
নাসির উদ্দীন ইউসুফ
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাস নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণের ইচ্ছা ছিল। যখন এর চিত্রনাট্য করতে বসি তখন মনে হয়েছিল, এটি দিয়ে সিনেমা হবে না। কারণ অপূর্ণতা আছে। পরে চিন্তা করলাম, ১৯৭১ সালে নিজের অভিজ্ঞতা আছে। গণহত্যা, যুদ্ধ, নিজেও লড়াই করেছি- এসব অভিজ্ঞতা এবং সৈয়দ হকের 'বিলকিস' চরিত্রটি নিয়ে কিছু করা যেতে পারে। এই দুটোকে মিলিয়ে যদি একটি শৈল্পিক অনুবাদ করি, কেমন দাঁড়ায়। মুক্তিযুদ্ধ থেকে তরুণ প্রজন্ম কিন্তু ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না।
গল্প, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র মানুষকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলে। ইতিহাস কিন্তু মানুষকে দেশপ্রেমিক করে না। সিনেমায় আমরা এমন কিছু তুলে ধরতে চেয়েছি যা সত্য ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফিকশন হবে এ রকম কিছু বানাতে চেয়েছি, যা নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এটি তাদের বিজয়ের স্বাদ দেবে, বীরত্বের অহংকার দেবে, গৌরব দেবে- সেই ভাবনা থেকে 'গেরিলা'কে একটি ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছি। এটি নির্মাণ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে।

আমাদের পুরোনো কোনো রাস্তা নেই, বিল্ডিং নেই; যাতে '৭১ সাল দেখাতে পারি। যে জন্য অনেক খুঁজে খুঁজে পানাম নগরীকে পুরান ঢাকা হিসেবে দেখিয়েছি। নরসিংদী, পার্বতীপুর, রংপুরের কাউনিয়ায় দৃশ্যধারণ করেছি। সেনাবাহিনীর ৬০০ সদস্য, পুলিশ বাহিনীর ১ হাজার ২০০ সদস্য শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২২ হাজার রাউন্ড গুলি ব্যবহার করেছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। তাদের সত্যিকার অস্ত্র দিয়ে লড়াইয়ের দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয়েছে। একটি ট্রেনে রং করা হয়েছিল। মোট সাড়ে চার হাজার শিল্পী অভিনয় করেছেন সিনেমায়। পুরো সিনেমা নামাতে দুই বছর লেগেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সিনেমটি পাইরেসি হয়েছে। কিন্তু এতে আমার আফসোস নেই। সিনেমাটি তরুণ প্রজন্ম দারুণভাবে নিয়েছে।
মন্তব্য করুন