- ফিচার
- বাংলার ‘মাইকেল জ্যাকসন’
বাংলার ‘মাইকেল জ্যাকসন’

বিল্লাল জ্যাকসনের ঝালমুড়ির দোকান
খুলনা রেলস্টেশনের সামনে সাউন্ডবক্সে বাজছে মাইকেল জ্যাকসনের জনপ্রিয় গান। সেই গানের তালে তালে ড্যান্সের সঙ্গে ঘটি গরম চিড়া-চানাচুর ভাজা বিক্রি করছেন একজন। এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় খুলনার মো. বিল্লাল ব্যাপারীকে। ইতোমধ্যে মাইকেল জ্যাকসনের গানের সঙ্গে ড্যান্স করে ‘বাংলার মাইকেল জ্যাকসন’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তাঁকে ঘিরে থাকা লোকজন কেউ চিড়া ভাজা কিনে খাচ্ছেন আবার কেউ ড্যান্স উপভোগ করছেন। প্রতিদিন বিকেলে খুলনা রেলস্টেশন, ময়লাপোতা মোড়, গল্লামারী, শিববাড়ি মোড়, দৌলতপুরসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় তাঁকে।
মাইকেল জ্যাকসনের মতো গান গাইতে পারেন না, কিন্তু তাঁকে অনুকরণ করে ড্যান্স করতে পারেন। বিল্লাল ব্যাপারী জানান, বয়স যখন ১০ বছর, তখন থেকেই তিনি পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের ভক্ত। ওই সময় ভিসিআরে মাঝেমধ্যে মাইকেলের গান-ড্যান্স দেখতেন। পরে সিডিতে ও ডিশ লাইনে নিয়মিত দেখতেন। আর মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন তিনিও একদিন মাইকেলের মতো ড্যান্স করবেন। ধীরে ধীরে বাড়িতে মাইকেলের মতো ড্যান্স অনুকরণ শুরু করেন বিল্লাল।
নিজেই চর্চা করে মাইকেল জ্যাকসনের ড্যান্স অনুকরণ করে শিখে ফেলেন তিনি। ৭-৮ বছর ধরে নিয়মিত এই ড্যান্স করছেন। মাইকেল জ্যাকসনের মতো নেচে-গেয়ে তিনি চানাচুর ও চিড়া ভাজা বিক্রি করেন পথে-ঘাটে।
বিল্লাল ব্যাপারী জানান, চাকা লাগানো একটি বক্সে সাউন্ড বক্স, গানের প্লেয়ার, চিড়া-চানাচুর, ঘটি গরম, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, সরিষার তেল প্রভৃতি নিয়ে প্রতিদিন বিকেল ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এরপর রাত ১১টা পর্যন্ত পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে ড্যান্সের সঙ্গে ঘটি গরম চিড়া-চানাচুর ভাজা বিক্রি করেন। লোকজনের কাছ থেকে সাড়াও পান তিনি।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদে স্থান পেয়েছেন তিনি। ভিডিও করে ফেসবুক-ইউটিউবে তাঁর ড্যান্স আপলোড করেছেন অনেকে। এ ছাড়া তাঁর নিজেরও রয়েছে ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল। সেখানে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন। দর্শকদের সাড়াও মেলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। চানাচুর কেনার চেয়ে লোকজন বিনোদনের জন্যই ভিড় করে বেশি। বিল্লাল ব্যাপারী জানান, খুলনায় পিকনিক, গায়ে হলুদ, পারিবারিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে তাঁর। সেখানে গিয়ে দর্শকের মনোরঞ্জন করেন তিনি। খুলনার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকেও লোকজন নিয়ে যায় তাঁকে।
নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহসান হাবিব। হাবিব জানান, এর আগে তিনি ফেসবুকে বাংলার মাইকেল জ্যাকসনের ভিডিও দেখেছেন। এই প্রথমবার সরাসরি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
ট্রেনে রাজশাহী যাওয়ার জন্য খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা থেকে খুলনা রেলস্টেশনে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী। স্টেশনের সামনে বিল্লালের ড্যান্স দেখে থমকে যান তাঁরা। কিছু সময় ড্যান্স দেখার পর তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তাঁরা এর আগে কখনও বিল্লালের ড্যান্স দেখেননি। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন মাইকেল জ্যাকসনই ড্যান্স করছেন।
খুলনা রেলস্টেশনের কর্মচারী নয়ন মোল্লা বলেন, ‘আমি সপ্তাহে ৩-৪ দিন বিল্লালের ড্যান্স দেখি। বিল্লাল কোথাও চানাচুর বিক্রি করতে গেলে সেখানে মানুষের জটলা তৈরি হয়। অভাব-অনটনের মধ্যেও রাস্তায় হাসিমুখে নেচে যাচ্ছেন তিনি। আগে একটি পাট গোডাউনে সিকিউরিটি গার্ডের খণ্ডকালীন চাকরি করলেও, তাও এখন নেই।’
বিল্লাল নগরীর দৌলতপুর কল্পতরু মার্কেট সড়কের একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন। তাঁর ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে আর মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। চানাচুর বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিল্লাল। তারপরও দমে যাননি তিনি। বিল্লাল বলেন, ‘ভালো লাগে যখন ড্যান্স দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়ে হাততালি দেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন মাইকেল ভাই বলে ডাক দেন।’ তাঁর ড্যান্স দেখে লোকজন প্রয়াত পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনকে স্মরণ করেন– বিল্লালের কাছে এটি একটি বড় পাওয়া। মাইকেল জ্যাকসন তাঁর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আমৃত্যু।
মন্তব্য করুন