- ফিচার
- করতোয়ার একূল ওকূল
করতোয়ার একূল ওকূল

গোসল, কাপড় পরিস্কার, হাঁড়ি-পাতিল ধোয়া সবই হতো করতোয়া নদীতে। নৌকা ভ্রমণ ছিল নিত্যদিনের। মাছে ছিল ভরপুর। অনেকে এ নদীর পানিও খেতেন। এখন নদীপাড়ে যেতে হয় নাকে রুমাল দিয়ে। ময়লা-দুর্গন্ধ-দখল-দূষণে করতোয়া এখন সরু খাল। করতোয়া নদীসংলগ্ন বাসিন্দাদের এমন স্মৃতিচারণ।
করতোয়া নদীলাগোয়া চেলোপাড়া এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা উত্তম কুমার জানান, নদীতে কত মাছ ধরেছি, নৌকা দিয়ে এ-পাড় থেকে ও-পাড়ে যেতাম, নদীর পানি দিয়ে রান্নাও করেছি। এটি এখন বিলীন হতে বসেছে। করতোয়াকে নদীরূপে চেনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে একটি নর্দমা।
প্রায় ২০০ কিলোমিটার করতোয়া নদীর তীরঘেঁষে প্রাচীন পুণ্ড্রনগরীর গোড়াপত্তন হলেও, সেই সভ্যতার সঙ্গে এখন করতোয়া নদীও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে। করতোয়া নদী বগুড়া শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে জেলার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনায় বাঙালি নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে দূষণ, দখল, ভরাট, পানিপ্রবাহ না থাকায় এখন মরা নদী হিসেবে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের খুলশিচাঁদপুর এলাকায় বাঁধ ও স্লুইসগেট নির্মাণের মাধ্যমে করতোয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। সে সময় ওই অংশে করতোয়ার মূল স্রোত একটি শাখা নদীর মাধ্যমে বাঙালি নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এতে গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ার দিকে করতোয়া নদীর প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে দিনে দিনে সরু খালে পরিণত হয়।
একদিকে পানিশূন্যতায় প্রবাহ বন্ধ, অন্যদিকে ভরাট আর দখলের ফলে নদীটি এখন মৃত। করতোয়া নদীটি শহরের ভেতরের অংশে যে যেখানে পেরেছে, দখল ও ভবন নির্মাণ করেছে। নদীর জেগে ওঠা চর নিজেদের জমি দাবি করে চলছে চাষবাস আর প্রশাসনের আড়ালে বালু উত্তোলনে নদী হারিয়েছে তার গতিপথ। ঢেউ নেই, পানি নেই, পাড় নেই। দু'একটি স্থানে পানি দেখা গেলেও শহর ও শহরতলির প্রায় ৩০ কিলোমিটারে শুধু ড্রেনের কালো পানি বয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান হলেও ক'দিন পর দখলবাজরা আবারও পর্যায়ক্রমে দখল করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩ কিলোমিটার অবৈধ দখলদারদের কবলে।
বগুড়া জেলা প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী, শহরের মধ্যে কয়েকটি স্থানে দখল হয়েছে। দখল হওয়া স্থানে বাড়িঘর, ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। ২৭টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উজ্জল কুমার এ বিষয়ে বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে, আবারও শুরু করা হবে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমানের মতে, নদীর প্রাণ প্রস্তাবনা সংশ্নিষ্ট দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে। সেটি আলোর মুখ দেখেনি।
আমাদেরও প্রত্যাশা করতোয়া প্রাণ ফিরে পাক, বয়ে যাক নিজ পথে।
উপদেষ্টা, সুহৃদ সমাবেশ, বগুড়া
মন্তব্য করুন