একটা সময় পাটজাত পণ্য বলতে শুধু দড়ি, বস্তা, চট বোঝা গেলেও বর্তমানে পাটের ব্যবহার নানাবিধ। পোশাক থেকে শুরু করে অন্দর সজ্জায় পাটের তৈরি পণ্য ব্যবহার করা হয়। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা পাটের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। লিখেছেন আসমাউল হুসনা

পাট বাংলাদেশের শতবর্ষের ঐতিহ্য। পাটজাত পণ্য কেবল দড়ি, বস্তা, চটে সীমাবদ্ধ নেই। শাল, শাড়ি, পাঞ্জাবি, হ্যান্ড ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ, পার্স, ক্যাপ, ফুলদানি, ওয়ালম্যাট, টেবিল ম্যাট, ফ্লোরম্যাট, পর্দা, শিকা, শোপিস, গহনা, ডোরম্যাট, শতরঞ্জি, টিস্যু বক্স, জুতা, কুশন কভার, দোলনা, কার্পেট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার হয় পাট। বর্তমানে পাট-তুলার মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে ডেনিম। এই ডেনিম ব্যবহার হচ্ছে প্যান্ট, শার্ট ও জ্যাকেট তৈরিতে। পাট থেকে তৈরি সুতা একটু মোটা হয়। এর থেকে তৈরি পোশাকও একটু মোটা হয়ে থাকে। তাই এ পোশাকগুলো গরম ও শীতে বেশি উপযোগী।

পাটপণ্য নিয়ে কাজ করছেন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা। লাভবানও হচ্ছেন। পাটের বিভিন্ন শোপিস ও অন্দর সজ্জার সামগ্রী নিয়ে কাজ করেন সৌরভ মণ্ডল। তিনি জানান, পাটজাত পণ্য একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। পাটজাত পণ্য যেমন ঐতিহ্যকে ধারণ করে, তেমনিভাবে আমাদের গৃহের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, ফারিয়াহ আফরোজ প্রিয়া একজন অনলাইন উদ্যোক্তা। কাজ করছেন পাটজাত পণ্য নিয়ে। পাটজাত দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটি ক্রেতা মহলে প্রশংসনীয় সাড়া পাচ্ছে বলে জানান তিনি।

ঝিনাইদহ জেলার পাটের তৈরি জুতা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ফ্রান্স, প্যারিস, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ চীন ও জাপানে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কারণে এটিকে বাংলার সোনালি আঁশ বলা হয়। বর্তমানে ফুটপাতের ছোট ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমলেও পাটজাত পণ্য পাওয়া যায়। কেবল অফলাইনে নয়, বরং অনলাইন পেজগুলোতেও পাওয়া যায় পাটজাত পণ্য। পণ্যের ধরন ও মানভেদে এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পাট দেখতে অনেকটা চাকচিক্যহীন হলেও অভিজ্ঞদের হাতের ছোঁয়ায় ও রং ব্যবহার করে এগুলোকে করা হয় দৃষ্টিনন্দন। পাট দিয়ে তৈরি এসব শৌখিন পণ্যের চাহিদা গ্রাম থেকে শহরে অনেকটাই বেশি। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নকশা কেন্দ্রের ১২টি শাখায় বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের মধ্যে পাটজাত একটি। পাটজাত পণ্য সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটির ব্যবহার বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচেষ্টা করছে সরকার।

পাটজাত পণ্য যেমন শৌখিন, পরিচর্যাও হতে হবে তেমনি যত্নশীল। যথাযথ যত্ন নিলে পাটজাত পণ্য হবে টেকসই।
- দীর্ঘদিন ব্যবহার ও বাইরে যাতায়াতের কারণে আপনার পাটজাত ব্যাগ, জুতা, স্যান্ডেল অপরিস্কার হয়ে যেতে পারে। ঘরে সাজানো শোপিসেও জমতে পারে ধুলাবালি। তাই এগুলো পরিস্কার করতে হবে নিয়মিত। তাই বলে কিন্তু ভুলেও পাটজাত পণ্য পানিতে ধোয়া যাবে না। তার বদলে ময়লা ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
-খাবার টেবিলে রাখা ম্যাটে খুব সহজেই পড়তে পারে জুস বা অন্য যে কোনো পানীয়। এগুলো পরিস্কারের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মাইক্রোফাইবার ক্লথ। মাইক্রোফাইবার ক্লথ পানিতে চুবিয়ে আলতোভাবে মুছে নিন এবং পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত বারবার এ প্রক্রিয়াটি করতে থাকুন।
-ব্যবহূত পাটজাত পণ্যটিতে যদি কোনো দাগ লেগে যায়, দাগ তুলতে বেকিং সোডা ও অল্প পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। দাগযুক্ত অংশটুকুতে পেস্টটি আলতোভাবে লেপে দিন। ৫ মিনিট পর ভেজা কাপড় দিয়ে পেস্টটি তুলে ফেলুন। সূর্যের তীক্ষষ্ট রশ্মি পাটজাত পণ্যের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যের রশ্মি পাটের রং কিছুটা কালচে করে দেয়। তাই পাটজাত পণ্য পানিতে ভিজে গেলে বাতাসে শুকাতে দিন। া
ছবি সৌজন্য :অন্যান্য