহের সৃষ্টি হয়। গুলিবিদ্ধ লাশ উঠে এসে প্রতিবাদ করে-'আমরা কবরে যাব না। আমরা বাঁচব।'
হাফিজ নানা ছলনা ও উপদেশের মাধ্যমে তাদের কবরে ফিরে যেতে বলে। বিশ্বাসঘাতক নেতা প্রতিবাদী লাশের ওপর পুনরায় গুলি করার হুকুম দেয়। মুর্দা ফকির তখন সব লাশের উদ্দেশে চিৎকার করে আহ্বান জানায় : তোরা কোথায় গেলি? ... স্টম্ফূর্তি করে উঠে আয়। ... কবর খালি করে সব উঠে আয়। মদ্যপ নেতা ও হাফিজের নেশার ঘোর কেটে যায়। গার্ড এসে জানায়, কবর দেয়ার কাজ শেষ এবং ফেরার জন্য গাড়ি প্রস্তুত। যাবার সময় মুর্দা ফকিরের সঙ্গে নেয়ার জন্য নেতা নির্দেশ প্রদান করেন এবং সেই সাথে নাটকেরও সমাপ্তি ঘটে।
কবর নাটকের স্থিতিকাল সংক্ষিপ্ত, একাঙ্ক নাটকের আয়তন উপযোগী, অথচ পরিপূর্ণ ভাব প্রকাশক। এক রাত্রির শেষের কয়েকটি ঘণ্টা মাত্র এর পটভূমি। কিন্তু নাটকটির বিষয়গত প্রেক্ষাপট, ভাবগাম্ভীর্য ও তাৎপর্য বহুদূর সঞ্চারী। দ্বিপক্ষীয় দ্বন্দ্ব ও লড়াইয়ের যে ইতিবৃত্ত, তার একদিকে ক্ষমতাসীন সরকারপক্ষে নেতা, হাফিজ, গার্ড এবং অপরপক্ষে ভাষা-ঐতিহ্য-জীবন ও স্বদেশপ্রিয় ছাত্র, কেরানি, মুর্দা ফকির নিজ নিজ চারিত্র্যবৈশিষ্ট্যে ভাস্বর।
নাটকে নেতার নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। ক্ষমতালোভী, নির্যাতক, নির্মম, বিশ্বাসঘাতক, মিথ্যাবাদী প্রভৃতি অভিধায় তাকে চিহ্নিত করা যায়। আত্মকথন ও আচরণে এবং প্রধানত ছাত্র ও কেরানি মূর্তির সংলাপে নেতা চরিত্রের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়। নেতার চারিত্র্যলক্ষণ ও মানসিকতার সাথে তৎকালীন পাকিস্তানপন্থি মুসলিম লীগ নেতা বা প্রশাসকদের সাদৃশ্য বর্তমান-
'পুঁতে ফেল। দশ-পনেরো বিশ-পঁচিশ হাত- যত নিচে পার। একেবারে পাতাল পর্যন্ত খুঁড়তে বলে দাও। পাথর দিয়ে, মাটি দিয়ে, ভরাট করে গেঁথে ফেল। কোনোদিন যেন আর ওপরে উঠতে না পারে। কেউ যেন টেনে ওপরে তুলতে না পারে, যেন চ্যাঁচাতে ভুলে যায়।'
'জীবিত থাকতে তুমি দেশের আইন মানতে চাওনি। মরে গিয়ে তুমি এখন পরপারের কানুনকেও অবজ্ঞা করতে চাও। কমিউনিজমের প্রেতাত্মা তোমাকে ভর করেছে, তাই মরে গিয়েও এখন তুমি কবরে যেতে চাও না। তোমার মতো ছেলেরা দেশের মরণ ডেকে আনবে। সকল সর্বনাশ না দেখে বুঝি কবরে গিয়েও শান্ত থাকতে পারছ না। তোমাকে দেশের নামে, কওমের নামে, দিনের নামে যারা এখন মরেনি- তাদের নামে মিনতি করছি- তুমি যাও, যাও, যাও।'
ছাত্র-বুদ্ধিজীবীদের সাথে সাধারণ কর্মজীবী মানুষও যে ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল কেরানি তার দৃষ্টান্ত।
আত্মকেন্দ্রিক আচরণ ও তোষামোদী মানসিকতার বিরুদ্ধেই ছিল ব্যক্তিত্ববান স্পষ্টবাদী মুনীর চৌধুরীর ব্যঙ্গবিদ্রুপ। লাশরূপী ছাত্রদের কবরে ফেরত পাঠানোর নিমিত্তে চাদর জড়িয়ে মায়ের বেশে হাফিজের যে ছলনা-নিবেদন, তাতে আছে কালো কৌতুক।
নেতা ও হাফিজ চরিত্র-চিত্রণে নাট্যকার যে স্বভাবসুলভ কৌতুকপ্রিয়তার আশ্রয় নিয়েছেন, তাতে প্রশাসনের সাথে সংশ্নিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ভাঁড়ামো ও ব্যক্তিত্বহীন আচরণের দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হলেও সিরিয়াস বিষয়ের পাশে এই কৌতুকপ্রবণতার সমন্বয়সাধন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ভাবগম্ভীর পরিবেশে হঠাৎ হঠাৎ করেই হাসির ঝিলিক ওঠে, ফলে নাটকের শিল্পগুণ খানিকটা ক্ষুণ্ণ হবার সুযোগ ঘটে। কিন্তু পরমুহূর্তেই নাট্যকারের সংযম সেই বিপত্তির হাত থেকে রক্ষা করে।
