গরমে চুল বাঁধা নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। বাইরে বের হলে ঘামে ভিজে যায় চুল। এ সময় পনিটেল, বাবলি পনিটেল, সাইড বান, সিঙ্গেল ব্রেইড আপনাকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। লিখেছেন অরণ্য সৌরভ।

গরমে ঘাম বেশি হয়। বাইরে বের হলে মাথার ত্বকে জমে ময়লা। রুক্ষ হয়ে ওঠে চুল। তাই এই সময়ে নিয়মিত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করে চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি দরকার সঠিক হেয়ার স্টাইল। গরম আবহাওয়ায় চুলের স্টাইল কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে কথা হয়েছে রূপ বিশেষজ্ঞ কাজী কামরুল ইসলাম, রাজিয়া সুলতানা ও শোভন সাহার সঙ্গে।

শোভন মেকওভার বিউটি ক্লিনিক অ্যান্ড মেকওভার স্যালুনের কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা বলেন, ‘গরমে চুলের মধ্যে অনেক ভলিউম রাখতে হলে অবশ্যই ভালোভাবে শ্যাম্পু করতে হবে। শ্যাম্পু করার পর ব্লু ডাই করার চেষ্টা করুন। যাতে চুলের মধ্যে একটা ভলিউম ফিরে আসে। কন্ডিশনার সপ্তাহে দু’তিন দিন লাগাতে পারেন।’

‘গরমের মধ্যে চুলের স্টাইলে পনিটেল বা একটু বাফ করে পাম করতে পারেন। হেয়ার আয়রন দিয়ে কার্ল করতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন হেয়ার কাট করার মাধ্যমেও গরমে হেয়ার স্টাইল করতে পারেন’– যোগ করেন শোভন সাহা।

বান্থাই বারবার অ্যান্ড বিউটি স্যালুনের রূপ বিশেষজ্ঞ কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গরমে বাইরে থেকে বাসায় ফিরে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন স্টাইলিং পণ্যগুলো। কারণ স্টাইলিং পণ্য চুলে জট তৈরি করে, যা চুলের অনেক ক্ষতি করে। গরমের মধ্যে চুলের স্টাইল খুব সাধারণ রাখা উচিত। এ ছাড়া এই গরমে অতিরিক্ত বুরু ডাই, কারলিংটং ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। আয়রন এবং কারলিংটং থেকে ভালো হেয়ার ডাই ব্যবহার করা।’

গরমে যেভাবে বাঁধবেন চুল
ব্রেইডেড: অল্প সময়ে চুলের স্টাইলে গর্জিয়াস লুক ও আরামবোধ আনতে চাইলে বেছে নিতে পারেন ব্রেইডেড হেয়ারস্টাইল। এটি করতে প্রথমে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিতে হবে। চুলে সিঁথি কেটে নিয়ে ডান পাশের ওপরের দিক থেকে চুল নিয়ে হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে পনিটেল করুন। এর নিচে কিছু চুল অতিরিক্ত রাখুন। এরপর এই অতিরিক্ত চুল আর বাম পাশের সব চুল নিয়ে পনিটেলের ঠিক নিচ থেকে একটি ব্রেইড তৈরি করুন। এরপর ব্রেইডটি সামনে এনে ববিপিন দিয়ে চুলের সঙ্গে আটকে দিন। হয়ে গেলে এবার অন্য পাশের চুল নিয়ে একইভাবে আরেকটি ব্রেইড করুন। এবার ব্রেইডটি বাম পাশ দিয়ে পেঁচিয়ে সামনে নিয়ে আগের ব্রেইডটির কাছে এনে চুলের সঙ্গে আটকে দিন। ব্রেইড দুটোর আগা যেন বেরিয়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। স্টাইলটি দীর্ঘ সময় ধরে রাখার জন্য হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

ব্রেইড বান: ব্রেইড বান স্টাইল করতে চাইলে প্রথমে মাথার চুলগুলো তিন ভাগে ভাগ করে নিন। এরপর মাঝে চার আঙুল সমান সিঁথি করে কানের নিচ পর্যন্ত চুল ভাগ করে নিয়ে ক্লিপ দিয়ে আলাদা করে নিন। এরপর অতিরিক্ত চুলগুলো ধীরে ধীরে ব্যাকব্রাশ করে আঁচড়ে নিয়ে ঘাড় বরাবর একটি পনিটেল করুন। এবার সিঁথির একপাশের ক্লিপ খুলে চুল ভালো করে আঁচড়ে ফ্রেঞ্চ বেণি করে নিন। বেণিটি দু’পাশে নয়, বরং এক পাশ থেকে চুল নিয়ে করুন। বেণিটি যেন বেশি টাইট বা ঢিলা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। বেণির শেষ প্রান্তে এসে ইলাস্টিক ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নিন।

