বেসরকারি চাকরি করেন মাহাতাব উদ্দিন। বাড়ি আলফাডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে। তাঁর ছেলে রেশাদ শেখ পঞ্চম ও মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। দুই সন্তানকে টিফিনের জন্য ৩০ টাকা দিলেই চলত। এখন ৫০ টাকার কম দিলে তাঁরা তেমন কিছু খেতে পারে না। তিনি বলেন, আগে একটি শিঙাড়া, পুরি বা রুটি পাঁচ টাকায় পাওয়া যেত। দাম বেড়ে দিগুণ হয়েছে। এখন পাঁচ টাকায় কিছুই মেলে না।

সদর বাজারের কসমেটিকস দোকানের কর্মচারী মিথুন ঠাকুর। তাঁর সংসারে মা, ছেলেমেয়েসহ পাঁচজন। তাঁর বেতনেই চলে সংসার। বর্তমানে তিন সপ্তাহ গেলেই বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, 'মেয়েটির (সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী) একটি প্রাইভেট ছেড়ে দিতে বলেছি। গাইড বই, খাতা, কলমসহ সব মালামালের দাম দিগুণ হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোই এখন বড় সমস্যা হয়ে গেছে।'

সদর বাজার ঘুরে কোথাও মেলেনি পাঁচ টাকা মূল্যমানের খাবার। গত মাসে এক কাপ রং চায়ের দাম ছিল পাঁচ টাকা, দুধ চা ১০ টাকা। এখন রং চা আট টাকা ও দুধ চা ১৫ টাকা। পাঁচ টাকার পান হয়েছে আট টাকায়। সদর বাজারের অনেক দোকানের সামনে বাড়তি মূল্যতালিকা দেখতে পাওয়া যায়।

সদরের বাসিন্দা আবুল বাশার। দৈনিক চার কাপ চা পান করতেন। দাম বাড়ার কারণে তিনি এখন দুই কাপ চা পান করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি না হয় চা পান করা ছেড়েই দিলাম; কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে করে কী করে সংসার চালাব?'

'চারজনের সংসার আমার। আগে বাদাম বিক্রি করে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ হতো। এখন বাদামের দাম বাড়ায় বিক্রি তেমন নেই। বাজারের জিনিসপত্রে যে দাম তাতে সংসার চলা কষ্ট হয়ে পড়েছে।' কথাগুলো বলছিলেন সদর বাজারের বাদাম বিক্রেতা মান্নান শেখ।

বাজারের দোকানি রঞ্জন সাহা দাবি করেন, আগে ৫০ কেজির ময়দা (এক বস্তা) ১ হাজার ৬০০ টাকায় কিনেছেন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়। ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডার এখন ১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ময়দা, তেল, গ্যাসসহ সব মালের দাম বেড়েছে। তাই এখন পাঁচ টাকার খাবার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দাম বাড়ার পাশাপাশি খাবারের সাইজ (আকার) বড় করেছেন।

একটি রেস্তোরাঁর মালিক ত্রিনাথ রঞ্জন বলেন, আগে পামঅয়েল কিনেছেন ৭৬ টাকা লিটার। তা এখন ১৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎসহ কর্মচারীর বেতন বাড়ায় আগের পরিবেশ আর নেই। তাই খাবারের দাম বাড়িয়েছেন। তবে আগের পাঁচ টাকার শিঙাড়া, পুরি যে আকার বানিয়েছেন, তা এখন বড় করা হয়েছে।

সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন হতে বললেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করে অস্থিরতা তৈরি করতে না পারেন, সেদিকে নজর দিতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক বলেন, খাবারের দোকানে তদারকি করা হবে। সরকার নিম্ন আয়ের মানুষকে সাহায্য করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হবে।