চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রধান স্মারক হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে কর্ণফুলী। কর্ণফুলীর সঙ্গে চট্টগ্রামের মানুষের জীবনধারা ও সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন। এ ছাড়া বেশিরভাগ মৎস্যজীবীর আয়ের উৎস এ কর্ণফুলী। আঞ্চলিক গানের সঙ্গেও আছে এই নদীর গভীর মিতালি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে কর্ণফুলী। তবে হাজার বছরের ঐতিহ্যধারী এই কর্ণফুলীর সমৃদ্ধি যেন দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

নদী-তীরবর্তী এলাকায় নতুন নতুন স্থাপনা, কলকারখানা বৃদ্ধি ও মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ধীরে ধীরে প্রাণ হারাচ্ছে কর্ণফুলী। দূষণের ফলে নদীর কোনো জায়গায়ই এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া দূষণ ও দখলের কারণে হুমকির মুখে থাকা কর্ণফুলীর দুই তীরের ৫২৮টি প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশই বিপন্নের মুখে।

বিরল ৮১টি প্রজাতির মাছ অনেকই চলমান পরিবেশগত বিপর্যয় না ঠেকালে ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। মোহনা থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীতে দূষণ সবচেয়ে বেশি এবং এই অংশের দুই তীরে উদ্ভিদের সংখ্যা কম। তবে সেতুর পর থেকে কাপ্তাই অংশে দূষণের পরিমাণ কম এবং উদ্ভিদও রয়েছে বেশি। পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত দুই তীরে পরিচালিত গবেষণার তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে। মোহনা থেকে বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকায় তিন হাজারের বেশি অবৈধ দখলদার কর্ণফুলী নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে।

২০১৯ সালের মে মাসে কর্ণফুলী তীরের ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করেন উচ্চ আদালত। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাভোগী ব্যক্তিরাই চট্টগ্রামের প্রাণপ্রবাহ কর্ণফুলী নদী দখলের সঙ্গে জড়িত। এসব চক্র প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করার কারণেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না।

কিন্তু এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই কর্ণফুলী তার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ হারাবে। কর্ণফুলী শুধু উপজেলা বা চট্টগ্রাম শহরের নদী নয়। বলা চলে চট্টগ্রাম শহর অনেকাংশেই কর্ণফুলীর ওপর নির্ভর। বাংলাদেশের বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীল আর চট্টগ্রাম বন্দর নির্ভরশীল এই কর্ণফুলীর ওপর।
সাধারণ সম্পাদক সুহৃদ সমাবেশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়