বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০৯ প্রকার মসলাজাতীয় ফসলের চাষাবাদ হয়। আমাদের দেশে ব্যবহার হয় ৫০ প্রকার মসলা। আর চাষাবাদ হয় ১৭ প্রকার মসলাজাতীয় ফসল। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু, আবহাওয়া সবকিছু মসলা চাষের উপযোগী। দেশে মসলা গবেষণা কেন্দ্রও আছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র ইতোমধ্যে ১৯ প্রকার মসলার ৩৮টি জাত অবমুক্ত করেছে। তারপরও দেশের চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মসলা নিয়ে গবেষণা বাড়ানো হয়েছে। অর্ধশত বিজ্ঞানী ও শতাধিক কর্মকর্তা মসলা গবেষণাবিষয়ক কাজ করছেন। মসলা উৎপাদন বাড়াতে নেওয়া হয়েছে শত কোটি টাকার নতুন প্রকল্পও।

অন্যান্য খাদ্যপণ্যের তুলনায় বিশ্ববাজারে বেশি ওঠানামা করে মসলার দাম। ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে দেশে বেড়ে যায় মসলার চাহিদাও। প্রতি বছর দেশে মসলার চাহিদা ৩৫ লাখ টনেরও বেশি। এর প্রায় ৪০-৪২ শতাংশ পূরণ করা হয় আমদানির মাধ্যমে। দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলা ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মসলার বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। আমদানীকৃত মসলার বাজার ৯০০ কোটি টাকার মতো।

দেশে আবাদকৃত মসলাজাতীয় ফসলের মধ্যে রয়েছে– আদা, হলুদ, ধনিয়া, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মৌরি, কালিজিরা, তেজপাতা, মেথি, গোলমরিচ ইত্যাদি। দেশে মসলার বিশাল ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৯৯৪ সালে মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর ১০টিরও বেশি আঞ্চলিক অফিস রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এলাচ, লবঙ্গ ও দারুচিনি চাষ করা যায় না। তবে কালো এলাচ চাষ করা যায়। গোলমরিচ, লবঙ্গ ও দারুচিনির জন্য বেশি বৃষ্টিপাত দরকার। দেশের পাহাড়ি এলাকায় গোলমরিচ করা যেতে পারে। বৃষ্টিপাত কম ও কুয়াশা বেশি হয় বলে জিরা চাষ করা যায় না। জার্মপ্লাজমের অভাবে এলাচ চাষ করা যাচ্ছে না। দেশে মসলা জমিরও অভাব আছে। অভাব আছে উৎকৃষ্ট বীজেরও। মসলা চাষে আগ্রহও কম কৃষকের। জলবায়ু পরিবর্তনও মসলা চাষে বড় বাধা। কৃষি মন্ত্রণালয় নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করলে দেশে মসলা উৎপাদন আরও লাভজনক হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

মসলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এই কেন্দ্র এ পর্যন্ত ২২টি মসলাজাতীয় ফসলের ওপর ৪৭টি জাত উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া উৎপাদন বাড়ানোর প্রযুক্তি, মৃত্তিকা ও পানি ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, পোস্ট-হারভেস্ট প্রযুক্তিসহ ৬৬টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রধান পাঁচটি মসলা (মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদ) অন্তত ৩৮ গ্রাম খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দেশের উৎপাদন ও আমদানি মিলে দৈনিক মাথাপিছু মাত্র ৮ গ্রাম মসলার চাহিদা পূরণ হয়। এ হিসাবে চাহিদা পূরণে বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের মসলাজাতীয় ফসলের উৎপাদন আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এটি আরও বাড়াতে সরকার থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার।