
'ভুবনমাঝি' নির্মাণ করেছি ২০১৬ সালে। একজন সাধারণ সংগ্রামী মানুষের বিদ্রোহী হয়ে ওঠার গল্প নিয়েই ছবিটি। যার শুরু ১৯৭০ সালে এবং শেষ ২০১৩-তে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে নহির [পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়] গ্রাম থেকে কুষ্টিয়া শহরে ডিগ্রি পড়তে আসে। দেশজুড়ে চলমান নির্বাচন আর স্বাধীনতার আন্দোলন তাকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করেনি বরং চাচাতো বোনের বান্ধবী ফরিদা বেগম [অপর্ণা ঘোষ] আর থিয়েটার ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের জন্মের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয় সে। ৪২ বছরের বিস্তৃত ইতিহাস ও প্রেম, বিদ্রোহ ও সংস্কৃতি- এসব নিয়ে কাহিনি এগিয়ে গেছে।

নহির বাউলের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেছি। বাউল পরিবারের ওই সদস্য কোনো প্রাণ হত্যা করেন না, কিন্তু ঘটনাক্রমে তিনিও অংশ নেন দেশমাতৃকার এই আন্দোলনে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হন। মানুষটি তাঁর দর্শনগত জায়গা থেকে কখনোই প্রাণ হত্যা করেন না বা কখনোই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এ রকম একজন মানুষ মানসিক জগৎ ও পারিপার্শ্বিক জগতের কী কী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হতে পারেন, তা দেখানোর চেষ্টা করেছি সিনেমায়। তাঁর ভেতর একদিকে নিরস্ত্র বাউল দর্শনের লড়াই; অপরদিকে সশস্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের লড়াই চলছিল। মোটা দাগে বলতে পারি, এ দ্বৈত লড়াইয়ের গল্পই ভুবনমাঝির গল্প। বর্তমান সময়ের কিছু প্রেক্ষাপটও ছিল সিনেমায়। পিরিয়ডিক সিনেমা নির্মাণ একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এর কাজ শেষ করেছি। একটি মৌলিক গল্পের এ সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেমকে তুলে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল।
মন্তব্য করুন