সমকাল: সুপারশপ ব্যবসায় প্রায় এক দশক পার করল ইউনিমার্ট। অভিজ্ঞতা কেমন?

মুরতজা জামান: এক কথায় অভিজ্ঞতা ভালো। আপনারা জানেন, ইউনিমার্ট ইউনাইটেড গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। কাজের মান দিয়ে গ্রুপটি ৪৫ বছরে সবার বিশ্বাস ও সুনাম অর্জন করেছে। ফলে মানের প্রতি আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল। ২০১৩ সালে যখন সুপারশপ ব্যবসার কথা উঠল, তখন মান ঠিক রেখে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করা যাবে কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ ও সংশয়ের কারণে জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ব এতে প্রথমে রাজি ছিলেন না। তবে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব থেকে বলা হয়েছিল, এখানে মাননিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসার সুযোগ আছে। তারপর ব্যবসার শুরু। শুরুর সময় যে শংকাটা ছিল সেটিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। মানের প্রশ্নে আমরা আপসহীন।

সমকাল: কী করে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করেন?

মুরতজা জামান: পণ্যের সরবরাহকারী ঠিক করার আগে তার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করি। এরপর তার পণ্যের গুণগত মান, পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা সরেজমিনে যাচাই করি। এমনকি প্রতিবার পণ্য গ্রহণের সময় মান যাচাই হয়। মাঝেমধ্যে আকস্মিকভাবে সরবরাহকারীর উৎপাদন ব্যবস্থা ও গুদাম পরিদর্শন করি। এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের মতামতও নিই। গুদাম ঠিক না থাকার কারণে অনেক সরবরাহকারীকে তালিকাভুক্ত করা হয় না। আবার মেয়াদ ও মান নিশ্চিত হয়েই বিদেশি পণ্য আমদানি করা হয়।

সমকাল: ইউনিমার্ট জনপ্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে আর কী বিষয় প্রভাবকের কাজ করেছে?

মুরতজা জামান: স্পেস। আমরা যখন যাত্রা শুরু করি, তখন সুপারশপ ছিল পাঁচ থেকে ছয় হাজার স্কয়ার ফিটের স্পেসের মধ্যে। আর গুলশান-২ এর আউটলেটটির যাত্রা শুরু ৪০ হাজার স্কয়ার ফিটের জায়গা নিয়ে। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের জন্য আলাদা বিশাল তাক। দুটি তাকের মাঝে অনেক ফাঁকা। ক্রেতারা ট্রলি নিয়ে সহজে ও সময় নিয়ে পণ্য বাছাই করতে পারেন। পণ্যের মান, মেয়াদ ভালো করে দেখে নিতে পারেন। এখানে পার্কিং ব্যবস্থা ভালো। সবটা মিলে আরামদায়ক কেনাকাটার পরিবেশ আছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা টানছে মানের দিকটি। অনেক বাজারে মাংসে পানি দেওয়া হয়। ইউনিমার্টে তা নেই। সরবরাহকারীকে নির্দিষ্ট ধরনের গরু জবাই করতে হয়। যেখানে জবাই করা হয়, সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে। অফিসে বসে আমাদের কর্মীরা তা পর্যবেক্ষণ করেন। কখনও কখনও না জানিয়ে পরিদর্শন করি।

সমকাল: সামগ্রিকভাবে দুই দশকের সুপারশপ খাতের অভিজ্ঞতা কী?

মুরতজা জামান: অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ২০০১ সালের শুরু থেকে গত ২২ বছরের যাত্রার পর দেশের মোট খুচরা বাজারের মাত্র ২ শতাংশ সুপারশপের। এ হার ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড বা ফিলিপাইনেরও অনেক পেছনে। এখানে সুপারশপে কেনাকাটাকে আভিজাত্যের বিষয় ধরা হয়। তাই যদি হবে শ্রীলঙ্কায় বাজার শেয়ারের ৪৩ শতাংশের বেশি সুপারশপে কেন। কারণ ওখানে প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। এখানে সুপারশপের কেনাকাটা বড়লোকদের ব্যাপার বলে প্রথমে অতিরিক্ত দেড় শতাংশ পরে ৪ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। এখন আরও বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা পাশের দোকানে লাগে না। এভাবে সাধারণ ভোক্তাকে সুপারশপ থেকে দূরে রাখা হচ্ছে।

সমকাল: এ ব্যবসায় আর কী বাধা আছে?

মুরতজা জামান: বাংলাদেশে সুপারশপ স্থাপনে খরচ অনেক বেশি। বিশেষ করে জায়গা ভাড়া, আউটলেট সজ্জার সামগ্রী আমদানিতে শুল্ক অনেক বেশি। মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে। ফলে বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ ছাড়া কেউ এ ব্যবসায় নামতে পারছে না। আরেকটি সমস্যা হলো–দেশে সুপারশপ ব্যবসা কোন কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করবে তা এখনও সরকার থেকে নির্দিষ্ট করা হয়নি।

সমকাল: সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?

মুরতজা জামান: প্রথমত, অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে এ সম্পর্কিত সব ব্যবসার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’করা। দ্বিতীয়ত, জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতে সুপারশপ ব্যবসাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া। তৃতীয়ত, এ খাতের নজরদারির জন্য একটি বিশেষ সংস্থাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া দরকার। সামনে রোজার মাসে কখনও র‍্যাব, পুলিশ বা আর্মড ব্যাটালিয়ন বা বিজিবি আসবে। আবার কখনও জেলা প্রশাসক অফিস বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কখনও নিরাপদ খাদ্য বা বিএসটিআই আসবে। তারা প্রত্যেকে যখন আসে তখন ক্যামেরা নিয়ে আসে, ভিন্ন ভিন্ন গাইডলাইন নিয়ে আসে– মনে হয় যেন আমরা খলনায়ক। একটা সংস্থা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে সমস্যাগুলো দূর করা উচিত।

 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহীম