সম্প্রতি ১৫তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নেওয়া তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থীর সফলতা নিয়ে লিখেছেন আশিক ইসলাম



সব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে
আশিক-উজ-জামান
মেধাক্রম :১ম
ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা করবেন নয়তো বিচারক হবেন। চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে তখন। এপিয়ার্ডের মাধ্যমে আবেদন করেন বিজেএস পরীক্ষায়। এটাই তাঁর চাকরি জীবনের প্রথম পরীক্ষা। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো ছিল। ফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখেন মেধাতালিকায় প্রথম স্থান পেয়ে গেছেন আশিক-উজ-জামান। আশিক বর্তমানে আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরে পড়ছেন। তিনি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার আহসান হাবিবের ছেলে। মা মোছা. আলাতুন বেগম গৃহিণী। বাবার চাকরির সুবাদে থাকতেন রংপুরে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। এরপর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন জজ হওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাট চুকানোর আগেই হয়ে গেলেন সহকারী জজ। আশিক বলেন, এটা অনেক বড় একটা অর্জন আমার জন্য, আমার মা-বাবার জন্য।

আমি আমার মা-বাবা, নিজের বিভাগ ও শিক্ষকদের গর্বিত করতে পেরেছি। আমাদের একাডেমিক পড়াশোনায় জুডিশিয়াল পরীক্ষার সিলেবাস পুরোটাই কভার করে ফেলে। বরং একাডেমিক সিলেবাসে তার চেয়ে আরও বেশি পড়ানো হয়। প্রত্যেক বর্ষে যদি একাডেমিক পড়াশোনা ঠিকভাবে করা যায় তাহলে জুডিশিয়াল পরীক্ষার পড়া হয়ে যায়। একাডেমিক পড়ায় গুরুত্ব দিলে জুডিশিয়াল পরীক্ষায় যে আইনবিষয়ক অংশ রয়েছে তা পড়া হয়ে যায়। বাকি জেনারেল অংশের পার্ট (বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত) তার জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়। এ পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রথমবর্ষ থেকেই একাডেমিক পড়াশোনায় গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষ থেকে জেনারেল বিষয়গুলো পড়তে হবে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়তে হবে। সম্ভব হলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগেই বিগত বিজেএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার প্রস্তুতি অনেকখানি এগিয়ে থাকবে।


নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন
মাহমুদ হাসান
মেধাক্রম :১০ম
করোনা মহামারিতে যখন সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তখন অবসর সময়কে কাজে লাগান। পড়াশোনায় বেশ এগিয়ে নেন নিজেকে। মাহমুদ হাসান নিজেকে প্রস্তুত করেন বিজেএস পরীক্ষার জন্য। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টা আর অধ্যবসায়ের ফলে জায়গা করে নেন ১৫তম বিজেএস পরীক্ষায় দশম স্থান।
মাহমুদের শৈশব কেটেছে দুরন্তপনায়। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। আবারও অংশগ্রহণ করেন ভর্তি পরীক্ষায়, সুযোগ পেয়ে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ার। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই প্রচুর খেলাধুলা করতাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল স্টেডিয়াম পাই; ফলে খেলাধুলার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। চতুর্থবর্ষে এসে মনে হয় এবার পড়াশোনা করা উচিত। কারণ খেলাধুলায় ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব নয়। এরপর জুডিশিয়াল পরীক্ষার জন্য পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হই। আমার এ সফলতার পেছনে কাজ করেছে গ্রুপ স্টাডি। আমরা ছয়জন একসঙ্গে পড়াশোনা করতাম। যাঁদের মধ্যে চারজন এরই মধ্যে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। নিয়মিত একাডেমিক পড়াশোনা ও গ্রুপ স্টাডি বেশ কাজে দিয়েছে। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে; বিশেষ করে সম্পাদকীয় ও আন্তর্জাতিক পাতা অংশটুকু। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকলে প্রিলির সাধারণ জ্ঞানে সুবিধা পাওয়া যায়।


একাডেমিক পড়াশোনাকে গুরুত্ব দিন
সাদিয়া হক মৌ
মেধাক্রম :২৪তম

সাদিয়া হক মৌয়ের ইচ্ছে ছিল বিচারক হবেন। সেখান থেকেই স্বপ্নের যাত্রা। ভর্তি হন আইন বিভাগে। ক্লাস, পরীক্ষা এতকিছুর মধ্যেও একান্ত নিজের জন্য কিছু সময় ব্যয় করতেন প্রথমবর্ষ থেকেই। সে সময়টা সবকিছু বাদ দিয়ে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেন। আর একাডেমিক পড়াশোনতেও বেশ মনোযোগী ছিলেন। সব মিলিয়ে পড়ার টেবিলে নিয়মিত ব্যয় করতেন ৩-৪ ঘণ্টা। এই ধারাবাহিক পড়াশোনায় অবশেষে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সাদিয়া। ১৫তম বিজেএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২৪তম হয়েছেন।

গাইবান্ধা জেলা সদরে ঁতাঁর বাড়ি। ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। আমাদের একাডেমিক যে সিলেবাস পড়ানো হয় তার সঙ্গে জুডিশিয়াল পরীক্ষা সিলেবাস ৬০ শতাংশ মিলে যায়। কেউ যদি একাডেমিক পড়াশোনা নিয়মিত করে তাহলে অর্ধেকের বেশি প্রস্তুতি সেখানেই হয়ে যায়। আমি একাডেমিক পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছিলাম। সেটা আমাকে জুডিশিয়াল পরীক্ষায় সফলতা এনে দিয়েছে। বাকি প্রস্তুতির জন্য আলাদা করে প্র্যাকটিস করতে হয়েছে। নিয়মিত পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি।