- ফিচার
- প্রতিবন্ধকতা জয়ের গল্প
প্রতিবন্ধকতা জয়ের গল্প

'প্রতিবন্ধী ব্যক্তি' শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতার চিত্র। সমাজ তাঁকে অনেকটা করুণা বা অবহেলার চোখে দেখেই অভ্যস্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সমাজের জন্য বোঝা মনে করা হয়। তবে শারীরিক সীমাবদ্ধতার গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে সমাজে প্রমাণ করার অনেক উদাহরণও আছে। তেমনই একজন সফল ব্যক্তিত্ব আইসিটি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট, অ্যাক্সেসিবিলিটি ভাস্কর ভট্টাচার্য। সম্প্রতি 'আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস-২০২২' উপলক্ষে এক কর্মশালার আয়োজন করে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল)। সেখানে ভাস্কর ভট্টাচার্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন।
ইউবিএলের প্রধান কার্যালয়ে ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার, মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক সাকসী হান্ডাসহ অর্ধশতাধিক কর্মী। অংশগ্রহণকারীরা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি খোলামেলাভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আলোচক ভাস্কর ভট্টাচার্য জানান, পৃথিবীতে ১০০ কোটির বেশি মানুষ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেঁচে আছেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। তাঁদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশাই প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সমাজের মূল ধারায় যুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের সর্বস্তরে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অন্ধত্বের কারণে বই পড়া সম্ভব হয় না, তবে বইগুলো যদি 'টকিং বুকে' রূপান্তর করা যায়, তাহলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতার সেই সমস্যাটি আর থাকছে না।
জীবনযাপনের অন্যান্য প্রয়োজনেও প্রযুক্তির এই প্রয়োগটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতিবন্ধিতাকে অক্ষমতা হিসেবে দেখা এক ধরনের সামাজিক সমস্যা। সমাজ প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ তৈরিতে ব্যর্থ হয়ে তাঁদের বাঁকা চোখে দেখে ও তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। প্রতিবন্ধীদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও সামগ্রিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে হলে তাঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি। এ জন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে প্রতিবন্ধীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রতিবন্ধীরা চাকরির বাজারে যেসব কারণে বৈষম্যের শিকার হন, সেসব প্রশমন করা ও তাঁদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ।
ভাস্কর ভট্টাচার্য নিজের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে জানান, তাঁর গ্রামে হাসপাতাল তো দূরে থাক, ডাক্তার পর্যন্ত ছিল না। দেখতে না পাওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ভাস্করকে মুখোমুখি হতে হয়েছে শত প্রতিবন্ধকতার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সেখানে ব্রেইলে লেখা বই ছিল দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি। এখন সবাই তাঁকে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে চেনে; দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে নয়।
আয়োজিত সেমিনারে ইউনিলিভারের কর্মীরা প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে বিভিন্ন কুইজ ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। প্রতিবন্ধিতার শিকার তাঁদের সহকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কীভাবে ভাবের আদান-প্রদান করতে হবে, সে বিষয়েও সবাইকে সচেতন করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে এটুআইর কার্যক্রম নিয়ে ভিডিও প্রেজেন্টেশনও দেখানো হয় অনুষ্ঠানে।
মন্তব্য করুন