![আখতারুজ্জামান ইলিয়াস [জন্ম :১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩-মৃত্যু :৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮]](https://samakal.com/uploads/2023/02/online/photos/Untitled-25-samakal-63e5364d099fd.jpg)
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস [জন্ম :১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩-মৃত্যু :৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮]
কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ডাকনাম মঞ্জু। পৈতৃক বাড়ি বগুড়া। তাঁর বাবা বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৪৭-১৯৫৩) এবং মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম বেগম মরিয়ম ইলিয়াস। অনুজ, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।
অগ্রজের সাহিত্য বিষয়ে অনুজের মন্তব্য :
'পরিচিত অভিজ্ঞতার প্রায় সর্বস্তরে জীবনকে নির্মোহ দৃষ্টিতে একেবারে এর গভীরতম শাঁস পর্যন্ত অশেষ কৌতূহল নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে শিল্পকর্মে তা বেপরোয়াভাবে প্রকাশ করার বিরল ক্ষমতা দেখতে পাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায়। প্রকৃতি তাঁকে এই বিশ্ব পর্যবেক্ষণের ও উপলব্ধির সময় বেশিদিন দেয়নি। হয়তো সেজন্যই এই নাজুক ও স্বল্পায়ু সময়ে তিনি মর্মভেদী। দৃষ্টিকে শানিত করে দেখেছেন তাঁর ইন্দ্রিয় ও বোধির চেনা বিশ্বকে। এই দেখা একাধারে নির্মম এবং কৌতুকবহ। নির্মম, কেননা, সত্যনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ সব সময়ই নির্মম এবং কৌতুকপ্রদ। কেননা, মানুষের অসতর্ক ও দুর্বল মুহূর্ত কী ভঙ্গি কী বেফাঁস বাক্য বা কাজকে তিনি যেমন অবলীলায় প্রকাশ করেন তাতে পাঠক একই সঙ্গে অস্বস্তি, বিব্রত এবং কৌতুক বোধ না করে পারে না। আর এই দুই অনুভূতি উস্কে দেওয়ার শক্তি বড় মাপের লেখকেরই বৈশিষ্ট্য। যে বাস্তবতার আলোয় তিনি জীবন দর্শন করেন তা কখনোই একেবারে চাঁচাছোলা যান্ত্রিক বাস্তবতা নয়। খড়খড়ে শুস্ক চোখে ইলিয়াস বিশ্ব দেখেননি। চোখে কেবলই খরা নিয়ে সম্ভবত খুব বেশিদূর এগোনো কি খুব বড় মাপের শিল্প রচনা করা যায় না। চোখ তাঁর সিক্তই, কিন্তু সেই সজল চোখ বহির্বিশ্ব এবং অন্তর্বিশ্বকে ঝাপসা না করে বরং আলোর দ্যুতিতে উজ্জ্বলতর করেছে এবং তাঁর উজ্জ্বল, স্বচ্ছ দৃষ্টিপথে যা-ই পড়েছে তা জীবন্ত এবং সরস হয়ে উঠেছে। এই যে দ্বিত্ব সরস নির্মোহের সাক্ষাৎ পাই ইংরেজ কবি চসারের অবলীলা বর্ণনা এবং তাঁর অন্তর্লীন হাস্যরসে। ইলিয়াস তাঁর গল্পের বিভিন্ন বিচিত্র মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের বিশ্বাস, সংস্কার, দুঃখ, শোক, আনন্দ, আহ্লাদ, অনুভূতি, উপলব্ধি, ভঙ্গি, সংলাপ ইত্যাদি যে স্বচ্ছন্দ অথচ তির্যক ও কৌতুকবহ ভঙ্গিতে সৃষ্টি করেন তাতে তাঁর লেখা যেমন জীবনের একটি সামগ্রিক, পূর্ণ-বৃত্ত বাস্তবতা তৈরি করে, তেমনি তাতে তাঁর স্বকীয় ধাঁচও প্রতিষ্ঠিত হয়।'
