- ফিচার
- ৫ বছরে ৩ হাজার আউটলেট চালুর পরিকল্পনা স্বপ্নের
সাক্ষাৎকার
৫ বছরে ৩ হাজার আউটলেট চালুর পরিকল্পনা স্বপ্নের

সাব্বির হাসান নাসির , নির্বাহী পরিচালক, এসিআই লজিস্টিকস
সমকাল : কভিডের দুই বছর স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সুপারশপে বিক্রি বেড়েছিল। কভিডের পর কী অবস্থা?
সাব্বির হাসান নাসির : ওই সময় স্বপ্নের বিক্রির প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ শতাংশ। এখন তার চেয়ে আরও বেড়েছে। বর্তমানে স্বপ্নের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশের বেশি। আমার জানা মতে, সুপারমার্কেট খাতে এখন প্রবৃদ্ধি ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।
সমকাল : প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল অনুঘটক কী কী?
সাব্বির হাসান নাসির : অনেক কারণ রয়েছে। মানুষ সময় বাঁচানোর জন্য এ ধরনের শপে যান। সুপারশপে একই স্থানে সব পণ্য পাওয়া যায়। সময় মতো ও প্রয়োজনীয় পণ্যে ক্রেতারা বিভিন্ন অফার পেয়ে থাকেন। এ কারণে ক্রেতারা সুপারমার্কেটের প্রতি আগ্রহী হন। পণ্যের দামও নির্ধারণ করা থাকে। কোনো দর কষাকষির প্রয়োজন হয় না। পণ্যের মানও থাকে উন্নত। ক্রেতারা সুপারশপকে বেশি নিরাপদ ও স্বস্তিকারক মনে করেন।
সমকাল : স্বপ্ন সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। কোন পরিস্থিতি আপনাদের এমন পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ দিচ্ছে?
সাব্বির হাসান নাসির : ২০১৫ সাল থেকে স্বপ্ন নাম্বার ওয়ান সুপারমার্কেট ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। ২০১৮, ’১৯ ও ’২০ সালে সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে টানা চারবার ‘স্বপ্ন’ দেশের প্রথম ১০টি ব্র্যান্ডের একটি। ব্র্যান্ড হিসেবে ‘স্বপ্ন’ শক্ত অবস্থানে এসেছে। আমরা নতুন করে ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি’ মডেল দাঁড় করিয়েছি। এ মডেলে ছোট বিনিয়োগকারীরা স্বপ্নের সঙ্গে কাজ করে। স্বপ্নের ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে তাদের বিক্রি ও প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।
সমকাল : ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলে কি মালিকানা ভাগাভাগি আছে?
সাব্বির হাসান নাসির : যিনি স্বপ্নের ব্র্যান্ড ব্যবহার করে ব্যবসা করতে চান, তিনি নিজে দোকান বা অবকাঠামো নেন। বিনিয়োগও করেন। স্বপ্ন পণ্য মজুতের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে এবং আউটলেটটি পরিচালনায় সহায়তা করে। ফলে স্বপ্নের ব্র্যান্ড, পণ্য ও পরিচালন কৌশলে ওই দোকানেই আগের চেয়ে বিক্রি বেড়ে যায়। মুনাফাও বাড়ে।
সমকাল : স্বপ্নের কতগুলো আউটলেট রয়েছে?
সাব্বির হাসান নাসির : বর্তমানে স্বপ্নের ৩০৫টি আউটলেট আছে। এর মধ্যে স্বপ্নের নিজস্ব ৭৩টি। বাকিগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে যে হারে বাড়ছে, তাতে চলতি বছর শেষে ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশের ৫২টি জেলায় স্বপ্নের আউটলেট আছে, যা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সারাদেশে অন্তত তিন হাজার আউটলেট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে স্বপ্নের এবং এটি সম্ভব হবে বলে মনে করি।
সমকাল : বাজেটে কী ধরনের সহায়তা দিলে এ খাতের উন্নতি হবে বলে মনে করেন?
সাব্বির হাসান নাসির : সাধারণ মার্কেট এবং সুপারমার্কেটে বড় ধরনের নীতিগত বৈষম্য রয়েছে। যেমন ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে বেশি বৈষম্য। সুপারশপে ৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হয় ক্রেতাকে। এ কারণে সুপারশপগুলোকে পণ্যে ছাড় দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণ করতে হয়। কিন্তু সাধারণ মার্কেটে এ ভ্যাট দিতে হয় না। সরকার বাজারে শৃঙ্খলা আনতে চায়, বাজার শৃঙ্খলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক রিটেইল খাতের বিকল্প নেই। সুপারমার্কেট এবং সাধারণ বাজারকে একই কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। সুপারমার্কেট খাতে সরকারকে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। প্রচুর পতিত জমি আছে বিভিন্ন জেলায়। সেসব জায়গায় সুপারশপগুলোকে গুদাম করার সুযোগ দিলে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে সংরক্ষণ করা যাবে।
সমকাল : স্বপ্নের অগ্রগতির পেছনে কী কী কারণ রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
সাব্বির হাসান নাসির : স্বপ্ন সব শ্রেণির ক্রেতার জন্য উপযুক্ত কেনাকাটার স্থান। সবার কথা বিবেচনা করেই আউটলেটে পণ্যের দাম ঠিক করা হয় । তাছাড়া স্বপ্ন মোটামুটি মধ্যবিত্তদের চাহিদা বুঝে। এ কারণে পণ্যের বিক্রি বাড়ছে। যেসব কৃষক পণ্য বিক্রি করতে পারেন না, স্বপ্ন সেখানে গিয়ে পণ্য কিনে নিয়ে আসে। তাছাড়া অনেক সামাজিক কাজে স্বপ্ন নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে। এগুলো স্বপ্নের ব্র্যান্ডকে আরও শক্তিশালী করছে। এ কারণে স্বপ্ন দ্রুত এক নম্বর অবস্থানে চলে এসেছে।
সমকাল : দীর্ঘ এ পথ চলার পর স্বপ্ন কি মুনাফায় এসেছে?
সাব্বির হাসান নাসির : আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। প্রথম দিকে সে তুলনায় রিটার্ন আসেনি। এখন অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে। ২০২২ সালে স্বপ্ন পরিচালন মুনাফা করেছে। বড় অঙ্কের পূঞ্জীভূত লোকসান ছিল, যা কাটিয়ে উঠে পুরোপুরিভাবে নিট মুনাফায় ফিরতে আরও দুই-তিন বছর সময় লাগবে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল
মন্তব্য করুন