ফুটবল দুনিয়ার এক বিস্ময়কর প্রতিভা লিওনেল মেসি। কাতার বিশ্বকাপই হবে ৩৫ বছর বয়সী এ খেলোয়াড়ের শেষ বিশ্বকাপ। তবে বয়স বাঁধতে পারেনি তাঁকে। মেদহীন গড়ন ও ক্ষীপ্র গতির মেসি বল পেলেই হয়ে ওঠেন খাপ খোলা তলোয়ার। প্রতিপক্ষের গোলবারের দিকে ছোটেন বিদ্যুৎগতিতে। তাঁকে নিয়ে এই গ্রহের মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কীভাবে তিনি নিজেকে ফিট রাখেন, তাঁর প্রিয় খাবার কী, কোন পোশাক পরতে ভালোবাসেন- এসবে মেসিভক্তদের আগ্রহের অন্ত নেই।

মেসির ফিটনেসের রহস্য :মেসি মাঠে যে জাদু দেখান, তাঁর জন্য নিয়মিত ব্যায়ামাগারে ঘাম ঝরাতে হয়। নিজেকে গতিশীল রাখতে তিনি তাঁর প্রাত্যহিক ব্যায়ামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন। এর মধ্যে পিলার ব্রিজ-ফ্রন্ট, লাঞ্জেস, হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেসেস, পিলার স্কিপস ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করেন তিনি। এ ছাড়া শরীরের মাংসপেশি গতিশীল রাখতে নিয়মিত হার্ডল হপ ও সিপ্লট স্কোয়াটস নামে ব্যায়ামগুলো করে থাকেন। আর পিলার স্কিপস, স্কিপিং রোপস আর স্কোয়াটের মাধ্যমে মেসি পুরো শরীরে সমন্বয় আনেন।

খাওয়া-দাওয়া :একটা সময় ভোজনরসিক ছিলেন মেসি। ডায়েট চার্টের ধারের কাছে ঘেষতেন না। শরীরের কথা না ভেবে চিনি আর চর্বিযুক্ত খাবার গলাধঃকরণ করতেন তিনি। কিন্তু তাঁকে এ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে ফিরিয়ে আনেন পেপ গার্দিওয়ালা। এ সময় চিকিৎসক মেসিকে জানিয়েছিলেন, এই অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস তাঁর ক্যারিয়ারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে তাঁকে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তা ছিল ডায়েট চার্ট না মানার ফল। এ কথা শোনার পর থেকেই ডায়েট পরামর্শ মেনে খাবার গ্রহণ শুরু করেন তিনি। প্রচুর পানি পান করেন মেসি।

তাঁর জন্য খাবার রান্না করা হয় অলিভ অয়েল দিয়ে। তাজা ফল, শাকসবজি এবং রুটিজাতীয় খাবার থাকে এ খেলোয়াড়ের খাদ্য তালিকায়। সেই সঙ্গে প্রোটিন, লেগুমজাতীয় খাবারও রাখেন তিনি। এ ছাড়া শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে তিনি নিয়মিত রোজ সিউইড নামে এক ধরনের শৈবাল খেয়ে থাকেন। এই শৈবালে রয়েছে স্পিরুলিনা নামক উপাদান। এর ৭০ শতাংশজুড়ে আছে প্রোটিন। অন্যদিকে, এই শৈবালে থাকা সিউইডে রয়েছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি, ডি, ই ও কে এর উপকারী সব উপাদান। পাশাপাশি এতে ক্লোরেলা ও স্পিরুলিনা নামক উপাদানও রয়েছে। অনেক তারকা ফুটবলারই নিজেকে ফিট রাখতে মেসির মতো এই শৈবাল খেয়ে থাকেন।

প্রিয় খাবার :টানা সাতবার ব্যালন ডি'আর জেতা মেসি জীবনের অধিকাংশ সময় স্পেনে কাটলেও শিকড়ের টান ভুলতে পারেননি। তাঁর প্রিয় খাবারই তাঁর প্রমাণ। মিলানেসা নাপোলিতানা নামে আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে। এটি মেসির এতই প্রিয়, শতবার খেলেও অভক্তি আসে না বলে জানিয়েছেন তিনি। গরুর মাংসের (স্টেক আকারের) সঙ্গে ডিম, লবণ, চিজ, রসুন, গোলমরিচ, টমেটো, অলিভ অয়েল আর বিস্কুটের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা হয় খাবারটি। এই খাবারটি ব্রেডেড বিফ কাটলেট নামেও পরিচিত। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের বিফ চাপের মতো। এ ছাড়া বার্সেলোনায় থাকাকালে ক্লাবটির ওয়েবসাইট থেকে একবার জানানো হয়েছিল, 'রোস্টেড চিকেন উইথ রুট ভেজিটেবলস'ও তাঁর খুব প্রিয়।

রাঁধুনি মেসি :শুধু খাবার খেতেই পটু নন মেসি, রান্নায়ও তিনি বেশ পারদর্শী। মাঝেমধ্যেই সন্তানদের জন্য তৈরি করেন স্নেজেলস। এটি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মাংস দিয়ে রান্না করা হয়। তবে মেসি এ খাবার তৈরিতে সে পথে হাঁটেন না। সন্তানদের জন্য শুধু মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করেন এই স্নেজেলস।

পোশাক :পোশাক নিয়ে অতটা মাতামাতি করেন না মেসি। হাতের কাছে যা পান, পরে ফেলেন। সে কারণেই তাঁকে পরিপাটি রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আন্তোনেলা রুকোজ্জু। স্বামী কখন, কোন পোশাক পরবেন তিনিই পছন্দ করে দেন। এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে একবার মেসি বলেছিলেন, 'আন্তোনেলা আমার জন্য (কাপড়) বেছে নেয়। আমার বিশেষ কিছু নেই এবং কখনোই এ নিয়ে মাথা ঘামাইনি, কেবল স্বাভাবিক থাকি।' মেসির একটি

পোশাক ব্র্যান্ড রয়েছে। ব্র্যান্ডটির নামও মেসি। এখানে সব ধরনের পোশাক-আশাক পাওয়া যায়। মেসির এই পোশাক ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট মেসি স্টোরে ঢুঁ মারলেই খেয়াল করা যায় পোশাকের সমাহার।