শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস টানা রোগীমাত্রই হাঁপানিতে আক্রান্ত, তা নয়। শ্বাসকষ্টের একটি বড় কারণ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সংক্ষেপে সিওপিডি। এটি ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এতে আক্রান্ত হলে শ্বাসনালির দেয়াল পুরু হয়ে যায় এবং ভেতরে প্রচুর শ্লেষ্মা জমে। ফলে শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের ভেতর ঠিকমতো বাতাস ঢুকতে পারে না। ফুসফুসের ভেতরকার ক্ষুদ্র বায়ুথলিতে বাতাস আটকে থাকে। এতে শ্বাসকষ্ট ছাড়াও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কার্বন ডাই-অক্সাইড বা বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যায়। অনেক সময় এই রোগকে ক্রনিক ব্রংকাইটিসও বলা হয়।

কীভাবে বুঝবেন আপনার এই রোগ হয়েছে
দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা– এই রোগের লক্ষণ। পরপর ২ বছরে কমপক্ষে তিন মাস কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে তাদের ব্রংকাইটিস বলে। বেশিরভাগ রোগীর বয়স ৪০ বছর বা তার কাছাকাছি। ধূমপায়ীদের এই রোগ হয় বেশি। তবে কারখানার নির্গত ধোঁয়া বা রান্নার চুলার ধোঁয়া থেকেও এ সমস্যা হতে পারে। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ফুসফুসের একটি মারাত্মক রোগ। এ থেকে রোগীর ওজন হ্রাস, হার্ট ফেইলিউর, রেসপিরেটরি ফেইলিউর, এমনিক মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধযোগ্য। এ থেকে বাঁচতে ধূমপান চিরতরে ত্যাগ করুন। পুষ্টিকর সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খান। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শিখে নিন।

ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম
নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। ব্যায়াম হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে উপকারী। এ ছাড়া এতে মানসিক চাপ কমে। এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন।

৪-৭-৮ রিলাক্সিং ব্রিদিং
পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস’ করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পরপর চারবার এভাবে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দু’বার করা ভালো।

শ্বাস গোনার ব্যায়াম
এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পরপর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনোসংযোগ বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায়।

বেলো ব্রিদিং
মুখ বন্ধ করে চটপট নাক দিয়ে ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম এটি। প্রতি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময়টি সমান থাকবে। এতে বুকের ও বক্ষচ্ছাতার মাংসপেশির দ্রুত ব্যায়াম হবে। তারপর কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ১৫ সেকেন্ডের বেশি নয়।

[সাবেক অধ্যাপক ,বারডেম]