- ফিচার
- বাল্যবিয়ে কমছে না দেশে, নিরাপত্তাহীনতা
বাল্যবিয়ে কমছে না দেশে, নিরাপত্তাহীনতা

বিভিন্ন জরিপ অনুসারে, করোনাকালে দেশে ঝরে পড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছিল বাল্যবিয়ের হার। বাল্যবিয়ের প্রভাব যেমন পড়ে মা ও শিশুস্বাস্থ্যে, তেমনি তা দেশের অর্থনীতির ওপর এক বড় বোঝা। বাল্যবিয়ে বাড়লে কম বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭৪টি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েরা। এ নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত
বাল্যবিয়ে আগামী বছর হঠাৎ করেই কমে যাবে– এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। বাল্যবিয়ের যেসব কারণ আমরা দেখতে পাই সেটি শহরে বা গ্রামে একই রকম। এর মধ্যে একটি বড় কারণ হলো, মেয়েদের নিরাপত্তার সমস্যা। আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের ভর্তির হার প্রায় সমান। কয়েক দশক হয়ে গেল, আমরা এটি অর্জন করেছি। তবে মাধ্যমিক স্তর থেকে ক্রমাগতভাবে মেয়েদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশে এর কারণ বিচার করতে গেলে প্রথমেই আসে– মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পথটা নিরাপদ কিনা।
বাল্যবিয়ে নিয়ে কথা বলতে গেলে অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও বলেন, মেয়েদের চলার পথটা নিরাপদ কিনা– এটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। চলার পথটা নিরাপদ নয় বলেই কিন্তু বাংলাদেশে উপার্জনকারী কোনো কাজের সঙ্গে এখনও অনেক নারী যুক্ত হতে পারছেন না। এক দশকের বেশি সময় ধরে উপার্জনকারী কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৫ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ বাস্তবতায় পরিবার দেখছে– নারীকে পড়িয়ে লাভ কী, সে তো আয়-উপার্জন করতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে প্রথম যা করণীয় তা হলো, মেয়েদের চলার পথটা নিরাপদ করা। এই কাজ না করলে বাল্যবিয়ে হঠাৎ করে কমে যাবে না।
কর্মজীবী নারীরা প্রতিনিয়ত জনপরিসরে, সড়কে, গণপরিবহনে এই অনিরাপত্তার মুখোমুখি হন। তাঁদের সঙ্গে কথা বললে দেখা যাবে, তাঁরা অকপটে বলছেন– রাস্তার পরিবেশ আরও ভালো হতে হবে, গণপরিবহনে হয়রানির পরিমাণ কমাতে হবে। জনমানসে একটা পরিবর্তন আনা দরকার; তাঁরা যেন উপলব্ধি করেন, ১৮ বছরের নিচে বিয়ে দেওয়া আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনের ক্ষেত্রেও কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যত এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতিই দেওয়া হয়েছে বাল্যবিয়েকে। এর মধ্য দিয়ে ১৪ বছরের মেয়েকেও বিয়ে দিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। আমরা এখনও বাল্যবিয়েকে অপরাধ হিসেবে এবং সমাজে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। সামাজিক নিরাপত্তা ও জনমানসে পরিবর্তন না এনে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।
জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকে একটি ইউনিক নম্বর দেওয়া দরকার। আমরা যদি জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করতে পারি, তাহলে চাইলেই কেউ জন্মসাল পিছিয়ে, বয়স বাড়িয়ে দেখাতে পারবেন না।
পরিচালক, জেন্ডার কর্মসূচি, ব্র্যাক
মন্তব্য করুন