আজ বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার। এই মেলা এবং আবাসন খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) এবং মেলার আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল রানা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল।

সমকাল: নির্মাণসামগ্রীর উচ্চ মূল্যের সঙ্গে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে ড্যাপ জটিলতা। এমন প্রেক্ষাপটে এবারের রিহ্যাব মেলায় ফ্ল্যাট বিক্রিতে কেমন সাড়া মিলবে বলে আশা করছেন?

সোহেল রানা: ভবনের নির্মাণসামগ্রীর আকাশচুম্বী দাম অনেক দিন ধরেই বহন করে যাচ্ছে আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা। কিন্তু ড্যাপ-সংক্রান্ত রাজউকের নতুন নীতিমালার কারণে ভবিষ্যতে নতুন ভবনগুলোর আয়তন সংকুচিত হয়ে আসবে। ফলে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাবে। আমরা সবাই জানি, নতুন ড্যাপ-সংক্রান্ত বিধিবিধান এবং করোনার প্রভাবের কারণে গত কয়েক বছর আমাদের আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা উল্লেখযোগ্য নতুন প্রকল্প হাতে নেননি। তাই এবার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশ কম। আমরা মনে করছি, এবার বিক্রি সহজতর হবে।

সমকাল: আপনারা বলেছেন, এবার বিশেষ দামে ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ পাবেন ক্রেতারা। বিশেষ দাম বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে?

সোহেল রানা: এবারের মেলায় যেসব ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে, তার অধিকাংশই পুরোনো বিধিমালা অনুসরণ করে নির্মিত। তখন নির্মাণসামগ্রীর মূল্য কিছুটা সহনশীল অবস্থায় ছিল। তাই আমরা ধারণা করছি, এবার যে দামে ফ্ল্যাট বিক্রয় করা সম্ভব হবে, অদূর ভবিষ্যতে তা আর সম্ভব হবে না। তাই এই সুযোগকেই আমরা একটি বিশেষ দাম বলছি। আমি মনে করি, এটা হবে তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। কারণ নতুন ড্যাপের কারণে ক্রমেই ফ্ল্যাটের দাম বাড়তে থাকবে।

সমকাল: গত বছরের রিহ্যাব ফেয়ারে মোট ৩৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি হয়েছে। এবারের মেলায় এই অঙ্কটা কেমন হতে পারে?

সোহেল রানা: গত বছরের আবাসন মেলাটি ছিল করোনা প্রাদুর্ভাবের পরপরই। তখন অর্থনীতিতেও কিছুটা মন্দাভাব ছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতির বেশ উন্নতি ঘটেছে। মানুষের হাতে টাকার প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করি। তা ছাড়া এ বছরের দামে ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ ভবিষ্যতে সীমিত হয়ে আসবে। যাদের ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন রয়েছে, তারা এবারের সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইবে না। সব মিলিয়ে আশা করছি, গতবারের চেয়ে এবার ফ্ল্যাট বিক্রি ও বুকিংয়ের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।

সমকাল: এ মেলায় ফ্ল্যাট বা প্লট কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কী কী সুবিধা পাবেন ক্রেতারা?

সোহেল রানা: মেলায় সাধারণত ফ্ল্যাট বা প্লট কেনা ও বুকিং দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও সেই সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন কোম্পানি নানাভাবে ছাড় দিয়ে থাকে। কিন্তু মেলার বাইরে এ সুযোগটা থাকে না। তা ছাড়া মেলায় কোম্পানি ভেদে ফ্ল্যাটের দাম যাচাই করা যায়।

সমকাল: এবারের মেলা কতটকু সফল হবে বলে মনে করেন?

সোহেল রানা: রিহ্যাব ২০০১ সাল থেকে সফলতার সঙ্গে আবাসন মেলার আয়োজন করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ২০টি মেলার আয়োজন করেছে সংগঠনটি। এ আয়োজনের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে গৃহায়ন শিল্পের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। আবাসান মেলা কোম্পানি ও ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে বেশ ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করার সুযোগ রিহ্যাব ফেয়ার ছাড়া সম্ভব নয়। কর্মব্যস্ততায় আমাদের সবার হাতেই এখন সময় কম। তাই ক্রেতারা কম সময়ে এক ছাদের নিচে থেকে সব সেবা পাবেন। শুধু ফ্ল্যাট বা প্লট নয়, গৃহঋণ এবং বাড়ি তৈরির নানা উপকরণও যাচাই করা যাবে মেলায়। এ মেলা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ফ্ল্যাট বা প্লট খুঁজে নিতে ক্রেতাদের সাহায্য করবে।

সমকাল: মেলায় ফ্ল্যাট বা প্লট বিক্রিতে যেসব ছাড় বা ঘোষণা দেওয়া হয়, পরবর্তী সময়ে সেসব সুবিধা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

সোহেল রানা: এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের উদ্দেশে আমাদের পরামর্শ- কেউ ফ্ল্যাট বুকিং দিলে ছাড় দেওয়ার বিষয়গুলোর লিখিত প্রমাণ রাখা ভালো। একই সঙ্গে বিক্রেতাদেরও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর হতে হবে।

সমকাল: দেশের অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান কেমন?

সোহেল রানা: রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থানে অবদান রাখার পাশাপাশি রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ ২৭০-এর বেশি সংযোগ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে নির্মাণ খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। এ খাতের আয় ফের বিনিয়োগ হচ্ছে অন্য উৎপাদনশীল খাতে। দেশের কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছে আবাসন শিল্পের হাত ধরে, যা প্রত্যক্ষভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।