
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস হিসেবে পালিত হয়। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা ও শিক্ষা প্রসারিত করা এই দিবসের মুখ্য উদ্দেশ্য। ক্যান্সার হলো এক সমষ্টিগত রোগের একটি সাধারণ নাম। যেখানে শরীরের কিছু কোষ বিভিন্ন কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। অপরিশোধিত ক্যান্সার পার্শ্ববর্তী স্বাভাবিক কলার মধ্যে কিংবা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে সাংঘাতিক অসুস্থতা, প্রতিবন্ধকতা, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ; যার কারণে বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্তের মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি। ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে অসচেতন হওয়ার কারণে মানুষ এই রোগটিকে গুরুত্ব দেয় না। ক্যান্সার অনেক সময় নিঃশব্দে হানা দিতে পারে আপনার সুখের জগতে। স্বাস্থ্যসচেতন না হলে হয়তো ঘুণাক্ষরেও টের পাবেন না কীভাবে দুঃস্বপ্নময় জীবনের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছেন আপনি। ভাগ্যবান হলে অনেক সময় অন্যান্য কোনো সাধারণ রোগ পরীক্ষার সময় ঘটনাচ্ছলে রোগীরা টের পান, তাদের শরীরে নিঃশব্দে ঢুকে পড়েছে ঘাতক ক্যান্সার। এর পর শুরু হয় যুদ্ধ।
শুধু বেঁচে থাকার যুদ্ধ। রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, দেশ-বিদেশের অনকোলজিস্ট, ব্যাপক টাকাপয়সা খরচ করে অবশেষে একদিন জেগে ওঠেন একজন ক্যান্সার সারভাইভার অকুতোভয় যোদ্ধা। এসবই প্রাথমিকভাবে শরীরে দানা বেঁধে থাকা ক্যান্সারের গল্প। কিন্তু এমন কিছু ক্যান্সার রয়েছে, যা কিনা আপনাকে ভেবে দেখার সময় দেবে। আর এসব হলো সেকেন্ডারি ক্যান্সার। আশা করি, একটু সচেতন হলেই এসব ক্যান্সারকেও আপনি পরাজিত করতে পারবেন।
ক্যান্সারের লক্ষণ বোঝার ওপায় কী? এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে ঘাবড়ে না গিয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
- দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
- আকস্মিক ওজন হ্রাস
- দীর্ঘদিনের ব্যথা
-অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড
- ঘন ঘন জ্বর
- ত্বকে পরিবর্তন
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি
-মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
- অকারণে রক্তক্ষরণ
-খাবার গ্রহণে সমস্যা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলোকে ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ মনে করা হয়। তবে এর বাইরেও অনেক লক্ষণ আছে ক্যান্সারের। এগুলোর মধ্যে আছে পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে বা অনুভূতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ইত্যাদি।
শৈশবের ক্যান্সার
কোনো কারণে ডাক্তারের নির্দেশমতো বাচ্চার পেটের সিটি স্ক্যান করতে গিয়ে ধরা পড়ল পেটের নালিতে রয়েছে কিছু পলিপ। এসব পলিপের সব না হলেও কেউ কেউ ক্যান্সারের ভবিষ্যৎ বার্তা বহন করে থাকে। সুতরাং এসব জানা মাত্রই আর হেলাফেলা নয়। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন সময়মতো। এমনই এক ধরনের রোগ লিফ্রোওমিনি সিনড্রোম। শুরুতে ভদ্রগোছের মনে হলেও সময়ান্তরে এ রোগটি থেকে দেখা দিতে পারে রক্তের ক্যান্সার লিউকোমিয়া, সারকোমা, ব্রেইন আর স্তনের ক্যান্সার।
পারিবারিক ক্যান্সার
ওই যে বললাম পলিপের কথা। সেটা অনেক সময় বংশানুক্রমে আপনার শরীরে ঢুকে পড়তে পারে। স্তনের ক্যান্সার এবং মলদ্বারের ক্যান্সারও পারিবারিকভাবে জিনগত প্রভাবে আপনার শরীরে বিস্তার লাভ করতে পারে, যেহেতু জিনকে আর বদলাতে পারবেন না। এজন্য শরীরের স্ট্ক্রিনিং করান চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। আর যদি কোনোভাবে প্রাথমিক স্তরে ক্যান্সারের অস্তিত্ব টের পেয়ে যান তখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে না পড়ে চিকিৎসা শুরু করে দিন গুরুত্বসহকারে। কেননা দেখা গেছে, প্রাথমিক স্তরে ক্ষতিকর টিউমার বা ক্যান্সারের উপস্থিতি ধরা পড়লে সেখান থেকেও নিস্তার পাওয়া সম্ভব।
বার্ধক্য ক্যান্সার উঁকি দেওয়ার সময়
বয়স যতই এগোয়, আপনি কিন্তু ধীরে ধীরে ক্যান্সারের ঝুঁকির দিকেও পা বাড়াচ্ছেন। কত মানুষই নির্বিঘ্নে পার করে দিচ্ছেন ষাট, সত্তর, আশি বছর। আপনার ভাবনা কী? অনুমান নয়। গবেষণা বলছে, সজাগ না হলে বয়সকালে যে কোনো সময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। হাড়ের ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, রক্তের ক্যান্সার- এসবের সঙ্গে বার্ধক্যের সম্পর্ক রয়েছে।া
[অধ্যাপক, এনআইসিভিডি]
মন্তব্য করুন