ফেরদৌস নাহারের জন্ম ১৯৬২ সালের ৪ অক্টোবর। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগীত রচয়িতা ও চিত্রকর। ব্যান্ড দল মাইলসের বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি। তাঁর কবিতা নিউইয়র্ক প্যারিস ও লন্ডন থেকে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ– ‘পান করি জগৎ তরল’, ‘বাজে অন্তহীন দ্রিমি’, ‘পশ্চিমে হেলান দেয়া গদ্য’, ‘হ্যাংওভার সন্ধ্যার ডানা’, ‘বর্ষার দুয়েন্দে’ প্রভৃতি। কবিতার জন্য পেয়েছেন কবি রফিক আজাদ স্মৃতি পুরস্কার ও অনুপ্রাণন লেখক সম্মাননা ২০২২।  

দূর শৈশবের প্রথম স্মৃতি–
আমার নানার দেশ কুষ্টিয়া থেকে আম-কাঁঠালের ছুটির পর যখন ফিরে আসতাম, বিদায় জানাতে নানি কুমারখালী স্টেশনে এসে দাঁড়াতেন। তাঁর সেই দাঁড়িয়ে থাকাটা আমার ভীষণ মনে পড়ে। আমরা ব্যথিত মনে ট্রেনে উঠতাম, যেন না উঠলেই আমাদের ভালো ছিল। আজ তাঁরা নেই কিন্তু তাঁদের সেই স্মৃতিটা আছে।

শৈশবের বন্ধু যারা–
আমার বাবা ডাক্তার ছিলেন। চাকরি সূত্রে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় আমরা থেকেছি। নতুন জায়গায় নতুন বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে না উঠতেই হয়তো চলে যেতে হতো। এতে করে নতুন অনেক বন্ধু যেমন পেয়েছি তেমনই হারিয়েছি। আমরা একটা লম্বা সময় বরিশাল মেডিকেল কলেজে ছিলাম। সেখানে কিছু বন্ধু পেয়েছিলাম। সেটা শৈশব-পরবর্তী কৈশোরের বন্ধু। তাঁরা এখনও আছে।

যে ব্যক্তিগত ঘটনার প্রভাব আপনাকে কবি করেছে–
তেমন কোনো ঘটনা নেই। ছোটবেলা থেকেই আমি বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসতাম। খেলাধুলাটা তখনও একটু কম করতে পারতাম শারীরিক স্থূলতার কারণে। তখন আমি লাইব্রেরি, বন্ধু, আড্ডা, গল্প-কবিতার ভেতর প্রবল আনন্দ খুঁজে পেতাম, যেটা এখনও রয়ে গেছে। এর ধারাবাহিকতায় ক্রমশ কবিতায় আসা।

প্রথম বই প্রকাশের স্মৃতি–
১৯৮৬ সালে প্রথম বই প্রকাশিত হয়। ‘ছিঁড়ে যাই বিংশতি বন্ধন’। তখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। আমি আমার বইটা বের হওয়ার সময় আদ্যোপান্ত প্রেসে ছিলাম। কলাবাগান বশিরউদ্দিন রোডের জাকির আর্ট প্রেস। ওখানে দিনরাত এক করেছি। যাঁরা প্রেসের কর্মী ছিল, তাঁদের সঙ্গে  লেটার প্রেসে কাজ হয়েছিল। লেটার প্রেসের অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে আমার উপকারে এসেছে। প্রেস থেকে ফিরতে অনেক রাত হতো। মাঝে মাঝে আমার মা গিয়ে আমাকে নিয়ে আসতেন।  

আপনার প্রিয় গীতিকার ও কথাসাহিত্যিক কারা, কেন প্রিয়–
এ বাংলায় কবি শামসুর রাহমান, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, খান আতাউর রহমান; ওপার বাংলায় পণ্ডিত জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। শামসুর রাহমান, আহমেদ ইমতিয়াজ আমার প্রিয় দেশাত্মবোধক গানের কারণে। জটিলেশ্বর মুখোমপাধ্যায় ভালো লাগে কারণ, গানে আধুনিকতার সঙ্গে সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন তিনি।
লেখকদের ভেতর অসম্ভব প্রিয় শহীদুল জহির। দেশের বাইরে ম্যাক্সিম গোর্কি। বড় হয়েছি তাঁর লেখা পড়ে। সাহিত্যিকদের ভেতর এখনকার যাঁরা তাঁদের নিয়ে মন্তব্য করতে পারব আরও কয়েক বছর পরে, হয়তো।

যে বইগুলো বারবার পড়েছি–
কৈশোরে বারবার পড়েছি ম্যাক্সিম গোর্কির আমার ছেলেবেলা। প্রতি বছর আমি একবার করে এটা শেষ করতাম। আর পড়েছি সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার যত বই। পরবর্তী সময়ে পরিণত বয়সে বারংবার পড়েছি জীবনানন্দ দাশের কবিতা আর শঙ্খ ঘোষের গদ্য সমগ্র।

যে কবির কবিতা পড়ে ঈর্ষা বোধ হয়–
শক্তি চট্টোপাধ্যায়।

কবি, গীতিকার ছাড়াও আরও যা হতে পারতেন–
চিত্রশিল্পী। আরও বেশ কিছু দিকে আমার আগ্রহ ছিল। যেমন ভাস্কর্য তৈরি, চলচ্চিত্র নির্মাণ, সংগীত। মার ইচ্ছা ছিল সংগীতশিল্পী হই। গানের মাস্টার ছিলেন আমাদের ছোটবেলা থেকেই। গানের পেছনে সময় দেওয়াটা একঘেয়ে লাগত। ছবি আঁকার দিকেই ঝোঁকটা ছিল বড়। তবে আমি যখন গান লিখতে শুরু করি, তখন আমার ছোটবেলার গান শেখাটা খুব উপকারে এসেছে।

প্রিয় সংগীতশিল্পী–
আমি গান লিখেছি ব্যান্ড দলের জন্য (মাইলস)। কিন্তু আমার পছন্দ বাঁধা রাগপ্রধান সংগীতে। প্রিয় সংগীতশিল্পী অজয় চক্রবর্তী।  

আপনার চরিত্রের শক্তিশালী দিক কোনটি।
আমি সৎ– আমি অবশ্যই সৎ। এবং মানুষকে ভালোবাসার একটা অপার শক্তি আছে আমার ভেতর। আর আছে সাহস।

প্রিয়জনদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি শোনা প্রশংসাবাক্য–
খুব বড় মনের মানুষ।

প্রিয়জনদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি শোনা অভিযোগবাক্য–
একদম কথা শোনে না।

মানুষের ব্যক্তিত্বের যে দিকটি আপনাকে আকৃষ্ট করে তোলে–
মানুষের সুন্দর ব্যবহার আর অকপটতা। সুন্দর ব্যবহার ভালোবাসি। আর যখন কারও ব্যাপারে বুঝতে পারি যে সে ভণ্ডামি করছে না, আকৃষ্ট হই।