বলিউড এখন রানীময়। আর হবে নাইবা কেন, ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই রানীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা বলিউড। ছবিতে রানীর দুর্দান্ত অভিনয় দেখে মুগ্ধ বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। তাই তো ছবি দেখার পরই টুইটে রানীকে উদ্দেশ করে শাহরুখ লিখেছেন, ‘একেবারে রানীর মতোই উজ্জ্বল তুমি। হলো তোমার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। পুরো টিম দারুণ কাজ করেছে। পরিচালক এক মায়ের লড়াইকে দারুণভাবে তুলে ধরেছেন। এই ছবি একেবারেই মাস্ট ওয়াচ।’ শাহরুখ যে রানীকে নিয়ে যথার্থ বলেছেন তা ছবিটি দেখলেই বোঝা যাবে। 

‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল রানী সবটা উজাড় করে দিয়েছেন। অসীমা ছিব্বর পরিচালিত এই সিনেমা নির্মিত হয়েছে সাগরিকা ভট্টাচার্যের জীবন নিয়ে। ২০১২ সালে সাগরিকা নরওয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নিজের সন্তানের হেফাজত নিয়ে আইনি লড়াই শুরু করেছিলেন; যা সেই সময় দারুণ আলোচিত হয়। এরপর সেই সাগরিকা নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছিলেন একটি বই। সেই বইয়ের ওপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়েছে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। যদিও সিনেমায় সাগরিকা চরিত্রের নাম হয়েছে দেবিকা। 

এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রানী মুখার্জি। অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনয় করেছেন দেবিকার স্বামী অনিরুদ্ধ চ্যাটার্জির চরিত্রে। ছবির শুরুতেই দেখা যায় দেবিকা-অনিরুদ্ধর সন্তান শুভ এবং সুচিকে তুলে নিয়ে যায় নরওয়ের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সংস্থা। হলুদ ঢাকাই শাড়ি পরে প্রায় খালি পায়ে রানীর দৌড় নরওয়ের রাস্তায়। ছবির গল্প যত এগোয় খানিক ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায় দেবিকা-অনিরুদ্ধর সংসারের নানা টুকরো ছবি। আর পাঁচটা বাঙালি পরিবারের মতোই দেবিকা নতুন বাড়ি আর বাচ্চা সামলাতে হিমশিম; অন্যদিকে অনিরুদ্ধ ব্যস্ত তার অফিসের কাজ নিয়ে। এরই মধ্যে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসারদের রেগুলার ভিজিট। তাদের চোখে অনেক কিছুই বিচ্যুতি মনে হয়।

বাচ্চাকে নিজ হাতে খাওয়ানো, কপালে কালো টিপ এঁকে দেওয়া, বাচ্চাদের মা-বাবার সঙ্গে শোয়া কিংবা অনিরুদ্ধ সংসারের কাজে খুব একটা সাহায্য না করা। এরই মধ্যে দেখা যায় দেবিকাকে চড় মারে অনিরুদ্ধ, পাল্টা দেবিকাও হাত তোলে তার ওপর। বোঝা যায় কিছুতেই হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয় দেবিকা। অন্যদিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসারদের চরিত্র এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন তারা বসেই আছে একটা সুযোগের জন্য। মা-বাবা ভুল করলেই তারা বাচ্চা নিয়ে দৌড় দেবে। ছবিতে তারা যে ভিলেন সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয় তাদের নিজেদের মধ্যে শয়তানি দৃষ্টি বিনিময়ের দৃশ্যে। ঠিক যেন মেগা সিরিয়ালের কুচক্রী ননদ! যাই হোক একদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে আছে দেবিকা আর অন্যদিকে সাবধানী অনিরুদ্ধ, কারণ নিজের পার্মানেন্ট ভিসার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না।

‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রানী মুখার্জির ছবি। একজন মা যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তখন সিনেমায় আর কোনো কিছু গুরুত্ব পায় না। রানী এই চরিত্রে তাঁর সর্বস্ব দিয়ে অভিনয় করেছেন। তাঁর জন্যই এই ছবি দেখা যায়। ফলে বলা যায় দীর্ঘ বিরতির পর রানীর প্রত্যাবর্তন একেবারেই রাজকীয়ভাবেই হলো।