- ফিচার
- বর্ণিল পোশাকে
বর্ণিল পোশাকে

দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি তরুণীদের মধ্যে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরার প্রচলন দিনকে দিন বাড়ছে। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার ও নানা কারণে ফ্যাশনে আসছে নতুন মাত্রা। লিখেছেন নাইস নূর।
ঈদ মানেই নতুন পোশাক। ঈদ মানেই চারদিকে খুশির বার্তা। সেই খুশিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেও নতুন পোশাক ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। ইন্টারনেট যুগে পোশাক নিয়ে বদলেছে তরুণ-তরুণীর রুচিও। মোবাইল ব্রাউজিং করলেই দেখা যায় নানা রঙের ও নানা ঢঙের পশ্চিমা পোশাক। চাইলে আবার সে পোশাক কেনাও সম্ভব হয় না। দেশের তরুণ-তরুণীদের পছন্দের কথা ভেবে সম্পূর্ণ পশ্চিমা ধাঁচে সারা লাইফস্টাইলের ওয়েস্টার্ন সাব-ব্র্যান্ড ‘ঢেউ’ এবার নিয়ে এসেছে ঈদ পোশাকের বাহারি সংগ্রহ। ‘ঢেউ’ ছাড়াও টুয়েলভ ক্লদিং, লা রিভ, জেন্টেল পার্ক, সেইলরসহ বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক নিয়ে এসেছে।
ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বৈশ্বিক ট্রেন্ডি পোশাককে। কথায় কথায় এমনটিই জানিয়েছেন সারা লাইফস্টাইলের ফ্যাশন ডিজাইনার মোহাম্মদ শামীম রহমান।
নারীদের ঢেউয়ের পোশাক কালেকশনে থাকছে ওয়েস্টার্ন শর্ট ও অফ শোল্ডার শার্ট। এ ছাড়া নারীদের জন্য থাকছে– ফ্যাশন টপস, মিডি, শর্ট টপস, টু পিস, লেডিস বাটন প্যান্ট, বডিকন, অফ শোল্ডার টপস, স্লিট গাউন, নরমাল গাউন, স্কার্ট, কাফতান, ক্রপ টপ ও ব্লেজার।
ডিজাইনার মোহাম্মদ শামীম রহমান বলেন, ‘ডিজাইনে আমরা যে শুধু পশ্চিমা কার্টিং ব্যবহার করেছি তা নয়। বাংলাদেশি পোশাক যেমন হয়, তার মিশেলে ওয়ের্স্টান লুক আনার চেষ্টা করেছি আমরা। ডিজাইনগুলো এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে পোশাকগুলো পরলে নারীদের অনেক সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী লাগে।’
তিনি বলেন, ‘পোশাক তৈরির জন্য বিদেশ থেকে উন্নত মানের ফ্রেবিক আনা হয়েছে। তাই পোশাকের ডিজাইনের পাশাপাশি এর গুণগত মানও হয়েছে উন্নত।’
এখন ঈদের আনন্দ একদিনে সীমাবদ্ধ নেই। চাঁদ রাত থেকে শুরু করে টানা সাত দিন পর্যন্ত চলে ঈদ উৎসব। ফ্যাশনসচেতন নারীরা তাই পোশাকে দিয়ে থাকেন বিশেষ গুরুত্ব। যেমন ঘরে কী পোশাক পরবেন, বন্ধুর কিংবা আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে গেলে কী ধরনের পোশাক হবে, দিনে কিংবা রাতের বেলা কী ধরনের পোশাক হবে এই নিয়েও থাকে তাদের নানা পরিকল্পনা।
তবে ‘ঢেউ’-এর কালেকশনে এসব সমস্যার সমাধান একদম পাওয়া যাবে। ঈদের দিন বাসায় ঢিলেঢালা টি-শার্ট, টপস, লং স্কার্ট পরতে পারবেন। রাতের পার্টিতে শার্ট কিংবা আরামদায়ক কাফতান পরা যাবে অনায়াসে। পোশাকগুলো পরার জন্য বেছে নিতে পারেন বাটন, ডেনিম কিংবা পেনসিল কার্টের ফরমাল প্যান্ট।
এবার অনেকে দ্বিধায় আছেন কী রঙের পোশাক পরবেন? যেহেতু এখন আবহাওয়া গরম। তাই হালকা রঙের পোশাকই হবে মানানসই। সাদা-কালো, ধূসর রঙের পোশাক দিনের বেলা পরতে পারেন। রাতের জন্য নীল, কালো, হলুদ রঙের পোশাক পরা যাবে। আর এসব রংকেই প্রাধান্য দিয়েছে ‘ঢেউ’।
ঢেউ তো বটে, সারার ঈদ কালেকশনেও এবার থাকছে চমক। ‘মোগল’ থিম নিয়ে এবার তারা পোশাক নিয়ে এসেছে। মোগল সময়কাল এবং আধুনিকতার মিশেলে তাঁরা এনেছে এসব পোশাক। মোটিফ হিসেবে থাকছে স্ক্রিন প্রিন্ট, কারচুপি, ডিজিটাল প্রিন্ট, এমব্রয়ডারির কাজ, জিওমেট্রিক, ট্র্যাডিশনাল, ফ্লোরাল। আনারকলি, সিঙ্গেল পিস কামিজ, লন থ্রিপিস, আনইস্টিচ লন, ফ্যাশন টপস, কাফতান, শাড়ি, এথনিক কুর্তি। এ ছাড়াও ডেনিমের কালেকশন রয়েছে। সব পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে– কটন, শার্টিন, ভিসকস, নেট, ডেনিম টুইল ফেব্রিক্স, ডবি কটন, জ্যাকার্ড কটন, জর্জেট ও সিল্ক। পোশাকের রঙের দিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রয়েল ব্লু, মেরুন, লাল, কালো, আকাশি এবং নেভি ব্লু। সারাতেই রয়েছে কাপল পোশাক, ফ্যামিলি কালেকশন পোশাকও। শিশুদের জন্যও রয়েছে সারার জমকালো আয়োজন। মেয়েশিশুদের জন্য সারা নিয়ে এসেছে– সারারা, ঘারারা, ফ্রক, পার্টি ফ্রক, থ্রিপিস, জাম্প সুট, ফ্যাশন টপস, নিমা সেট, টপ বটম সেট। ছেলেশিশুদের জন্য রয়েছে– কাতুয়া, বয়েজ কার্গো, পাঞ্জাবি, লং ও শর্ট স্লিভ শার্ট, পোলো টি শার্ট, ফ্যাশনেবল শার্ট-প্যান্ট সেট।