একইভাবে অপর পাশের বেণিটি করুন। এবার আগের করা পনিটেলটি ভালো করে আঁচড়ে চুলের আগার দিকে বান রোলার রেখে ধীরে ধীরে রোল করে নিন। রোল করা শেষ হলে চুল ধীরে ধীরে ছড়িয়ে ভেতরের বান রোলারটি ঢেকে দিয়ে কিছু ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন। এবার এক পাশের বেণি বানের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে নিচে এনে ববি পিন দিয়ে বেণির শেষ প্রান্ত আটকে দিন। একইভাবে অপর পাশের বেণিটিও পেঁচিয়ে এনে ববি পিন দিয়ে আটকে দিন। সব হয়ে গেলে হোল্ড স্প্রে দিয়ে চুল সেট করে নিন। হয়ে গেল গরম উপযোগী দারুণ একটি হেয়ারস্টাইল।

বাবলি পনিটেল: এই হেয়ারস্টাইল করতে প্রথমে চুলগুলোকে সুন্দর করে আঁচড়ে নিতে হবে। পরে উঁচু করে একটা রাবার দিয়ে বেঁধে নিতে হবে। তারপর এক ইঞ্চি দূরত্ব রেখে আরেকটা রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নিতে হবে। যে জায়গাটা বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেখানে আঙুলের মাধ্যমে চুলগুলো একটু ছড়িয়ে দিতে হবে; তাতে বাবলি লুক আসবে। ঠিক একইভাবে প্রতি এক ইঞ্চি অন্তর এক একটা রাবার বাঁধতে হবে।

বাবলি ব্রেইডস: এই হেয়ারস্টাইল আমরা একভাবে করতে পারি এবং দুই সাইডে স্টাইল করে দু’ভাবে করতে পারি। প্রথমে চুলকে মাঝ বরাবর সিঁথি করে নিতে হবে। তারপর এক সাইড থেকে ফ্রান্স বেণি করতে হবে। সামনে থেকে একটু বেণি করে ড্যানড্রাবার বেঁধে দিতে হবে; এরপর চুলটাকে হাত দিয়ে ফুলিয়ে নিচ থেকে আবার একটু বেণি করতে হবে। এভাবে পুরো চুলটাকে বেণি করতে পারেন অথবা হাত দিয়ে ফুলিয়ে ফুলিয়ে রেটস করতে পারেন।

সিঙ্গেল ব্রেইড: এটি বাঙালি নারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ও পরিচিত স্টাইল। এটিকে সিঙ্গেল ব্রেইড বলার পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ বেণি বা সোজা বেণি বলা হয়। ছোট-বড়-মাঝারি সব সাইজের চুলেই এ স্টাইলটি করতে পারেন। প্রথমেই চুলগুলো ভালোভাবে আঁচড়ে নিন। এটি করতে হলে প্রথমে সবগুলো চুল তিনটি অংশে ভাগ করে নিতে হবে। এরপর এক ভাগ এনে মধ্যভাগের সঙ্গে মিলিয়ে তারপর তৃতীয় ভাগ মধ্যভাগের সঙ্গে মিলিয়ে চমৎকারভাবে বেণি করতে হবে। এমনভাবে চুলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত করতে হবে। সালোয়ার-কামিজ, জিন্স-টপসহ সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে এ স্টাইলটি বেশ মানানসই।

সাইড বান: গরমে বাইরে গেলে আলতো করে সাইড বান করে নিতে পারেন। এ জন্য পার্লারে যাওয়ার দরকার নেই। চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। সব চুল এক পাশে এনে হাত দিয়ে খোঁপা করে নিন। খোঁপায় ক্লিপ আটকে নিন। এখানে পাঞ্চ ক্লিপ, কাটা ক্লিপ লাগাতে পারেন। চাইলে স্ক্রানচিজ দিয়েও বেঁধে রাখতে পারেন।

টুইস্টেড চুল: সন্ধ্যা কিংবা রাতের দিকে যদি কোনো পার্টিতে যান, তাহলে চুলে টুইস্টেড করে নিতে পারেন। এ জন্য চুলের এক পাশে সিঁথি করে নিন। এক পাশের চুল ছেড়ে দিন এবং অন্য পাশের চুল তিন বা চার ভাগ করে টুইস্ট করুন। টুইস্ট করে পেছনের দিকে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন।

এ ছাড়া গরমে চুলের স্টাইল ও আরামের দিকে খেয়াল রেখে পনিটেল শেষে বেণি করতে পারেন। যাঁদের চুল লম্বা, তাঁরা এই স্টাইল করতে পারেন। মাঝারি আকারের চুল হলে, সবগুলো চুল নিয়ে পেছনে বা সাইডে খোঁপা করতে পারেন। কিংবা ক্লিপ দিয়ে উঁচু করে আটকিয়ে নিতে পারেন। যদি উঁচু করে বাঁধতে অনীহা থাকে তাহলে সামনে থেকে বেণি করে কাঁধের এক পাশে রেখে দিতে পারেন।