মুর্দা ফকির 'কবর' নাটকের প্রতিক্রিয়াশীলতা, নির্মম স্বার্থপরতা ও অমানবিক হত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। দারিদ্র্যের পীড়নে স্বজনহারা বিপর্যস্ত ফকির নিঃস্ব ও পাগলপ্রায়। তবে আচরণে খানিকটা অসংলগ্নতা পরিলক্ষিত হলেও সত্য উদ্ঘাটন ও নাট্যকারের জীবনবোধের স্বরূপ প্রকাশে সে জাগ্রত বিবেক, মানবিকতার মূর্ত প্রতীক। সে গোরস্তান ছেড়ে কখনও কোথাও যায় না। আপন মনে কবরের সাথে কথা বলে।
বিষয়গুণ, চারিত্র্যবৈশিষ্ট্য ও আঙ্গিক নির্মাণ কুশলতার পরিপ্রেক্ষিতে মুনীর চৌধুরীর কবর নাট্যবোদ্ধাদের কাছে যেমন প্রশংসিত, তেমনি খানিকটা বিরূপ সমালোচনায় হয়েছে আক্রান্ত। আবুল ফজলের মতে, কবর কালজয়ী অমর নাটিকা। নীলিমা ইব্রাহিম ও আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রায় একই রকম মন্তব্য করে একে কালোত্তীর্ণ ও ক্ল্যাসিক সৃষ্টির মর্যাদা দিয়েছেন। জিয়া হায়দারের মতে, এ নাটকের মূল্য যুগান্তকারী এবং বাংলাদেশের নাট্যসাহিত্যে একমাত্র রাজনৈতিক নাট্যদলিলরূপে সম্মানিত।
উপযোগিতা ও গুণগত বিচারে 'কবর' মুনীর চৌধুরীর সামগ্রিক নাট্যকর্মের এবং বাংলাদেশের নাট্য-ইতিহাসে এক উজ্জ্বল মাইলফলক। কবর সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা যেটুকু হয়েছে তা সার্বিক মূল্যায়নে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিছু সমালোচক নাটকটির গুণাগুণ স্বীকার করেও ক্ষেত্রবিশেষে অধিক সাফল্য বা সচেতনতা প্রত্যাশা করেছেন। যেমন- আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে, নাটকটি অতিনাট্যিক দোষে দুষ্ট হলেও শিল্পচাতুর্যে দুর্লভ সৃষ্টি। যাঁর অনুরোধে 'কবর' নাটকটি রচিত হয়, সেই রণেশ দাশগুপ্ত পাণ্ডুলিপি পাঠ করে প্রথম মন্তব্য করেন, মুনীর চৌধুরীর মাঝে যদি 'সুস্পষ্ট রাজনৈতিক প্রত্যয় থাকত কিংবা কোনো প্রকার সংশয় বা দ্বন্দ্বের অবকাশ না থাকত, তাহলে নাটকটির সমাপ্তি অন্যভাবে হতো।' মমতাজউদদীন আহমদও এক আলোচনায় বলেন-
মুর্দা ফকিরের সঙ্গে মিছিল করে লাশগুলো এক এক করে চলে গেল, এখানেই নাটকের পরিসমাপ্তি হতে পারে। এর পরের অংশটুকু নাটকের সামগ্রিক শক্তি ও চৈতন্যকে দুর্বল করে, দর্শকের উত্তাপকে শীতল করে।
প্রকৃতপক্ষে তৎকালে রণেশ দাশগুপ্ত কিংবা সরদার ফজলুল করিমের মতো সার্বক্ষণিক বামপন্থি রাজনৈতিক কর্মী মুনীর চৌধুরী ছিলেন না। মধ্যবিত্ত জীবনের আপসকামী মনোবৃত্তি, আত্মকেন্দ্রিকতা ও পিছুটান বর্তমান নাট্যকারের মাঝেও সক্রিয় ছিল বলেই নাটকের পরিণতি এমনটি হয়েছে। একই কারণে তাঁর নাটকে ভাষা আন্দোলনে নিহত চাকরিজীবী কেরানি চরিত্র স্থান পেলেও শ্রমজীবী শ্রেণির কোনো প্রতিনিধি নেই। নাটকের সমাপ্তির দৃশ্য নিয়ে অভিযোগ তুললেও এই শ্রমজীবী শ্রেণির অনুপস্থিতি সম্পর্কে রণেশ দাশগুপ্ত কোনো প্রশ্ন তোলেননি।