- খালিকুজ্জামান ইলিয়াস
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র ১, মাওলা ব্রাদার্স
উৎসব গল্প থেকে কিছু অংশ-
... বিধাতার ইচ্ছা অন্যরূপ। ওদের সরু গলির মুখে ঢুকেই আনোয়ার আলি বিরক্ত ও দুঃখিত হয়ে পড়ল। তার বিরক্তির কারণ এইসব : গলির নালায় হলদে রঙের ঘন জল ল্যাম্পোস্টের ফ্যাকাশে আলোতে ঘোলাটে চোখে নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকে। নালার তীরে মানুষ ও কুকুরের অপকর্ম কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমায়। আর, আর এইসব লোকজন! পাড়ার অধিবাসীরাও তার বিরক্তির একটি কারণ। নাইট শে ছবি ভাঙতে এখনো আধঘণ্টা, পাড়ার তরুণ সমাজ মেয়ে দেখবে বলে এখন থেকেই পাঁয়তারা কষে। গলির বাঁ দিকে বড়ো রাস্তায় চলছে জুয়ার জমাট আড়া। আহমদিয়া হোটেল এ্যাও রেস্টুরেন্টে বিশ বছর আগেকার 'ছোড়ে বাবুল কা ঘ বিরতিহীন বাজে। এখন রাত্রি সোয়া এগারোটা, আরও ঘণ্টা দুয়েক এই কর্কশ কোলাহলের কাল।...
প্রশ্ন
১. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ বর্ণনায়, কোন ইংরেজ কবির প্রসঙ্গ এসেছে?
২. কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলপি চালিয়ে নরম গলায় রূপসীরা কী নিয়ে গল্প করে?
৩. বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস কত বছর পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন?
কুইজ ৮৯-এর উত্তর
১. ঢাকার আরমানিটোলা হাই স্কুলে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে।
২. সমকাল।
৩. ষাটের দশকে।
কুইজ ৮৯-এর জয়ী
নূর জাহান বেগম
কাদের খান রোড, খুলনা
জীবন চৌধুরী
নারান্দিয়া, তিতাস, কুমিল্লা
নিয়ম
পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।
অগ্রজের সাহিত্য বিষয়ে অনুজের মন্তব্য :
'পরিচিত অভিজ্ঞতার প্রায় সর্বস্তরে জীবনকে নির্মোহ দৃষ্টিতে একেবারে এর গভীরতম শাঁস পর্যন্ত অশেষ কৌতূহল নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে শিল্পকর্মে তা বেপরোয়াভাবে প্রকাশ করার বিরল ক্ষমতা দেখতে পাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায়। প্রকৃতি তাঁকে এই বিশ্ব পর্যবেক্ষণের ও উপলব্ধির সময় বেশিদিন দেয়নি। হয়তো সেজন্যই এই নাজুক ও স্বল্পায়ু সময়ে তিনি মর্মভেদী। দৃষ্টিকে শানিত করে দেখেছেন তাঁর ইন্দ্রিয় ও বোধির চেনা বিশ্বকে। এই দেখা একাধারে নির্মম এবং কৌতুকবহ। নির্মম, কেননা, সত্যনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ সব সময়ই নির্মম এবং কৌতুকপ্রদ। কেননা, মানুষের অসতর্ক ও দুর্বল মুহূর্ত কী ভঙ্গি কী বেফাঁস বাক্য বা কাজকে তিনি যেমন অবলীলায় প্রকাশ করেন তাতে পাঠক একই সঙ্গে অস্বস্তি, বিব্রত এবং কৌতুক বোধ না করে পারে না। আর এই