- ফিচার
- আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি
সাক্ষাৎকার
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি

এসবিএসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর হমান
এসবিএসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর হমান। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি।
সমকাল: দশ বছর পূর্ণ করছে এসবিএসি ব্যাংক। এ সময়ে আপনাদের অর্জন নিয়ে কিছু বলুন।
হাবিবুর রহমান: ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে এসবিএসি ব্যাংক বিভিন্ন সূচকে প্রথম দুটির মধ্যে নিজের অবস্থান করতে পেরেছে। এটি সম্ভব হয়েছে গ্রাহকের আস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা পর্ষদের পরামর্শের কারণে। ২০২২ সাল শেষে এসবিএসি ব্যাংকের মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় যা ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। এ সময়ে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণ ও বিনিয়োগের পরিমাণ ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ঋণ আমানত অনুপাত রয়েছে নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে। গত বছর শেষে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৮১৬ কোটি টাকা। মূলধন পর্যাপ্ততার হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি প্রমাণ করে। সারাদেশে ব্যাংকের ৮৮টি শাখা, ২৫টি উপশাখা এবং ২০টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি এসবিএসি ইসলামী ব্যাংকিং নামে ১০টি শাখায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হয়। ৪ লাখের বেশি গ্রাহক আমাদের। ডেবিট কার্ড গ্রাহক ৭০ হাজার এবং ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ১০ হাজারের মতো।
সমকাল: নতুন ব্যাংকগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যে আশানুরূপ অগ্রগতি করতে পারছে না বলে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে আপনাদের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন?
হাবিবুর রহমান: করোনাভাইরাসের প্রভাব পরবর্তী অর্থনীতি যখনই দ্রুত এগোচ্ছিল, এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে কিছু ক্ষেত্রে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে জিনিসের দর বেড়ে পুরো অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেও সাউথ বাংলা ব্যাংক ভালো করছে। ঋণ বিতরণের পাশাপাশি নন-ফান্ডেড কমিশনভিত্তিক বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাংকটির প্রসার ঘটছে। গত বছরে এসবিএসি ব্যাংকের রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৪৬ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংকটির মাধ্যমে রপ্তানি বেড়েছে ১০৭ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের বড় একটি অংশ এখন জ্বালানি, সার, কৃষি সরঞ্জাম আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ডলারের দর ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয়তো আমদানিতে কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে অর্থনীতি চালু রাখতে মূল ভূমিকা রাখে ব্যাংক। সে দায়বোধ থেকে এসবিএসি ব্যাংকের কার্যক্রম সাজানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বড় লক্ষ্য না নিয়ে আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে।
সমকাল: এ সময় আপনারা কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকিং করছেন?
হাবিবুর রহমান: এসবিএসি ব্যাংক গ্রাহকের প্রয়োজনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকিং করে। এ সময় যেন বিদেশে পরিশোধে যাতে ব্যর্থ না হই এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সব ধরনের নিয়মের মধ্যে থাকা যায়, সেদিকে জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো থাকায় কোনো ধরনের পরিশোধে বেগ পেতে হয়নি। কোনো সূচক ব্যাপক উঠানামা করেনি। এর মানে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমরা নির্ধারিতভাবে এসএমই বা করপোরেট ফোকাস নই। আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি।
সমকাল: বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের করণীয় নিয়ে কিছু বলুন?
হাবিবুর রহমান: এ সময়ে কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা না নিয়ে সূচকের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করা উচিত। কোনো ব্যাংকের মুনাফা কমে যাওয়া মানে কিন্তু লোকসান নয়। সুতরাং পরিস্থিতি বুঝেই ব্যাংকিং করতে হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে। ফলে প্রয়োজন হলে ঋণ কমাতে হবে। সবার আগে আস্থার বিষয়টি দেখা উচিত। ঋণ যেন আর খারাপ না হয়, খারাপ ঋণ আদায়ে জোর দেওয়া এবং ভালো সেবা দেওয়া– এসব বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত। তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা বাড়ানোর মাধ্যমে কম খরচে অনেক মানুষকে সেবা দিতে হবে।
সমকাল: ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর পরিচালনা পর্ষদের কোনো হস্তক্ষেপ আছে কিনা?
হাবিবুর রহমান: একটি ব্যাংকের আস্থার ওপর আঘাত করে এমন কোনো ঋণ অনিয়ম দায়িত্ব নেওয়ার গত ৯ মাসে আমি দেখিনি। ব্যাংক পরিচালনার বিভিন্ন বিষয়ে পর্ষদ হয়তো মতামত দেয়। তবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়।
মন্তব্য করুন