গ্রামটির প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বোর্ড। সেখানে লেখা আছে, 'স্বাগতম' স্মার্ট ভিলেজ হিজলী। আরও লেখা রয়েছে- বাল্যবিবাহমুক্ত, অপরাধমুক্ত, আত্মহত্যামুক্ত স্বনির্ভর ডিজিটাল ও পরিবেশবান্ধব গ্রাম। গেট পেরিয়ে ডান দিকে স্থাপন করা হয়েছে 'স্মার্ট ভিলেজ পাঠাগার'। প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে পারিবারিক 'পুষ্টি বাগান'। যেখানে আবাদ করা হয়েছে বিষমুক্ত সবজির। রয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব। ক্লাবের ৩০ জন সদস্য গ্রামের শিশু, কিশোরী ও নারীর মধ্যে বাল্যবিয়ে এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা চালায়। নারীদের স্বাবলম্বী করতে গঠন করা হয়েছে আরও একটি ক্লাব। সেটির ৫০ জন সদস্যকে ক্ষুদ্র, কুটিরশিল্প ও হস্তশিল্প তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গ্রামের ২০টি বাড়িতে রান্নাঘরের আবর্জনা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার। আরও তিনটি বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে বায়োগ্যাস প্লান্ট। এমন একটি গ্রাম এখন আর স্বপ্ন নয়। এটি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হিজলী গ্রামের গল্প। গ্রামটিকে 'স্মার্ট ভিলেজ' হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ১০ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান। হিজলীতে অবকাঠামোগত নানা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এখানকার মানুষের এখনও শিক্ষাগ্রহণে অনাগ্রহ রয়েছে। প্রচলিত কৃষিনির্ভর সমাজব্যবস্থার যাপিত জীবনে অভ্যস্ত গ্রামটির মানুষ। প্রায় এক কিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই গ্রামটির জনসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এখানকার ৩০২টি পরিবারে ৪৯৩ জন পুরুষ এবং ৫১৬ জন নারী ভোটার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৩৯ জন পুরুষ এবং ২৬৮ জন নারী স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। গ্রামটির মাত্র চারজন পুরুষ এবং দু'জন নারী চাকরিজীবী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুস্মিতা সাহা জানান, ২০২২ সালে এই গ্রামকে স্মার্ট ভিলেজ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া তরুণ-তরুণী ও নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে নানামুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে গত এক বছরে এখানকার কোনো মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়নি। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। খেলার মাঠ সংস্কার, পাঠাগার ও যুব ক্লাব প্রতিষ্ঠার ফলে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে ফিরতে শুরু করেছে গ্রামের যুবকরা। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে এ গ্রামের মানুষের মধ্যে সামাজিকতা, সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠেছে। এখন সবাই নবোদ্যমে নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে। দূর হয়েছে গ্রামীণ নানা কুসংস্কার। সুস্মিতা সাহা আরও বলেন, 'এই উদ্যোগ একটি মডেল। যেটি অনুসরণ করে বাংলাদেশের যে কোনো গ্রামকে স্মার্ট ভিলেজে রূপান্তর করা সম্ভব।'