৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দিন। লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করা এবং নারীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার ও সচেতন হওয়ার দিন সেটি। এ দিবসের সূচনা হয়েছিল শ্রমজীবী নারীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। ১৯০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক অমানবিক কাজের অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নেমে আসেন নিউইয়র্কের রাস্তায়। তাঁদের দাবি– কাজের সময় কমাতে হবে, বেতন বাড়াতে হবে, কাজের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া মার্কিন নারী অধিকারকর্মী ক্লারা লেমলিচ ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এর পরের বছর আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক পার্টি এই দিনটি ‘জাতীয় নারী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।

১৯১০ সালে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন এটিকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। ডেনমার্কে ১৭টি দেশ থেকে আসা ১০০ নারী কর্মীদের সম্মেলনে এই প্রস্তাব পাস হয়। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালিত হয়। জাতিসংঘের হিসাব মতে, সেদিন ১০ লাখ নারী-পুরুষ এই র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, নারীদের জন্য ভোটাধিকার, কর্মাধিকার, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও কর্মস্থলে লিঙ্গ-বৈষম্যের ইতি টানা।

১৯১১ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মার্চের বিভিন্ন দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার নারীরা ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রবল খাদ্যসংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে ‘রুটি ও শান্তি’ নামে আন্দোলনে নামেন। এর কয়েকদিন পরই জারের রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান হয় এবং পরে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর নারীদের ভোটাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করার চল শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এবারের প্রতিপাদ্য

এবার ৮ মার্চ ডিজিটাল বিশ্বকে নিরাপদ, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সংগত করার প্রত্যয় জানিয়ে ইউএন উইম্যানের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে– ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া উপস্থাপনায় জানায়, বহুবিধ বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে আমাদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ তৈরি করার সুযোগ রয়েছে– শুধু নারী ও মেয়েদের জন্য নয়, মানবিকতা ও বিশ্বের সকল জীবনের জন্য।