
ব্লেজারকে একসময় অফিস, বোর্ড মিটিং, করপোরেট কিংবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পোশাক হিসেবে মনে করা হতো। এখন ব্লেজার ক্যাজুয়ালিও পরা হয়। তরুণদের মধ্যে এ পোশাক পরার প্রবণতা বাড়ছে। এটি স্টাইলিশ লুক এনে দেয়। আমাদের দেশ ব্লেজারকে শীতের পোশাক হিসেবেই বেছে নিয়েছে। কর্মক্ষেত্র ছাড়াও বন্ধুদের আড্ডা কিংবা মধ্যাহ্নভোজেও ব্লেজার হতে পারে পছন্দের তালিকায় প্রথম। এনে দিতে পারে স্টাইলিশ, ভিন্ন লুক। সে জন্য প্রয়োজন ব্লেজারের ফিটিং, কাটিং।
ফ্যাশন হাউস আর্ট এবারের শীতের আয়োজনে ক্যাজুয়াল, রেগুলার, ওয়েস্টার্ন ও ফিউশন- চার ধরনের ডিজাইনের ব্লেজার নিয়ে এসেছে। ব্লেজারগুলো স্লিম ফিট এবং রেগুলার ফিট প্যাটার্নে তৈরি হয়েছে। স্টাইলিশ এবং ফ্যাশনেবল ব্লেজার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ফেব্রিকের দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন আর্টের ডিজাইনার হোসাইন ইমন। তিনি বলেন, 'স্টাইলিশের জন্য প্রথমত ফেব্রিক, দ্বিতীয়ত ফিটিংসের দিকে খেয়াল রাখুন। ব্লেজারের ক্ষেত্রে ফিটিংস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো মানের ফেব্রিক হলেও যদি ফিটিংস মানানসই না হয় তাহলে স্টাইলিশ লুক দেখাবে না। আবার ফেব্রিক ভালো নয়, ফিটিংস ভালো হয়েছে সেটাও দেখতে ভালো লাগবে না। এককথায় ব্লেজারের ক্ষেত্রে ফিটিংস এবং ফেব্রিক সমগুরুত্বপূর্ণ।'
সানমুনের কাটিং মাস্টার রাজু বলেন, 'তরুণরা এখন টাইট ফিটিং ব্লেজারের দিকে ঝুঁকেছে। এতে তরুণদের স্টাইলেও এসেছে পরিবর্তন। তবে কেউ যদি একই ব্লেজার দু-তিন বছর পরতে চান তাহলে বেশি ফিটিংস করে তৈরি না করাই ভালো। হালকা ঢিলেঢালা ভাব রেখে তৈরি করলে একই ব্লেজার কয়েক বছর পরতে পারবেন।'
ব্লেজার এবং স্যুটের তফাত
স্যুট এবং ব্লেজারের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। স্যুটের সঙ্গে একই রংয়ের প্যান্ট না পরলে সেটাকে ব্লেজার ধরা হয়। অন্যদিকে একই রংয়ের ব্লেজার এবং প্যান্ট হলে সেটাকে বলা হয় 'টু পিস কমপ্লিট'। ব্লেজার, প্যান্ট ও কটি- একই রংয়ের হলে তাকে বলা হয় 'থ্রিপিস কমপ্লিট', যাকে সাধারণত সবাই স্যুট বা কোট বলে থাকেন।
আর্টের ডিজাইনারের ভাষ্যমতে, প্যান্টসহ পরলে স্যুট এবং প্যান্ট ছাড়া পরলে ব্লেজার। অর্থাৎ অন্যান্য বটম পোশাকের সঙ্গে পরলেই ব্লেজার। তার সঙ্গে একই সুর মিলিয়েছেন সানমুনের প্রধান কার্যালয়ের কাটিং মাস্টার রাজু।
তারুণ্যের প্রাধান্য:বর্তমান সময়ের ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ব্লেজারের চাহিদা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে স্রদ্বাইপ, চেক, সলিড রয়েছে। সানমুনের কাটিং মাস্টার রাজু বলেন, 'তরুণদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি চেকের ব্লেজার দেখা যাচ্ছে। যদিও একেকজনের চাহিদা, রুচিতে ভিন্নতা রয়েছে। কেউ হয়তো চেকের ভেতরে স্টাইলিশ ভাব আনতে কাঁধের বা বুকের দিকে আংটার মতো রাখছেন, যেখানে ফুল বা রংবেরঙের কাপড় টুকরো রেখে স্টাইল করছেন।' এ কথার সঙ্গে আর্টের হোসাইন ইমন যোগ করেন, 'ভিন্নতা আনার জন্য তরুণরা পকেটে এমব্রয়ডারি, কারচুপিসহ বিভিন্ন চাহিদার মাধ্যমে ব্লেজার তৈরি এবং ক্রয় করছেন।'
রং এবং ফেব্রিক যেমন:ব্লেজারের জন্য বেশি ভারী নয় এমন সুতি কাপড় বাছাই করা ভালো। ব্যতিক্রম কটন বা ভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস ফেব্রিক এড়িয়ে চলাই উচিত। ব্লেজার রঙের ক্ষেত্রে ক্রেতার পছন্দই আসল। তবে সবসময় ডার্ক রংটা বেছে নেওয়ার পরামর্শ আর্টের ডিজাইনারের। তিনি বলেন, 'গরমের সময় লাইট এবং শীতের সময় ডার্ক (নেভি ব্লু, কালো, অ্যাশ, পেস্ট ইত্যাদি) বেছে নিলে ভালো দেখাবে। তবে এখন মেরুন এবং রয়েল ব্লু ট্রেন্ডে আছে।'
