মানব শরীরে ট্যাটু বা উল্ক্কির প্রচলন প্রায় হাজার বছর আগে থেকে। এটি বেশ প্রাচীন একটি শিল্প। সামাজিক পদমর্যাদার চিহ্ন, ধর্মীয় কারণ, সৌন্দর্যের প্রকাশ- এসব নানা কারণে যুগে যুগে মানুষ শরীরে ট্যাটু করিয়েছে। এখন অবশ্য ট্যাটু করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। লিখেছেন ফাতিমা ইয়াসমিন

অধিকাংশ ফুটবল খেলোয়াড়, মডেল, অভিনেতা-অভিনেত্রীর দিকে তাকালে দেখা যায় তাঁদের হাতে, বাহুতে কিংবা শরীরের অন্যান্য অংশে ট্যাটু করা। অনেক আগে থেকে কোনো একটি বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ট্যাটু করা হতো। কখনও সামাজিক পদমর্যাদার চিহ্ন, কখনও ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে আঁকা হতো উল্ক্কি বা ট্যাটু। এখন এটি যেন ফ্যাশন হয়ে উঠেছে। ট্যাটু ফ্যাশনে তরুণরা এগিয়ে। বাংলাদেশে ট্যাটু করার প্রচলন খুব বেশ পুরোনো নয়। ধানমন্ডির ট্যাটু স্টুডিওর কর্ণধার ও ট্যাটু আর্টিস্ট জয় হায়দার ট্যাটুশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন ২০০৮ সাল থেকে। তিনি জানান, শুরুর দিকে বাংলাদেশে ট্যাটুর জনপ্রিয়তা তেমন না থাকলেও বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।

মূলত ফ্যাশন হিসেবেই এ দেশের তরুণ-তরুণীরা ট্যাটু করে থাকে। সেলিব্রেটিদের ট্যাটু করার দিকে বিশেষ ঝোঁক রয়েছে। তাতে অনুপ্রাণিত হয়েই তরুণ সমাজ ট্যাটুর দিকে ঝুঁকে বেশি। আগে হাতে, ঘাড়ে ট্যাটু বেশি করাতো। এখন শরীরের সব জায়গায়ই করাচ্ছে। ট্যাটুর ডিজাইনের ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই প্রিয় মানুষের নাম লেখান। বিশেষ করে মা-বাবা, সন্তান, ভালোবাসার মানুষের নাম ডিজাইন করছেন। অনেকে পছন্দের সেলিব্রেটিদের ট্যাটুর ডিজাইনটা করতে চান।

ট্যাটু দুই ধরনের- স্থায়ী ও অস্থায়ী। এখন স্থায়ী ট্যাটু করানো হয়। স্থায়ী ট্যাটু করতে সুচ ও কালি লাগে। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে কালিসহ সুচ চামড়ার ভেতরে ঢোকানো হয়। ব্যথানাশক ক্রিম লাগানো হয়, যাঁরা ব্যথাটা নিতে চান না। স্থায়ী ট্যাটু করানো হলেও পরে সেটি তোলা যায়। ইদানীং ট্যাটু খুব দ্রুত উঠিয়ে নতুন ট্যাটু করানোর দিকে ঝোঁক বেশি দেখা যাচ্ছে। ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে ট্যাটুর দামের বিষয়। স্কয়ার ইঞ্চি হিসেবে ট্যাটুর দরদাম ঠিক হয়। ২ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। ট্যাটু করানোর পর যত্নের বিষয় তেমন নেই। এমনিতেই ট্যাটুর রং ভালো থাকে।

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের সামনে, বেইলি রোড, পান্থপথসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্যাটু করানো হয়। বনানী, গুলশানসহ অভিজাতপাড়ার পার্লারগুলোতে ট্যাটু একটি সাধারণ বিষয়। জয় হালদার জানান, যেখানেই ট্যাটু করানো হোক, আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত, তিনি প্রশিক্ষিত শিল্পী কিনা। কালির মান ভালো কিনা। নতুন সুচ ব্যবহার করছেন কিনা। যিনি ট্যাটু করাবেন তাঁর অ্যালার্জিজনিত কোনো সমস্যা আছে কিনা। '১৮ বছরের কম বয়সীদের ট্যাটু করাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে তেমন উৎসাহ দিই না' বলেও জানান জয় হালদার।
ক্ষতিকর দিক

শরীরে ট্যাটু আঁকার ক্ষতিকর দিক রয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। তিনি জানান, ট্যাটু আঁকতে রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে কেউ যদি শরীরে ট্যাটু রাখে তাহলে অসুখ হতে পারে। এমনকি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। ত্বকে চুলকানি, অ্যালার্জি, র‌্যাশ হয়ে তা থেকে সংক্রমণও হতে পারে। যেখানে উল্ক্কি বা ট্যাটু আঁকা হবে সেখানে হতে পারে গ্রানুলমা আর কেলয়েড। হতে পারে রক্তবাহিত রোগ। পরিচ্ছন্নতা মানা না হলে ব্যবহার করা পুরোনো সুঁই ও অন্যান্য উপকরণ থেকে এইডস, হেপাটাইটিস, টিটেনাস, টিউবারকুলসিসের মতো সংক্রামক রোগ হতে পারে। 

মডেল :মায়া সেরেনোভা; ছবি :ফাহিম