দৈনন্দিন প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করি। যেমন প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি। ব্যবহার করার পর আমরা এসব গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলে দিই, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই এসব বর্জ্য রিসাইকেল করা হলে আবার ব্যবহার করা যায়। আমরা যে ভবনগুলোয় থাকি সেটি কীভাবে রিসাইকেল করা যায়, বিজ্ঞানীরা এখন তা নিয়ে ভাবছেন।

বিশ্বের বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৫ শতাংশের জন্য নতুন একটি ভবন দায়ী। কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষক ও স্থপতি ফেলিক্স হেইসেল জানান, নির্মাণ শিল্প আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে দ্বিগুণ পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন করছে এবং তারা এগুলো আবার ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। অনেক শহর ইতোমধ্যে ভবন নির্মাণের উপকরণ পুনর্ব্যবহার করার ধারণার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করেছে এবং এমন কিছু আইনও পাস করেছে। বিশেষজ্ঞরা উন্মুক্ত কাঠ এবং ইস্পাত দিয়ে তৈরি নান্দনিক শহরের স্বপ্ন দেখছেন, যা পরিবেশকে সবুজ এবং আরও খানিকটা নমনীয় রাখবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনের পোর্টল্যান্ড শহর ১৯১৬ সালে বা তারও আগে নির্মিত আবাসিক বাড়ি ভেঙে ফেলার পরিবর্তে ‘ডিকনস্ট্রাকশন বা বিনির্মাণ’ করা প্রয়োজন বলে মনে করে। তাই ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে একটি বিনির্মাণ অধ্যাদেশ গৃহীত হয়েছিল। শহটির নির্মাণ বর্জ্য বিশেষজ্ঞ শন উড বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত পোর্টল্যান্ডের পুরোনো বাড়িগুলোর বেশিরভাগই যান্ত্রিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তবে এখন বেশিরভাগই ডিকনস্ট্রাকশন ঠিকাদারদের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে এবং এসব উপকরণ আবার ব্যবহারের জন্য উদ্ধার করা হচ্ছে।

তবে এই বিনির্মাণেরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে– সময় এবং শ্রম। একটি সাধারণ মানের বাড়ি ভেঙে ফেলতে মোট দু’দিন সময় লাগতে পারে, কিন্তু ডিকনস্ট্রাকশন করতে বেশি সময় লাগে। যদি বিনির্মাণের সময় উদ্ধার করা উপকরণগুলো বেশি মূল্যবান হয়, তাহলে তাদের বিক্রি করতে অতিরিক্ত সময় এবং শ্রমের দরকার। বিজ্ঞানী হাইজল এ সমস্যা সমাধানে নির্মাণ তথ্যের ওপর জোর দিচ্ছেন। এর ফলে কর্মীরা দ্রুত অনুমান করতে পারবেন– দেয়ালের পেছনে কী এবং কতটা মূল্যবান উপাদান লুকিয়ে আছে। সমস্যা সমাধানে ‘ডিজাইন ফর ডিসঅ্যাসেম্বলি’ নামে একটি নীতি গ্রহণ করার হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভবন থেকে কাঠ, ইস্পাত, কংক্রিট বা ড্রাইওয়ালের মতো উপকরণগুলো এ পদ্ধতির মাধ্যমে আলাদা করে নেওয়া যায়।

এসব শহরের ভবিষ্যতের বাসিন্দাদের জন্য ভবনের জানালা, দরজা বা দেয়ালও সহজে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব, এমন পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে। একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, ইস্পাত কাঠামোতে নকশা করা একটি ভবনের কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ফের ব্যবহার করা হলে সেখানে ৭০ শতাংশ শক্তি এবং ৮০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এসব শহর নান্দনিকভাবে গঠন করতে হবে। সেখানে অভ্যন্তরীণ কাঠামো আরও দৃশ্যমান থাকবে। এর ফলে যদি কখনও শহরগুলো স্থানান্তর করার দরকার পড়ে, সে ক্ষেত্রে সহজেই ভবনগুলোকে খুলে নিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে।