- ফিচার
- প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটা অপ্রত্যাশিত নয়
প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটা অপ্রত্যাশিত নয়

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করেছে। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এ দেশের অনেক মা-বোন। ২৫ মার্চ কালরাতে ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়েনার দল। ১৪ ডিসেম্বর তারা হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেই দুঃসহ স্মৃতি বুকে ধারণ করে এখনও বেঁচে আছেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব পাকিস্তানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে ৯৩ হাজার সেনা আত্মসমর্পণ করে। আমাদের দেশের যেসব মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন, তাঁদের ছাড়িয়ে আনতে ৯৩ হাজার সেনাকে ছেড়ে দিতে হয়।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন গত ১৭ মে সমকালে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। ‘পাকিস্তানে সেনা কর্তৃত্ব এই প্রথম প্রশ্নের মুখে’ শীর্ষক নিবন্ধে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন। নিবন্ধের জন্য লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে কিছু প্রশ্ন রাখতে চাই। শুরুতেই বলেছি, ’৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালির ওপর ইতিহাসের নির্মম বর্বরতা চালিয়েছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁর দেশের সেনাবাহিনী ’৭১ সালে আমাদের ওপর নৃশংসতা চালিয়েছে। তাঁর এ মন্তব্যের মাধ্যমে এটি পানির মতো পরিষ্কার– পাকিস্তান সেনাবাহিনী যুদ্ধাপরাধ করেছে।
আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তবে এসব যুদ্ধাপরাধী দেশীয়। পাকিস্তানের যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের বিচারের সুযোগ এ আইনে নেই। ইমরান খান যেহেতু স্বীকার করেছেন– তাঁদের সেনাবাহিনী নৃশংসতা চালিয়েছে, তাহলে তাদের বিচারের দায়িত্ব তিনি নিতে পারেন। জানি, এখন তাঁর দল ক্ষমতায় নেই। এ অবস্থায় তিনি প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন– ভবিষ্যতে তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে পার্লামেন্টে আইন পাস করবেন।
গত ১৮ মে সমকালের সহসম্পাদক মিজান শাজাহান ‘ইমরানের আত্মোপলব্ধি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি ইমরান খানকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলায় প্রকাশিত এসব মন্তব্য ইমরানের কান পর্যন্ত পৌঁছবে কিনা, জানি না। ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এসব বিষয় নোট করছেন কিনা, তাও জানি না। তবে এটুকু জানি, অপরাধ করলে তার ফল একদিন ভোগ করতেই হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী শুরু থেকেই কর্তৃত্ববাদী আচরণ করে এসেছে। এবার তাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়া অস্বাভাবিক নয়; বরং এটি প্রত্যাশিত ছিল। এম সাখাওয়াত হোসেনকে আরেকবার ধন্যবাদ দিতে চাই তাঁর এ মন্তব্যের জন্য। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর উচিত ব্যারাকে থেকেই সিভিল গভর্নমেন্টকে সহায়তা দেওয়া। এটি করতে পারলে পাকিস্তানে গণতন্ত্র ফিরলেও ফিরতে পারে। লেখক যথার্থই বলেছেন, ভারত বহু জাতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কারণে টিকে আছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার শিক্ষা সবারই নেওয়া দরকার।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএম কলেজ, বরিশাল
মন্তব্য করুন