'কবর' সম্পর্কে অপর যে অভিযোগ উত্থাপিত কিংবা সাদৃশ্য খোঁজা হয় তা হলো নাটকটি মার্কিন নাট্যকার আরউইন শ-এর 'বারি দ্য ডেড' নাটকের প্রভাবপুষ্ট। মুনীর চৌধুরীর ভাষ্য, প্রাপ্ত তথ্য এবং নাটক দুটির বিষয় ও সংলাপের তুলনামূলক বিচারে প্রতীয়মান হয় যে, দু-এক ক্ষেত্রে 'বারি দ্য ডেড'-এর সাথে 'কবর'-এর সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ও রচনাকুশলতার স্বাতত্র্যে তা সার্থক মৌলিক নাট্যসৃষ্টি। বরং 'বারি দ্য ডেড' অবলম্বনে উৎপল দত্ত রচনা করেন অমৃত অতীত নাটক।
১৯৪৩-৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় অবস্থানরত কয়েকজন ফ্যাসিবিরোধী প্রগতিশীল মার্কিন সৈনিকের সাথে মুনীর চৌধুরীর হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। সে-সময় তাঁর আমেরিকার সাহিত্য পাঠে অধিক সুযোগ ঘটে এবং তখনই তিনি 'বারি দ্য ডেড' নাটকটি পড়েন। নাটকটি মুনীর চৌধুরীকে অবচেতনভাবে খানিকটা প্রভাবান্বিত করলেও তাঁর মূল জীবনদৃষ্টি ও নান্দনিক চারিত্র্যলক্ষণ থেকে দূরে ঠেলে দেয়নি। বরং স্বাদেশিক বিষয়-উপকরণ, মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ও আঙ্গিকের স্বাতত্র্য 'কবর' নাটকটিকে করেছে বিশিষ্ট।
'বারি দ্য ডেড' নাটক বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। এখানেও নিহত সৈন্যরা কবরে যেতে চায় না, তাদের আত্মীয়স্বজন করবে ফিরে যাবার জন্য অনুরোধ করে। এটিই দুই নাটকের মধ্যে বড় সাদৃশ্য।
সংলাপ গঠনেও কিছু মিল দৃষ্ট হয়, যা তুলনামূলক দৃষ্টান্ত হিসেবে উদ্ধৃত হলো :
মূর্তি : কবরে যাব না। এখানে থাকব। (কবর)
First Corpse. Don’t bury us. We don’t want to be buried. (Bury the dead)
হাফিজ : তোমরা মরে গেছ। অন্যখানে তোমাদের জন্য নতুন জায়গা ঠিক হয়ে গেছে। সেখানেই এখন তোমাদের যাওয়া উচিত। (কবর)
First General :    Your Country demands of you that you lie down and allow yourselves to be buried. (Bury the dead)
ফকির : এ মুর্দা কবরের থাকবে না। বিশ-পঁচিশ-ত্রিশ হাত যত নিচেই মাটি চাপা দাও না কেন- এ মুর্দা থাকবে না। কবর ভেঙে বেরিয়ে চলে আসবে। (কবর)
Reporter : You can’t put them down. Put one down and ten will spring up like weeds in an old garden. (Bury the dead)
'কবর' নাটকের উৎস ভাষা আন্দোলন এবং নির্মিত ভাষা-সংলাপ ঐশ্বর্যমণ্ডিত। নাট্যকারের মুক্ত মনন, উদারচিত্ত ও দক্ষ প্রয়োগকৌশলে দেশি-বিদেশি শব্দমালার স্বচ্ছন্দ সহাবস্থান ঘটেছে; বুদ্ধির সাথে কৌতুক, সত্যের সাথে রহস্য, নিষ্ঠুরতার সাথে প্রাণরসের এক অদ্ভুত সাযুজ্য রক্ষিত হয়েছে।
'রিসোর্সফুল অফিসার। আপনার নামটা মনে রাখতে হবে! সকালবেলাই একবার পার্টি হাউসে আসবেন, রিকমেন্ডেশন লিখে দেব।'
মুনীর চৌধুরী বলেন :জেলখানাতে নাটক মঞ্চস্থ করার অসুবিধা অবশ্যই ছিল। এ অসুবিধাটুকু সামনে ছিল বলেই তো 'কবর' নাটকটির আঙ্গিকে নতুনত্ব আনতে হয়েছে। আট-দশটি হারিকেন দিয়ে মঞ্চ সাজাতে হবে, সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই 'কবর' নাটকটিতে আলো-আঁধার রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। আর সেজন্যই জেল থেকে ফিরে এসে এ দেশে মঞ্চের অভাবে কথা বলিনি।
ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এ নাটক অমর একুশের মতোই সজীব এবং 'প্রত্যয়বোধে ঋদ্ধ' এক নিপুণ শিল্পকর্ম। আজ মুনীর চৌধুরীর নাটক 'কবর' আছে। নেই তাঁর নিজের কবর।

বিষয় : মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন

মন্তব্য করুন