দুই অনুভূতি উস্কে দেওয়ার শক্তি বড় মাপের লেখকেরই বৈশিষ্ট্য। যে বাস্তবতার আলোয় তিনি জীবন দর্শন করেন তা কখনোই একেবারে চাঁচাছোলা যান্ত্রিক বাস্তবতা নয়। খড়খড়ে শুস্ক চোখে ইলিয়াস বিশ্ব দেখেননি। চোখে কেবলই খরা নিয়ে সম্ভবত খুব বেশিদূর এগোনো কি খুব বড় মাপের শিল্প রচনা করা যায় না। চোখ তাঁর সিক্তই, কিন্তু সেই সজল চোখ বহির্বিশ্ব এবং অন্তর্বিশ্বকে ঝাপসা না করে বরং আলোর দ্যুতিতে উজ্জ্বলতর করেছে এবং তাঁর উজ্জ্বল, স্বচ্ছ দৃষ্টিপথে যা-ই পড়েছে তা জীবন্ত এবং সরস হয়ে উঠেছে। এই যে দ্বিত্ব সরস নির্মোহের সাক্ষাৎ পাই ইংরেজ কবি চসারের অবলীলা বর্ণনা এবং তাঁর অন্তর্লীন হাস্যরসে। ইলিয়াস তাঁর গল্পের বিভিন্ন বিচিত্র মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের বিশ্বাস, সংস্কার, দুঃখ, শোক, আনন্দ, আহ্লাদ, অনুভূতি, উপলব্ধি, ভঙ্গি, সংলাপ ইত্যাদি যে স্বচ্ছন্দ অথচ তির্যক ও কৌতুকবহ ভঙ্গিতে সৃষ্টি করেন তাতে তাঁর লেখা যেমন জীবনের একটি সামগ্রিক, পূর্ণ-বৃত্ত বাস্তবতা তৈরি করে, তেমনি তাতে তাঁর স্বকীয় ধাঁচও প্রতিষ্ঠিত হয়।'
- খালিকুজ্জামান ইলিয়াস
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র ১, মাওলা ব্রাদার্স
উৎসব গল্প থেকে কিছু অংশ-
... বিধাতার ইচ্ছা অন্যরূপ। ওদের সরু গলির মুখে ঢুকেই আনোয়ার আলি বিরক্ত ও দুঃখিত হয়ে পড়ল। তার বিরক্তির কারণ এইসব : গলির নালায় হলদে রঙের ঘন জল ল্যাম্পোস্টের ফ্যাকাশে আলোতে ঘোলাটে চোখে নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকে। নালার তীরে মানুষ ও কুকুরের অপকর্ম কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমায়। আর, আর এইসব লোকজন! পাড়ার অধিবাসীরাও তার বিরক্তির একটি কারণ। নাইট শে ছবি ভাঙতে এখনো আধঘণ্টা, পাড়ার তরুণ সমাজ মেয়ে দেখবে বলে এখন থেকেই পাঁয়তারা কষে। গলির বাঁ দিকে বড়ো রাস্তায় চলছে জুয়ার জমাট আড়া। আহমদিয়া হোটেল এ্যাও রেস্টুরেন্টে বিশ বছর আগেকার 'ছোড়ে বাবুল কা ঘ বিরতিহীন বাজে। এখন রাত্রি সোয়া এগারোটা, আরও ঘণ্টা দুয়েক এই কর্কশ কোলাহলের কাল।...
প্রশ্ন
১. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ বর্ণনায়, কোন ইংরেজ কবির প্রসঙ্গ এসেছে?
২. কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলপি চালিয়ে নরম গলায় রূপসীরা কী নিয়ে গল্প করে?
৩. বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস কত বছর পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন?
কুইজ ৮৯-এর উত্তর
১. ঢাকার আরমানিটোলা হাই স্কুলে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে।
২. সমকাল।
৩. ষাটের দশকে।
কুইজ ৮৯-এর জয়ী
নূর জাহান বেগম
কাদের খান রোড, খুলনা
জীবন চৌধুরী
নারান্দিয়া, তিতাস, কুমিল্লা
নিয়ম
পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।
মন্তব্য করুন