
বাবা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে যান। আর আমি ঘুমাই। আসলে বাবা চলে যাওয়ার জন্য আমি ঘুমের ভান করি। বাবা চলে গেলেই আনমনে কতো কী ভাবি!
কিন্তু বেশ কিছু দিন হলো, আমি কিছুই ভাবতে পারি না। বাবা চলে যেতেই রুমটা কেমন অন্ধকার হয়ে আসে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে। একেবারে শীতের রাতের মতো। আমি উঠে যে ফ্যানটা বন্ধ করে দেবো, সেই সাহসটাও পাই না।
বাবাকেও ডাকতে পারি না। কারণ বাবা জানে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। আমার ফোনও নেই যে ছোট চাচ্চুকে ফোন দেবো। চাচ্চু ভূত তাড়ানোর অনেক মন্ত্র জানে। একেক ভূতের একেক মন্ত্র। আমার মনে থাকে না মন্ত্রগুলো। তবে অনেক মজার। চাচ্চু বলে, ভূতমন্ত্র। আমাকে মাঝেমধ্যে ফোনে শোনায় ভূতমন্ত্র।
তো সেদিন রাতে আমি ভূতমন্ত্র মনে করতে চাইছি। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না মন্ত্র। হঠাৎ আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে কে যেন বলে, ‘আমি ভূত। ভয় পেয়ো না। আমি বাচ্চা ভূত। এখনও ভয় দেখাতে শিখিনি। তুমি বাপু বেশি জোরে চিৎকার দিলে কিন্তু আমি নিজেই ভয় পেয়ে যাবো। ভয় পেলে আবার আমার কাপড় ভিজে যায়!’
বলি, ছি ছি ছি! তোমার তো দেখি লজ্জা-শরম কিচ্ছু নেই। কেউ এমন পচা কথা বলে?
ভূতের বাচ্চাটা তখন পুনপুন করে কেঁদে ওঠে। আমি তো অবাক হয়ে যাই। তাকে ভালো করে দেখিও না যে গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে তাকে সান্ত্বনা দেবো। কী করি যখন ভাবছি, তখন বাচ্চা ভূতটাই বলে, ‘তুমি একেবারে আমার বন্ধু ভুনভুনিয়ার মতো। সে আমাকে শুধু ভয় লাগাতে চায়। শুধুই আমাকে কান্না করায়।’
বললাম, স্যরি বাচ্চা ভূত, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তো তোমাকে ভয় লাগাতে চাইনি। কান্নাকাটিও করাতে চাইনি। তুমি যদি আমার ছোট বোন নুসাইবার মতো অমন পুনপুন করে কথায় কথায় কেঁদে দাও, তবে তো তোমার সঙ্গে কথাই বলতে পারবো না।
বাচ্চা ভূতটা তখন কান্না বন্ধ করে আমার গায়ের পাশে এসে বসে। তখন আমি তাকে স্পষ্ট দেখতে পাই। ভূতটার জন্য খুব মায়া হয়। এরপর থেকে প্রায়ই বাচ্চা ভূতটা আসে। আমার সঙ্গে গল্প করে। আমি তেমন কথা বলি না। সে-ই বলে। কিছু বললে যদি ফের পুনপুন শুরু করে?
দ্বিতীয় শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বেইলি রোড, ঢাকা
বিষয় : গপ্পো জুনায়রা রহমান জারা
মন্তব্য করুন