![রাজা রামমোহন রায় [২২ মে ১৭৭২–২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩]](https://samakal.com/uploads/2023/05/online/photos/Untitled-51-samakal-646fbba5b4347.jpg)
রাজা রামমোহন রায় [২২ মে ১৭৭২–২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩]
রামমোহন রায় বাংলার নবজাগরণের আদিপুরুষ ও দার্শনিক। হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহন রায়ের জন্ম। তিনি ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কলকাতায় ২০ আগস্ট, ১৮২৮ সালে ইংল্যান্ড যাত্রার আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরের (বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসেবে কাজ করে। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্ম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তির জন্য তিনি বিশেষভাবে খ্যাত।
রামমোহনের পিতার নাম রামকান্ত রায়, মা তারিণী রায়। পিতার দিক থেকে রামমোহন ছিলেন বৈষ্ণব, আর মায়ের দিক থেকে তান্ত্রিক। সনাতন ধর্মের উভয় দিক সম্বন্ধে শৈশবেই তাঁর গভীর জানা-বোঝার সূত্রপাত।
বেদান্ত-উপনিষদগুলি বের করবার সময়ই তিনি সতীদাহ অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত প্রমাণ করে পুস্তিকা লিখলেন ‘প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’। তখন সতীদাহের পক্ষ অবলম্বনকারীরা ‘বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। রামমোহন যার প্রতিবাদে আরও দুটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। অবশেষে রামমোহনের জয় হয়। সহমরণ-রীতি আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। গোঁড়ারা চেষ্টা করতে লাগলেন যাতে পার্লামেন্টে বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। এ চেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য রামমোহনকে বিলেতে যেতে আর্থিক সহায়তা দান করেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর ১৮৩০ সালে তাঁকে বিলেত পাঠান। রামমোহনের রাজা উপাধিটি সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের দেওয়া।
রামমোহনের গ্রন্থসমূহ– বেদান্ত গ্রন্থ (১৮১৫), বেদান্ত সার (১৮১৫), তলবকার উপনিষৎ (জুন, ১৮১৬), ঈশোপনিষৎ (জুলাই, ১৮১৬), ভট্টাচার্যের সহিত বিচার (মে, ১৮১৭), কঠোপনিষৎ (আগস্ট, ১৮১৭), মাণ্ডুক্যোপনিষৎ (অক্টোবর, ১৮১৭), গোস্বামীর সহিত বিচার (জুন, ১৮১৮), সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সম্বাদ (আনুমানিক নভেম্বর, ১৮১৮), সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বাদ (নভেম্বর, ১৮১৯), আত্মানাত্মবিবেক (১৮১৯), উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার (১৮১৬-১৭)।
রামমোহন রায়ের লেখা ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ বাংলা ভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ গ্রন্থ। এটি বাঙালি রচিত বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ হিসেবেও প্রথম। গৌড়ীয় ব্যাকরণের ভূমিকা ও প্রারম্ভিক কিছু অংশ উপস্থাপিত হলো–
গৌড়ীয় ব্যাকরণ [কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি থেকে ১৮৩৩ সালে মুদ্রিত] : : ভূমিকা
সৰ্ব্বদেশীয় ভাষাতে এক২ ব্যাকরণ প্রসিদ্ধ আছে যদ্দ্বারা তত্ত্বভাষা লিখনে ও শুদ্ধাশুদ্ধ বিবেচনা পূৰ্ব্বক কথনে শৃঙ্খলামতে পারগ হয়েন, কিন্তু গৌড়ীয় ভাষার ব্যাকরণ না থাকাতে ইহার কথনে ও লিখনে সম্যক রূপে রীতিজ্ঞান হয় না, এবং বালকদিগ্যের আপন ভাষা ব্যাকরণ না জানাতে অন্য ভাষা ব্যাকরণ শিক্ষাকালে অত্যন্ত কষ্ট হয়, আর আপন ভাষা ব্যাকরণ যাহার বোধ অল্প পরিশ্রমে সম্ভবে তাহা জানিলে অন্য২ ভাষা ব্যাকরণ জ্ঞান অনায়াসে হইতে পারে। এ কারণ স্কুলবুক সোসাইটির অভিপ্রায়ে শ্রীযুত রাজা রামমোহন রায় ঐ গৌড়ীয় ভাষা ব্যাকরণ তদ্ভাষায় করিতে প্রবৃত্ত হয়েন। পরন্তু তাঁহার ইংলণ্ড গমন সময়ের নৈকট্য হওয়াতে ব্যস্ততা ও সময়ের অল্পতা প্রযুক্ত কেবল পাণ্ডুলিপি মাত্র প্রস্তুত করিয়াছিলেন পুনর্দৃষ্টিরও সাবকাশ হয় নাই, পরে যাত্রাকালীন ইহার শুদ্ধাশুদ্ধ ও বিবেচনার ভার স্কুলবুক সোসাইটির অধ্যক্ষের প্রতি অর্পণ কবিয়াছিলেন তে’হ যত্ন পূর্ব্বক তাহা সম্পন্ন করিলেন ইতি।
প্রশ্ন
১. রাজা রামমোহন রায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
২. তাঁকে রাজা উপাধি দেন কে?
৩. সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রামমোহনের লেখা বইটির নাম কী?
কুইজ ৯৮–এর উত্তর
১. প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
২. সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও কার্ল মার্কস
৩. মাখনের
গত সংখ্যার বিজয়ী
আয়রা মেহজাবীন
দামপাড়া, চট্টগ্রাম
সৈয়দ আবদুল মালেক
বড় মগবাজার, ঢাকা
মন্তব্য করুন