সুতি, উল, জর্জেট, স্টিচ ফেব্রিক, রেডিমেড ব্লেজারসহ ফ্যাশনেবল বিভিন্ন ব্লেজার দেশীয় ফ্যাশন হাউসের পাশাপাশি মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাশনেবল ক্যাজুয়াল ব্লেজারের মধ্যে জ্যাকেট টাইপ ব্লেজার, ডেনিম ব্লেজার, ভেলভেট ব্লেজার, লেদার ব্লেজার ও মখমল কাপড়ের ব্লেজার পাওয়া যাবে।
বোতামে ভিন্নতর স্টাইল:তিনের অধিক বোতামের ব্লেজারের বেশ চল ছিল। তবে এখন দুই বা এক বোতামের ব্লেজারের দিকেই তরুণ-তরুণীরা ঝুঁকছেন। সানমুনের রাজু বলেন, 'ফ্যাশন হিসেবে তরুণরা এখন দুই বা এক বোতামের ব্লেজার তৈরি করছেন। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে এক বোতামের ব্লেজার। অনেকে আবার পেছনের নিচে দুটি রাউন্ড শেপ দিচ্ছেন।'
বাজারে এক বোতামের পাশাপাশি কয়েক বোতামের ব্লেজারের দেখা মিলবে। পাবেন পেছনে দু'একটি বোতাম ব্যবহার করা ব্লেজারও। ডিজাইনারদের পরামর্শ, মেয়েদের এক বোতামের ব্লেজারে বেশি মানাবে। তবে শরীরের গঠন ও মুখের গড়ন অনুযায়ী ব্লেজার পরা উচিত বলে মনে করেন ডিজাইনাররা।
মাপজোখ:দুই বোতামের ব্লেজারে ওপরের বোতামটি নাভি বরাবর কিংবা একটু ওপরে থাকতে হবে। তিন বোতামের হলে মাঝখানের বোতামটি নাভি বরাবর হতে হবে। কব্জি থেকে আধা ইঞ্চি ওপরে থাকতে হবে হাত। দৈর্ঘ্য হতে হবে প্যান্টের চেইন এবং পশ্চাদদেশ পুরোপুরি ঢাকা পড়ে, ঠিক তেমন।
ছেলে ও মেয়েদের ব্লেজারের মধ্যে কাটিং, প্যাটার্ন মাপের ক্ষেত্রে তেমন পার্থক্য নেই বলে জানান সানমুনের কাটিং মাস্টার রাজু। তবে আর্টের ডিজাইনার হোসাইন ইমনের কণ্ঠে ভিন্ন সুর। তিনি বলেন, 'ছেলে ও মেয়েদের ব্লেজারের মাপ এবং কাটিংয়ে (শরীরের মাপ, লম্বা, চওড়া) বিস্তর পার্থক্য। ছেলেদেরগুলো একটু বড় (ঢিলে) হয় এবং মেয়েদেরগুলো স্লিম ফিট হয়ে থাকে।'
কার জন্য কোন ব্লেজার:এক বোতামের ব্লেজার বেছে নিতে পারেন যাদের শারীরিক গঠন মোটা, দুই-তিন বোতামের ব্লেজার চিকন ও মাঝারি গড়নের ছেলেমেয়েরা। স্ট্রাইপ ব্লেজার কম উচ্চতার লোক এবং বেশি উচ্চতার লোকেরা এক রঙের চেক ব্লেজার বেছে নিতে পারেন। মাঝারি গড়নের তারা পরতে পারেন যে কোনোটিই।
অনুষঙ্গ:ব্লেজারের সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে ছেলেরা শার্ট ও টি-শার্টের সঙ্গে বাহারি রঙের টাই পরতে পারেন। টুপিস বা থ্রিপিসের সঙ্গে বাহারি কটি পরলে ভিন্ন লুক এনে দেবে। হোসাইন ইমন বলেন, 'ছেলেরা শার্টের সঙ্গে ম্যাচিং করে মোজা পরতে পারেন। আবার হালকা মোজা দেখা যায় যেন সেভাবেও পরতে পারেন, এতে দেখতে স্টাইলিশ লাগবে।' মেয়েরা শার্ট, টপস, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ির সঙ্গে স্কার্ফ, স্কার্ট, হিজাব মিল রেখেও ব্লেজার পরতে পারেন। ভিন্ন ধারার এক ফ্যাশন পেতে চাইলে টাই ছাড়াও ব্লেজারের ওপর উলেন স্কার্ফ বা সিল্ক্কের স্কার্ফ জড়িয়ে নিতে পারেন। নিতে পারেন ছোট হাত বা কাঁধ ব্যাগ। পরতে পারেন মিলিয়ে হাতঘড়ি।
দরদাম:ব্লেজারের দাম ফেব্রিক, ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে। আর্টের হোসাইন ইমন বলেন, 'সাড়ে তিন হাজার থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকার মধ্যে ব্লেজার পাওয়া যাবে।' তবে এ কথার সঙ্গে সানমুনের রাজুর কণ্ঠে ভিন্ন সুর। তিনি বলেন, 'দামটা ফেব্রিকের ওপর নির্ভর করলেও পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজারেরও বেশি ব্লেজারের দাম হতে পারে।'
মডেল :সোনিয়া রিফাত ও ইমতু
পোশাক :আর্ট; মেকওভার :বান্থাই বারবার অ্যান্ড বিউটি স্যালুন;
ছবি :ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
মন্তব্য করুন