- ফিচার
- ইশপের গল্প
ইশপের গল্প

ইশপের গল্প নিশ্চয়ই পড়েছো তোমরা। ইশপের এত্তো এত্তো গল্প থেকে আজ তিনটি গল্প নতুন করে তোমাদের জন্য হাজির করা হলো। গল্পগুলো বাংলা করেছেন রানাকুমার সিংহ। পড়ে দেখো তো কেমন লাগে তোমাদের...
মানুষ ও সিংহের গল্প
সিংহ এবং মানুষ; সহযাত্রী হিসেবে পথ চলছে। আর গল্প করছে রাজ্যের বিষয়-আশয় নিয়ে। তবে গল্পের বিষয় যাই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের সেরা বলেই দাবি করছিলো। কে সবচেয়ে সাহসী এবং সবচেয়ে শক্তিশালী এই নিয়ে তো তারা রীতিমতো ঝগড়াই লাগিয়ে দিলো। ঠিক তখনই তাদের চোখ গেলো পথের পাশে গড়ে তোলা এক ভাস্কর্যে। মানুষটি তখন বুক ফুলিয়ে বলে, ‘তুমি না বলছিলে সিংহ বেশি সাহসী ও শক্তিশালী; ভাস্কর্যটা দেখো, ইয়াব্বড় সিংহের গলাটা কেমন কুঁকড়ে ধরেছে মানুষটি। এখনও তুমি বলবে মানুষের চেয়ে সিংহ বেশি সাহসী ও শক্তিশালী?’
সিংহ বলে, ‘একটা ভাস্কর্য দেখে এতো সহজে নিজেদের সাহসী এবং শক্তিশালী দাবি করতে যেও না বন্ধু। তাছাড়া এই ভাস্কর্যের স্থপতিও কিন্তু মানুষ। যদি এর স্থপতি কোনো সিংহ হতো তবে গলা কুঁকড়ে ধরা মানুষটাকে হয়তো এভাবে উপস্থাপন করা হতো না। সে পরাজিত হিসেবেই থাকতো সিংহের কাছে!’
বানর যখন বনের রাজা
বনে পশুদের নিয়মিত সমাবেশ হয়। তেমনি এক সমাবেশে এক বানর নাচ দেখিয়ে সবাইকে অবাক করে দিলো। বনের পশুরা এতো খুশি হলো যে তারা সব ভুলে নাচুনে বানরটাকে রাজা বানিয়ে দিলো। কিন্তু বানরের এই রাজা হওয়াটাকে মেনে নিতে পারলো না এক শিয়াল। সে তিতিবিরক্ত হয়ে রাজা বানরকে দেখে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করলো। আর মনে মনে তাকে ফাঁদে ফেলার ফন্দি আঁটতে থাকলো। একদিন সে একটি ফাঁদ পেয়েও গেলো। সে রাজার কাছে গিয়ে বলে, ‘রাজা মশাই, আপনার জন্য বনের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবারটা খুঁজে পেয়েছি। যদিও আমি নিজে তা খেয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু ভেবে দেখলাম, বনের রাজা হিসেবে এই খাবার আপনারই প্রাপ্য।’
শিয়ালের কথায় বানরের বুক ফুলে উঠলো যেন! বানর বীরদর্পে ছুটে গেলো খাবারের কাছে। যেই খাবারে কামড় বসালো অমনি ফাঁদে আঁটকে গেলো। বানর খুব বিরক্ত হলো এবং শিয়ালকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলো। শিয়াল এসব হুমকি থোড়াই করে বললো, ‘কোন খাবার তোমার উপযুক্ত তা বিবেচনা করার বোধ হয়নি এখনও; আর তুমিই হচ্ছো বনের পশুদের রাজা! তুমি আসলেই একটা বোকার হদ্দ!’
পর্বতের ভেতর কেরে !
শহরের মানুষ একদিন দেখলো, তাদের কাছাকাছি যে পর্বত সেই পর্বতের চূড়া থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিলো। অস্থির সেই পর্বতের সঙ্গে যেন শহরটিও কেঁপে উঠছিলো। গাছপালা ভেঙে এবং বড় বড় পাথর গড়িয়ে পড়তে থাকলো। মানুষ বুঝতে পারলো যে, তারা ভয়ংকর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে চলেছে। ভয়ে সবাই পর্বতের কাছাকাছি জড়ো হলো। আর অপেক্ষা করতে থাকলো কৌতূহলী হয়ে! দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তারা পর্বত থেকে ভয়ংকর কিছুই বেরিয়ে আসতে দেখলো না। তবে পর্বতের যেই অস্থিরতা তা যেন বাড়তে থাকলো। হঠাৎ ভয়ানক এক ভূমিকম্পে পর্বতের এক পাশে একটি বিশাল ফাঁক দেখা দিলো। মানুষ হাঁটু গেড়ে বসে সেই ফাঁকা জায়গাটা দেখতে থাকলো। অনেক অপেক্ষার পর তারা যখন ক্লান্ত হয়ে উঠলো ঠিক তখনি দেখলো, এইটুকুন একটা ইঁদুর তার ছোট্ট মাথা পর্বতের সেই ফাঁক থেকে বের করে তাদের দিকে ছুটে আসছে! মানুষ ফোঁড়ন কেটে বলে, ‘এতো তর্জন গর্জনের পর এই টুকুন একটা ইঁদুর বেরিয়ে এলো পর্বতের পেট থেকে!’
মন্তব্য করুন