ঈদ উপলক্ষে এথনিক এবং ওয়েস্টার্ন পোশাক নিয়ে এসেছে ‘টুয়েলভ ক্লদিং’। তারা এই সংগ্রহের নাম দিয়েছে ‘রয়্যাল ডেলিকেসি’। এবার পোশাকের ডিজাইনের মধ্যে রাজকীয় স্টাইলিশ ঢং পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার শুভাগত ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, ‘তরুণ-তরুণীরা এখন পশ্চিমা পোশাক পছন্দ করে বেশি। এই ইয়াং ক্রাউডটাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা কিছু পোশাক পশ্চিমা ধাঁচে ফিউশন করেছি। শুধু পশ্চিমা পোশাক নয়, আমাদের এথনিক কালেকশনও রয়েছে।’
অনলাইনের যুগে প্রতিযোগিতা অনেক। এ বিষয়টা মাথায় রেখেই ডিজাইনে এবার মনোযোগী হয়েছেন শুভাগত ভট্টাচার্য্য। বললেন, ‘এখন তো অনেক ব্র্যান্ড। আবার অনলাইনেও পোশাক বিক্রি হচ্ছে অনেক। তাই প্রতিযোগিতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারী, পুরুষ ও কিডস– এই তিন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রিট, এমব্রয়ডারি ও কারচুপির সংমিশ্রণে পোশাকের ডিজাইনগুলো আমরা করেছি।’
পশ্চিমা ধাঁচের স্কার্ট, টপস ও অন্যান্য পোশাকেও রয়েছে নতুন নকশা। কাটছাঁটে আছে ভিন্নতা। মোট কথা ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ওয়েস্টার্ন কালেকশনের ক্ষেত্রে ছেলেদের পোলো টি-শার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট, জিন্সসহ স্টাইলিশ সব পোশাক রয়েছে। মেয়েদের পোশাকেও ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের টপস, টিউনিক, জিন্সের কালেকশন দিয়ে নিজেদের মেলে ধরেছে টুয়েলভ। যেহেতু এখন গরম। এই আবহাওয়ার কথা ভেবেই টুয়েলভ এবার পোশাকের রং উজ্জ্বল রেখেছে। নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা– এই রঙের পোশাকগুলো বেশি দেখা যাবে।
ট্রেন্ডি, বর্ণিল ও নজরকাড়া সব ডিজাইনে এবার পোশাক এনেছে লা রিভ। এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘আমরা ঈদে নতুন নতুন থিম নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। এই ঈদের কালেকশন থিমের নাম আমরা দিয়েছি রিলিজ।’
এবার উজ্জ্বল কমলা বা জুসি অরেঞ্জকে প্রধান কালার ধরে অন্যান্য শেডগুলো লা রিভের পোশাকে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া উজ্জ্বল সবুজ, আকাশি ও গাড় নীল, লাল, বাদামি, কমলা, হলুদ, কালো, মেরুন, অলিভ গ্রিন, পার্পল, টিল, অনিয়ন ও পিংক ও প্যাস্টেল শেড দেখা যাবে এবার।
ঈদের আমেজকে মাথায় রেখে সিল্ক, হাফসিল্ক, মসলিন, অরগাঞ্জা, ক্রেপ, সাটিন, জ্যাকার্ড, মার্সেরাইজড কটন, ভিসকস, ইন্ডি ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটি কটন দিয়ে লা রিভের পোশাক এবার ডিজাইন করা হয়েছে।
সাজ ও অনুষঙ্গ: লং, মিড লং স্কার্টের সঙ্গে টপস, ক্রপটপ পরলে হালকা মেকআপের সঙ্গে চুল খোলা রাখলে মানায়। ফ্রক স্টাইলের জামা, শার্ট ইত্যাদির সঙ্গে ফ্রেঞ্চ বেণি করা যেতে পারে। সামনের দিকের কিছু চুল কার্ল করে পেছনের দিকে ছেড়ে রাখলেও মানিয়ে যাবে। গহনা হিসেবে পরা যেতে মেটাল, অক্সিডাইজ, তামা কিংবা রুপার গহনা। গলায় ভারী গহনা পরলে কানের জন্য ছোট টপস বাছাই করা যেতে পারে। হাতে জরিয়ে নিতে পারেন ব্রেসলেট। পশ্চিমা টপস ও জিন্সের সঙ্গে হাতে স্ক্রানচিজও মানিয়ে যায়।
পোশাকের সঙ্গে জুতা হওয়া চাই মানানসই। স্টিলেটোস, কিটেন হিল, পাম্প শু, অ্যাঙ্কেল বুটস বেছে নিতে পারেন ইচ্ছেমতো।
বিষয় : বর্ণিল পোশাক নতুন পোশাক ঈদ পোশাক
মন্তব্য করুন