চাকাযুক্ত বিশেষ জুতা পরে তুমুল গতিতে ছুটে চলার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাকে বলা হয় স্কেটিং। ক্রিকেট-ফুটবলসহ জনপ্রিয় অনেক খেলার মতো স্কেটিংয়েও আগ্রহী উঠছে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা। বাংলাদেশে স্কেটিংয়ের প্রচলন তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে। আর্জেন্টাইন কোচ গ্রেগোসহ দু'জন বাংলাদেশির হাত ধরে এই দেশে যাত্রা শুরু করে স্কেটিং। ১৯৯৪ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। বর্তমানে এই ফেডারেশন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্কেটিং খেলোয়াড় তৈরির কাজ করছে। বাংলাদেশে স্কেটিং নিয়ে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ৪০টি দেশ নিয়ে হয়েছিল রোলবল বিশ্বকাপ। স্কেটিংয়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি খেলা হয়ে থাকে। যেমন- হকি স্কেটিং, ফিগার স্কেটিং, স্পিড স্কেটিং, রোলবল স্কেটিং ইত্যাদি।

বর্তমানে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের বিনোদন ও শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য শিশুদের স্কেটিং শেখানোর দিকে ঝুঁকছেন। বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম তাঁর ছয় বছরের বাচ্চাকে সপ্তাহে দু'দিন স্কেটিং ৭১-এ নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, বাসার আশপাশে খোলা খেলার মাঠ না থাকায় বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। সেই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্কেটিং ৭১-এর সন্ধান পাই। এর পর মেয়েকে তিন মাস আগে এখানে ভর্তি করিয়েছি।
তাহমিনা আক্তার বলেন, বাচ্চাদের জন্য শারীরিক ও মানসিক বিকাশ খুব গুরুত্বপূর্ণ এই বয়সে। যেহেতু মাঠের অভাবে তারা খেলতে পারছে না, তাই স্কেটিংয়ে নিয়ে আসা। সেই সঙ্গে ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে স্কেটিং বেশ ভালো ভূমিকা পালন করছে।

স্কেটিং করতে আসা রিহান জানান, এক বছর ধরে স্কেটিং করছে সে। স্কেটিং করতে তার বেশ আনন্দ লাগে। এখানে এসে সে নতুন নতুন বন্ধু পেয়েছে। সাকিব নামের আরেকজন জানায়, 'শুরুর দিকে স্কেটিং করতে খুব ভয় পেতাম। মাঝেমধ্যে পড়ে যেতাম। এখন বেশ উপভোগ করছি।'

বাংলাদেশে স্কেটিং শেখানোর জন্য অনেক ক্লাব ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। স্কেটিং ৭১ তেমনি একটি ক্লাব। জিহাদ হোসেন ও সালমান আদনান সানি নামে দুই তরুণ ২০১৬ সালে (এইচএসসি) ঢাকা সিটি কলেজে অধ্যয়নকালে স্কেটিং ৭১ প্রতিষ্ঠা করেন। সপ্তাহে ২ দিন শুক্র ও শনি সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রধান শাখা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে (সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাশে) অনুশীলন করান। এ ছাড়া ধানমন্ডি লেক ও রেলওয়ে অফিসার্স কলোনিতে বিশেষ প্র্যাকটিস সেশন চালু করেছেন। কেন শুরু করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, শুরু করার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নিজেরা ফিট থাকা, পাশাপাশি অন্যদেরও ফিট রাখতে সহায়তা করা। কেমন সাড়া পাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে সালমান বলেন, ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তার কারণে আমরা প্রথম থেকেই ব্যাপক সাড়া পাই। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই আমাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কমবেশি ৪৫০ জনের মতো আমাদের কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়েছে। এ বছর নাম নিবন্ধন করেছে আরও ১০০-এর অধিক। তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে ট্রেনিং ফি মাসিকভাবে চার্জ করা হয় না। জয়েনিংয়ের সময় এক বছরের মেম্বারশিপ চার্জ হিসেবে ৩ হাজার টাকা পে করতে হয়। যেটা এক বছর পর আবার পে করে মেম্বারশিপ রিনিউ করা যায়। আমাদের কাজ কেবল প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়- সঙ্গে রয়েছে রানিং, সাইক্লিং ও সুইমিং। অনেক অভিভাবক আছেন যাঁরা বাচ্চাকে স্কেটিং প্র্যাকটিসে রেখে একসঙ্গে হাঁটতে চলে যান, আবার কেউ বাচ্চার পাশাপাশি নিজেও স্কেটিং শুরু করে দেন।'

বাংলাদেশে স্কেটিংয়ের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে সালমান বলেন, 'স্কেটিং বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনাময় একটি স্পোর্টস। প্রতিযোগিতামূলক স্কেটিং এবং দেশে স্কেটিংয়ের প্রচারে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় ভালো ফলাফল নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের কোচিং প্যানেল ও খেলোয়াড়রা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।'

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক বিজয়ী স্কেটিং খেলোয়াড় ও কোচ আবুল কালাম আজাদ ২০০৮ সালে গড়ে তুলেছেন আজাদ স্কেটিং ক্লাব। ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে স্কেটিং শেখানো হয় এমন একটি ক্লাব আজাদ স্কেটিং ক্লাব। সপ্তাহের সাত দিন খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এখানে।

স্কেটিং শেখানোর আরও একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল রোলার স্পোর্টস ক্লাব। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম মিরপুরে এই ক্লাবটি স্কেটিং শেখায়। ২০০৭ সালে ক্লাবটি যাত্রা শুরু করে। সপ্তাহে তিন দিন শনি, সোম ও বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত স্কেটিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।