ঢাকার একটি প্রান্তিক এলাকা ‘ঢাকা উদ্যান’। ‘উদ্যান’ শুনলে যা মনে হয়, এই এলাকা তেমন কিছু নয়। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের বাসস্থান এটি। এখানে শ্রমজীবী অনেক নারী থাকেন। যাঁরা বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। তৈরি পোশাকসহ পুরো শিল্প খাতের উন্নতিতে নারী শ্রমিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ঢাকা উদ্যানের শ্রমজীবী নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারী শ্রমিকদের জন্য শিল্প এলাকায় বড় সমস্যা বাসস্থান। ভালো ব্যবস্থা না করতে পেরে বেশিরভাগই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার নারী পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার খেজুর বাগান এলাকায় নামমাত্র একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। যেটি দেশের বিপুল সংখ্যক নারী পোশাক শ্রমিকের বাসস্থানের চাহিদার তুলনায় নগণ্য। সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে যা ভাড়া দিতে হয়, তা আশপাশের ফ্ল্যাটবাড়ির চেয়েও বেশি।

ঢাকা উদ্যানে পোশাক শ্রমিক লিপির (ছদ্মনাম) সঙ্গে কথা হয়। কর্মক্ষেত্রের মান উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করা সংস্থা ‘সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি’ (এসআরএস) পরিচালিত ঢাকা উদ্যান এলাকার একটা ‘উইমেন ক্যাফে’-তে বসে তিনি বলেন, ‘চাকরি হারাতে হবে বলে দীর্ঘদিন মা হওয়ার স্বপ্ন বুকে চেপে রেখেছি।’ ক্যাফেতে প্রশিক্ষণে এসে শ্রম আইনে মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার সম্পর্কে জেনে খুশি হন লিপি। সিদ্ধান্ত নেন কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবেন। ক্যাফে এ ক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়ায়। আইনি সহায়তাদানকারী হাসিনা খানম ছুটির আবেদন প্রস্তুত করতে লিপিকে সহায়তা করেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ লিপিকে কেবল বিনা বেতনে ছুটি দিতে রাজি হয়।

ঢাকা উদ্যানের একটি কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন রোকসানা (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, কর্তৃপক্ষের লোকজন হঠাৎ তাঁকে ডেকে চাকরি ছাড়তে বলেন। একটি সাদা কাগজে রোকসানাকে স্বাক্ষর করিয়ে বিদায় দেওয়া হয়। রোকসানা বেগম আইনি অধিকার পাওয়ার জন্য উইমেন ক্যাফেতে আসেন। ক্যাফে ম্যানেজার তাঁকে কিছু ধারণা দিলেন। এখানে অনেক নারী শ্রমিক আছেন, যাঁরা কারখানায় কাজ করে নিজেদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করেন।

বলা বাহুল্য, আমাদের শিল্প খাতের সবটাই নেতিবাচক নয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে জানা গেল, পৃথিবীর সবচেয়ে পরিবেশসম্মত পোশাক কারখানাটি বাংলাদেশে রয়েছে এবং এই তালিকার প্রথম ১০টির ৮টি এ দেশের। ইতিবাচক খবর বটে। কিন্তু ঢাকা উদ্যানের মতো দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ শ্রমিকের চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধানের বিবেচনায় এসব খবরের আনন্দ অনেকটাই মিলিয়ে যায়।

লেখক: শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংগঠক