পোশাকের ব্র্যান্ড বিশ্বরঙ ২৮ বছরে পদার্পণ করেছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এ অবস্থানে এসেছে ব্র্যান্ডটি। ১৯৯৪ সালে ১০০ স্কয়ার ফুটের একটি ছোট দোকান নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে ব্র্যান্ডটির যাত্রা শুরু হয়। রাতারাতি সাফল্য আসেনি। শুরুর দিকে বিশ্বরঙে বিক্রি হতো সিরামিক সামগ্রী। বিশ্বরঙ থেকে করা হতো বিয়েবাড়ির স্টেজ ও আলপনার কাজ। ক্রমেই বাড়ে এর চাহিদা। সিরামিকসের আর্ট পিসগুলোর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান পণ্যের তালিকায় ১৯৯৫ সালে শাড়ি স্থান পায়। ঈদের সময় অত কাপড় কেনা, তাতে কাজ করার মতো প্রয়োজনীয় পুঁজি থাকত না।

তখন পরিচিত কাছের মানুষই জুগিয়েছেন পুঁজি। তাই দিয়ে ঈদের সময় বিক্রির জন্য কাপড় তোলা হতো। ক্রমে ক্রমে পণ্যের তালিকায় প্রাথমিক সাফল্য আসে পাঞ্জাবিতে। সরাসরি শত শত মানুষ জড়িয়ে যান বিশ্বরঙের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। জড়িত হয়েছে শত শত তাঁতি পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। প্রতিষ্ঠানটির ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, 'প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে শিল্পসত্তায় পরিপূর্ণ হতে চেয়েছি বারংবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে প্রথম বিভাগে এমএফএ সম্পন্ন করে শিল্পসত্তা দেশ ও জাতির কল্যাণে ব্যবহারের প্রচেষ্টায় আত্মমগ্ন করি অবিরাম। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই অস্থির সময়েও নিজস্ব শিকড়ের সন্ধান করতে গিয়েই ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে দেশীয় তাঁতকে প্রাধান্য দিয়েছি সব সময়। এ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিশ্বব্যাপী মূল্যায়নে বিশ্বরঙের পথচলা সুদীর্ঘ ২৮ বছরের।'

তিনি বলেন, 'এ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শখের হাঁড়ি, মুখোশ, নকশিপাখা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলার পটচিত্র, বাংলা পঞ্জিকা, ঐতিহ্যে বাংলা সিনেমা, পানামনগর, কান্তজি মন্দিরের টেরাকোটা, রিকশা মোটিফসহ আলপনার মতো মহামূল্যবান মোটিফ পোশাকের অলংকরণ হিসেবে ব্যবহার করে দেশীয় ফ্যাশনকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের মিশেলে নিয়ে যেতে চেয়েছি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমৃদ্ধির শিখরে।'

বিপ্লব সাহা বলেন, 'আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশীয় ফ্যাশনকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের মিশেলে প্রদর্শন করেছি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়া, কানাডার মতো ফ্যাশন সচেতনদের দেশে। আমরা উপহার দিয়েছি পোশাকে অতি উজ্জ্বল রঙের অনুভব; যা বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে আরও রাঙিয়েছে অনুকরণীয়ভাবে। টাঙ্গাইলের মলিন তাঁতের শাড়িকে আধুনিক ফ্যাশনের অনুষঙ্গ করতে নিরলস প্রচেষ্টার ফলাফল বর্তমানে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যমান। বিভিন্ন দিবসে পোশাকের বর্ণিলতা আমাদের মাধ্যমেই শুরু হয়, যা আজ অভিন্ন এক রীতিতে সামগ্রিকভাবে প্রচলিত।'

দেশীয় বুটিক শিল্পকে রক্ষা করতে কাজ করে বিশ্বরঙ। বিভিন্ন দিবসে ব্র্যান্ডটি থিমভিত্তিক পোশাক নিয়ে আসে। মা দিবসে শিশুদের মেধা বিকাশের লক্ষ্যে 'আমার রঙে আমার মা' শীর্ষক এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শিশুদের আঁকা প্রাণবন্ত চিত্রকলাকে ফ্যাশনের উপাত্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফ্যাশনের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচার, প্রচারণার প্রচলন করে পোশাকের ব্র্যান্ড বিশ্বরঙ।