- ফিচার
- এক দেহে দুই ভাইরাস!
এক দেহে দুই ভাইরাস!

করোনা মহামারির তিন বছর পরেও কভিড-১৯ তরঙ্গের মতো ওঠানামা করছে। কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে। তবে সম্প্রতি নতুন কিছু প্রবণতা লক্ষ্য করছেন বিজ্ঞানীরা। পুরোনো একটি ভাইরাস, যার নাম রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)। এ ভাইরাসটি একটি নতুন শিরোনাম তৈরি করে নিজস্ব গতিতে ‘ট্রিপলডেমিক’ তৈরি করে। মহামারি পরবর্তী দুই শীতে এই পুরোনো শত্রু অর্থাৎ ভাইরাসগুলো অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।
মেমফিসের সেন্ট জুড চিলড্রেন’স রিসার্চ হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট রিচার্ড ওয়েবি বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি চুপ হয়ে আছে।’ এই ধরনের বিলুপ্তি একটি অতি বিরল ঘটনা হবে। রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাসের অণুজীব নাকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যেহেতু করোনা মহামারির সময় সবাই ঘরের ভেতরে অবস্থান করছিল এবং লকডাউনে ছিল তাই তাদের নাকের ভেতর দিয়ে কোনো অণুজীব প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে কেউ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। এর দ্বারা বোঝানো হয়, একটি নতুন ভাইরাস অন্য একটি ভাইরাসকে ব্লক করে দিতে পারে। গত কয়েক বছরের দিকে ফিরে তাকালে ওয়েবি দেখতে পান, করোনা অবশ্যই ফ্লু আর আরএসভি-কে ব্লক করতে পারে।
শরীরের ভেতরে একটি ভাইরাস হস্তক্ষেপ করার পর অন্য ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে না। যখন দুটি ভাইরাস হোস্ট কোষে প্রবেশের জন্য একই সংকেত ব্যবহার করে, যদি ভাইরাস ‘ক’ সেখানে প্রথমে পৌঁছে যায়, তাহলে ভাইরাস ‘খ’-এর প্রবেশ করার কোনো সুযোগ থাকবে না।
ভাইরাস হস্তক্ষেপের সর্বোত্তম বোধগম্য পদ্ধতিটি হলো ইন্টারফেরন নামক একটি প্রতিরক্ষামূলক অণু; যা মেরুদণ্ডীয় সব প্রাণীর কোষ দিয়ে তৈরি করা হয়। যখন একটি কোষ যে কোনো ভাইরাস অনুভব করে, তখন এটি ইন্টারফেরন তৈরি করতে শুরু করে এবং অনেক প্রতিরক্ষামূলক জিন সক্রিয় করে। এই জিনগুলো কিছু কোষের অভ্যন্তরে বা এর সীমানায় কাজ করে, যেখানে তারা উপস্থিত ভাইরাসগুলোকে কোষের প্রতিলিপি বা প্রস্থান করতে বাধা দেয়। যখন দ্বিতীয় ভাইরাসটি কোষে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তখন কোষের ইন্টারফেরন সজাগ হয়ে যায় এবং কোষকে সতর্ক করে দেয়। ফলে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে না।
ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের ইমিউনোলজিস্ট এলেন ফক্সম্যান প্রকৃত মানুষের শ্বাসনালি কোষ থেকে তৈরি ল্যাবরেটরির টিস্যুতে ভাইরাল মিথস্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। একটি পরীক্ষায় তিনি সোয়াইন ফ্লু এবং রাইনোভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেন। ফক্সম্যান এবং তার সহ-গবেষক আঞ্চি উ ভ্যালিয়া ও মেরি ল্যান্ড্রি প্রথমে রাইনোভাইরাস এবং তারপর সোয়াইন ফ্লু দিয়ে মানুষের টিস্যুকে সংক্রামিত করেছিলেন, তখন ইন্টারফেরন ফ্লুকে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। অনুরূপ গবেষণায় ফক্সম্যান দেখেছেন, কভিড সংক্রমণের পর রাইনোভাইরাসের হস্তক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এখনও সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি যে, সবসময় এক ভাইরাস অন্য ভাইরাসকে আটকে দেবে। ইন্টারফেরন সবসময় উপকারী নয়। তা কখনও কখনও এটি মানুষকে সংক্রমণের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। একটি বড় উদাহরণ হলো, ফ্লু মানুষকে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।
মন্তব্য করুন