কবি কামিনী রায় তাঁর সুখ কবিতায় বলেছিলেন, 'নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?-/ এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?' আসলেই কি পৃথিবীতে সুখ ও মানসিক শান্তি নেই? অবশ্যই আছে। পরের কল্যাণে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার মধ্যেই যে সুখ নিহিত আছে, সে বিষয়টি কবি তুলে ধরেছেন। জন উইলসন সুখের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন, 'একেকজন মানুষের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেক রকম।' আবার বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, 'সুখের উপায় ধর্ম, আর মনুষ্যত্বেই সুখ।'

সুতরাং প্রত্যেকের সুখ ও শান্তি লাভের বিষয়টি একেক রকম। তবে মানসিক স্বস্তি ও শান্তি পেতে হলে কিছু বিষয় মগজে গাঁথতে হবে। আচরণে আনতে হবে পরিবর্তন। অনেক টাকা থাকলেই আপনি সুখে কিংবা শান্তিতে থাকবেন- বিষয়টি মোটেও এ রকম নয়। সুখ-স্বস্তি ভিন্ন এক বিষয়। তবে হ্যাঁ, স্বাচ্ছন্দ্যে চলার জন্য টাকা প্রয়োজন।

স্বস্তির সংজ্ঞা আপনার কাছেই :মানসিক শান্তি বা স্বস্তির বিষয়টি কিন্তু পুরোটাই আপেক্ষিক। ব্যক্তি ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এটি। কোন পরিস্থিতে কে কীসে স্বস্তি পায়- সেটি অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব বিষয়। কারও পাহাড় ভালো লাগে, কারও সমুদ্র; কেউ একা সময় কাটাতে পছন্দ করেন; কেউবা চান আড্ডায় হারাতে। আপনি কী চান- আগে সেটা খুঁজে বের করুন।

প্রত্যাশা :প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রে মানসিক শান্তি নষ্ট করে, তাই এ ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি। তবে প্রত্যাশা করবেন না এমনটি বলছি না। অবশ্যই প্রত্যাশা করবেন, তবে নিজের সামর্থ্য এবং অবস্থান বুঝে প্রত্যাশার প্যারামিটার ঠিক করা উচিত। ধরা যাক, আপনি এমন কিছু কিনতে চাচ্ছেন, যেটা কেনার সামর্থ্য আপনার নেই। এ ক্ষেত্রে ভেঙে পড়লেন বা হতাশ হলেন; বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয়। যেটাতে আপনার এই মুহূর্তে সামর্থ্য নেই তা অর্জনের চেষ্টা করাটা বোকামি, আর বোকামি হলো, সেটা না পেয়ে হতাশ হওয়া। তাহলে করণীয় কী? আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী অর্জনের চেষ্টা করুন। বড় অর্জনের জন্য নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলুন। যতদিন নিজেকে ওই অবস্থানে নিতে না পারছেন, ততদিন হতাশ হওয়া চলবে না।

মেনে নেওয়ার অভ্যাস :পরিস্থিতি যা-ই হোক, সেটিকে আগে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। কিছু ঘটলে আগে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিন। এর পর পুরো সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজুন। সব সমস্যারই কিছু না কিছু সমাধান আছে। ধরুন, আপনি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। এখন ভেঙে পড়ে তো লাভ নেই। আসল বিষয় হলো, আপনার ক্যারিয়ার। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়ে ভালো ফল করলে বা কর্মজীবনে নিজেকে ভালো অবস্থানে নিতে পারলে সেটাই কিন্তু আসল স্বস্তির বিষয়।

কাজে মনোযোগী হোন :নিজের কাজে মনোযোগী হলে সাফল্য ধরা দেবে। অস্বস্তিকর মুহূর্তের মুখোমুখিও হতে হবে না। এ ছাড়া কাজে মনোযোগী থাকলে স্বস্তি-অস্বস্তির বিষয়গুলোও কম কাবু করতে পারে।

নিজেকে ভালোবাসুন :মানসিক স্বস্তি পেতে নিজেকে ভালোবাসার বিকল্প নেই। সন্ধ্যায় নিজের জন্য খুব যত্ন নিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে আয়েশ করে তাতে চুমুক দিন। দেখবেন আলাদা ভালো লাগা কাজ করবে।

তুলনা নয় :অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন না। এতে অনেক ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস কমে যায়। মানসিক শান্তি নষ্ট করে। নিজে যেমন আছেন, যা আছে- তা নিয়েই থাকতে শিখুন।

বর্তমানে থাকুন :ভবিষ্যতে কী হবে, সেটি ভেবে উদ্বেগ না বাড়িয়ে বর্তমান নিয়ে ভাবুন। অতীতের খারাপ সময়গুলোর স্মৃতিচারণ করেও লাভ নেই। অতীত আপনার আওতার বাইরে। বর্তমানের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে আপনার ভবিষ্যৎ। সুতরাং বর্তমানেই ধ্যান দিন।

খাবার :খাবার তালিকাও অনেক সময় আপনার স্বস্তি-অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খান। নিয়মিত ফল খান।

মেডিটেশন ও ব্যায়াম :মানসিক স্বস্তি আনতে নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শরীর চর্চা বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই এগুলোও করতে পারেন।
অভ্যাস :মানসিক স্বস্তি পেতে হলে কোনো খারাপ অভ্যাস রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ স্বস্তিকর দিন উপহার পেতে অনেক ভূমিকা রাখে। া
সূত্র :লাইফহ্যাক ডট ওআরজি, মায়োক্লিনিক ডট ওআরজি
মডেল :জান্নাত; ছবি :হিমেল