বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে স্কুলগুলোকে নিয়ে সবচেয়ে বড় ধারাবাহিক আয়োজন হচ্ছে বিএফএফ-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব। গত রোববার শেষ হলো এই উৎসবের ২০২২ সালের অধ্যায়। বাস্তবিক অর্থে এতে বাংলাদেশের ৫২০টি স্কুল অংশগ্রহণ করে এবং ১ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী সরাসরি এ আয়োজনে অংশ নেয়। এ ছাড়া হাজারো শিক্ষার্থী পরোক্ষভাবে এই আয়োজনের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। নতুন উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে মনন বিকাশের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞান পড়ূয়াদের আনুপাতিক হার হ্রাস পাচ্ছে- এমন এক সন্ধিক্ষণে বিজ্ঞান ও বিতর্ক নিয়ে এই আয়োজন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যসূচি নয়, আগ্রহী করে তুলছে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রতিফলন নিয়ে। আগ্রহী করে তুলছে সামাজিক বিজ্ঞানে। তারা তাদের জীবনে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করছে বিজ্ঞান ভাবনাকে। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, এই আয়োজনের কারণে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে, নতুন নতুন ধারণা নিয়ে মগজাস্ত্র ব্যবহার করছেন সংশ্নিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরাও। শিক্ষার্থীদের সমানতালে সহযোগিতা দিয়ে গেছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের নতুন দিশায় এগিয়ে নিতে, বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে এই আয়োজন সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। মোদ্দাকথা অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির বিজ্ঞানপড়ূয়া শিক্ষার্থী ও সংশ্নিষ্ট মানুষের মাঝে এই আয়োজন এনে দেয় এক অভূতপূর্ব মাত্রার বিজ্ঞানকেন্দ্রিক আমেজ, যা প্রভাবিত করে তাদের পারিপার্শ্বিকতাকেও।

নিজেদের কথা বলি। আমরা যারা বিচারক, যারা সাবেক বিতার্কিক, তাদের জন্যও এই আয়োজন একটি বড় আগ্রহের জায়গা। ভেবে দেখুন সারাদেশে এই আয়োজনের বিচারকার্যে কতজন সাবেক বা বর্তমান বিতার্কিক অংশ নিয়েছে? সবার জন্য এ যেন এক মহাযজ্ঞের মিলনমেলা। সামাজিক বা ব্যক্তিগত ব্যস্ততার মাঝে এই আয়োজনে দেখা হওয়ার পর হয়তো কেউ কেউ বলে উঠেছে- 'বন্ধু, কী খবর বল, কত দিন দেখা হয়নি।' এ যেন শুধু উৎসব নয়, সাবেক ও বর্তমান বিতার্কিকদের মিলনমেলা।

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন থেকে আমরা এখন ধাবিত হচ্ছি স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট নাগরিক। এই স্মার্ট মানসিকতার বীজ বপন করে দেওয়ার অন্যতম আয়োজন এই বিতর্ক উৎসব। নিজের সঠিক শিল্পকে প্রকাশ করা, বিজ্ঞান নিয়ে নিজের ভাবনা মেলে ধরার সবচেয়ে বড় এই আয়োজন। বিতর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের যে প্রয়াস, সেই প্রয়াসের সফল বহিঃপ্রকাশ এই আয়োজন। ২০২২ সালের আয়োজনের যবকিনাপাত থেকে সূচিত হোক ২০২৩ সালের আয়োজন। সেই প্রতীক্ষায় কমপক্ষে ৫২০টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরাও।