দিলীপ কুমার রায়ের জন্ম ২২ জানুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার ও গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। পিতামহ ছিলেন প্রখ্যাত কালোয়াত দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্র রায়। ছয় বছর বয়সে মা সুরবালা দেবীকে হারান তিনি। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সঙ্গেই কাটে দিলীপ ও তাঁর বোন মায়ার শৈশব, কৈশোর। কিন্তু সেই আশ্রয়, ভরসা ও মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকা বাবা প্রয়াত হন যখন দিলীপের বয়স মাত্র ষোলো বছর।
সংগীত ও সংস্কৃতিমনা পরিবারে যেহেতু জন্ম, দিলীপ কুমার রায়ের বেড়ে ওঠা ও বিকাশ লাভ হয়েছে গানের ঝরনাতলে। ছোট থেকে তিনি তাঁর পিতামহের মতোই ওস্তাদি হিন্দুস্তানি সংগীতের অনুরাগী ছিলেন। পিতার গাওয়া বাংলা গান তাঁকে অতটা টানত না। পিতৃবিয়োগের পর থেকে বাংলা গানকে হিন্দুস্তানি সংগীতের সমকক্ষ করার ঝোঁক চাপে দিলীপের মাথায়। পরিণত সংগীতশিক্ষা লাভ করেন সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী ও অচ্ছন বাঈয়ের কাছে। সুর ও সংগীত তাঁর অন্তরে গেঁথে থাকলেও, একাডেমিক পড়াশোনায় তিনি ভালো ছিলেন। গণিত, সংস্কৃত, রসায়ন ও ইংরেজি বিষয়ে আগ্রহ ছিল তাঁর। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকে ১৯১৮ সালে গণিতে স্নাতক হন। লাভ করেন প্রথম শ্রেণি। তারপর কেমব্রিজে পড়তে যান। সেখানে গণিতের পাশাপাশি পাশ্চাত্য সংগীতের শিক্ষা লাভ করেন। শেখেন পিয়ানোও। জার্মান ও ইতালীয় সংগীত শিখতে যান বার্লিনে। সেখানে সাক্ষাৎ হলো রোম্যাঁ রোলাঁ, বার্ট্রান্ড রাসেল, হারমান হেসের সঙ্গে। সুইজারল্যান্ডের লুনাগোতে আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা করতে গেলেন ভারতীয় সংগীত বিষয়ে। তিনি ১৯২২ সালে দেশে ফিরে ভারতীয় মার্গসংগীতে তালিম নেন আবদুল করিম খাঁ, ফৈয়াজ খাঁ, পণ্ডিত ভাতখণ্ডের কাছে। ভারতীয় সংগীতের ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে আবিস্কারের পথে পা রাখলেন গবেষক দিলীপ কুমার। দেশে ফিরে গানপাগল তরুণ হানা দিলেন বিভিন্ন স্থানে। গান আত্মস্থ করতে গেছেন বাইজিদের কাছেও। গবেষণাস্বরূপ বাংলা গানের মধ্যে কী করে মিড়, গমক, তান এনে তাঁকে পাশ্চাত্য সুরের মিশেলে পরিবেশন করা যায়, সেই অভিনব পরীক্ষায় মেতে উঠলেন দিলীপ। প্রয়োজনে মেশালেন কীর্তনের আখর রীতি। তাঁর গানের কথায় রয়েছে সুগভীর অর্থ, রয়েছে আধ্যাত্মিক ভাবনার ছাপ। সাথে রয়েছে সুরের কারুকাজ। 'বৃন্দাবনে লীলা অভিরাম' গানটির 'ওরা জানে না, তাই মানে না'র পল্লবিত সুর যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দিলীপ কুমার বলতেন, 'আই সিং হোয়াট আই ফিল।' এই অনুভবেই তিনি গেয়েছেন 'যদি দিয়েছ বঁধুয়া', 'বঙ্গ আমার জননী আমার', 'জীবনে মরণে এসো' গানগুলো।
দিলীপ কুমার গানকে ভেঙেচুরে নিজের ঘরানায় গাইতেন। সংগীতবোদ্ধারা তাঁর এই ঢঙকে 'দৈলিপী ঢঙ' নামে অভিহিত করেন। নিজের গান নিয়ে যাপনের অভিজ্ঞতা, গায়কি নিয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন দিলীপ। দিলীপ কুমারের গাওয়া গানের রেকর্ড সংখ্যা শতাধিক। গানের বিষয়ে অন্তত দশটি বই লিখেছেন তিনি। গীত-সংকলন ও স্বরলিপির বইও আছে অনেক। বাংলা সংগীত আলোচনা সাহিত্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সংগীত বিষয়ে তাঁর মতবিনিময় ঐতিহাসিক খ্যাতি লাভ করেছে। অতুলপ্রসাদ সেন ও কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে দিলীপ কুমার রায়ের বিশেষ হৃদ্যতা ছিল। প্রথম দিকে নজরুলের সংগীত রচনাকে কলকাতার সুধীমহলে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। নজরুলের গানের স্বরলিপি প্রকাশের ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন।
প্রশ্ন
১. দিলীপ কুমার (কত সালে) কত বছর বয়সে তাঁর মাকে হারান?
২. কার সংগীত আলোচনার ভিত্তি নির্মাণ করতে অবদান রাখেন দিলীপ কুমার?
৩. গান নিয়ে দিলীপ কুমার কয়টি বই লিখেছেন?
কুইজ ৮৬-এর উত্তর
১. ১৯৮০
২. চিন্তাশক্তি আর কল্পনাশক্তির চমৎকার সমবায়
৩. মহামহিম রবীন্দ্রনাথ, পরম্পরাহীন রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথকে যতটুকু জানি প্রভৃতি
কুইজ ৮৬-এর জয়ী
কুসুম খান
কান্দিপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আরিফুল ইসলাম
ইসিবি চত্বর মিরপুর, ঢাকা

নিয়ম
পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন ২৪ জানুয়ারি সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।