- ফিচার
- বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের বন্ধু
বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের বন্ধু

রেজাউল করিম রাকিব
সাপ, প্যাঁচা, পাখিসহ যে কোনো প্রাণী কোথাও বিপদে পড়লে তাঁর ডাক পড়ে। ছুটে যান সেখানে। পরম মমতা, ভালোবাসা, আদর দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে প্রাণীদের জন্য কাজ করছেন রেজাউল করিম রাকিব। এ পর্যন্ত তিনি ১৫০টিরও বেশি সাপ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– পদ্ম গোখরা, বড় কৃষ্ণ কালাচ, শঙ্খিনী, সবুজ বোড়া, লাল-ঘাড় ঢোঁড়া, বার্মিজ অজগর, দাঁড়াশ, ক্যান্টর’স কুকরি, জলঢোঁড়া, হেলে, ঘরগিন্নি, তামাটে মাথা দুধরাজ, খয়েরি ফণিমনসা ইত্যাদি। হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে এখন কলেজে পড়ছেন রেজাউল করিম রাকিব। পাশাপাশি প্রাণীদের জন্য নানা রকম তৎপরতা। মা-বাবা, ছোট বোনকে নিয়ে হাটহাজারীতেই তাঁর বসবাস।
সাপ! নাম শুনলে যখন মানুষ আতকে ওঠে, তখন সেই সাপই যেন রাকিবের পরম বন্ধু। অবিষধর সাপগুলো তো রীতিমতো তাঁর সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে ওঠে। হাত বেয়ে গায়ে উঠে পড়ে। প্রতি বছর সাপের কামড়ে সারাদেশে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যান। বেশিরভাগ মৃত্যুই হয় অসচেতনতার কারণে। নিজ এলাকা তো বটেই। পাশের নানা এলাকা থেকেও সাপ উদ্ধারের ডাক পড়ে রাকিবের। তিনি ছুটে যান সেখানে। চট্টগ্রাম, ফেনী, চাঁদপুর, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন তিনি। কেবল উদ্ধারেই তাঁর কাজ থেকে থাকে না। তিনি উপস্থিত জনতাকে সাপ সম্পর্কে সচেতন করেন। তাঁদের বুঝিয়ে বলেন, দেশে হাতেগোনা কয়েক প্রজাতি ছাড়া সব সাপই নির্বিষ। দংশন করলে কিছুই হয় না।
২০২০ সালের এক পড়ন্ত বিকেলে এক বাসা থেকে রাকিব উদ্ধার করেন নির্বিষ মাথা দুধরাজ সাপ। এটিই ছিল তাঁর প্রথম সাপ উদ্ধার। রাকিবের মতে, সাপকে মানুষ যতটা ভয়ংকর বলে মনে করে, আসলে একদমই তা নয়। অকারণে মানুষ সাপ হত্যা করে; যা জীববৈচিত্র্যের ভীষণ ক্ষতি করছে। সাপ ছাড়াও রাকিব চিতাবিড়াল, ডাহুক, লক্ষ্মীপেঁচা উদ্ধার করেছেন। কোথাও বন্যপ্রাণী অসুস্থ অবস্থায় পেলে তিনি বাসায় এনে সেবা-যত্ন, চিকিৎসা করেন। এই বিষয়ে যাঁরা অভিজ্ঞ তাঁদের সহায়তা নেন। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে চিকিৎসা দেন। সুস্থ হয়ে গেলে বনে ছেড়ে দিয়ে আসেন।
রাকিব জানান, সাপ উদ্ধারের কৌশল শিখেছেন আরশাদ নাফিজ এবং ফরহাদের তত্ত্বাবধানে। তাঁরা দু’জনই বন্যপ্রাণী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন। তিনি আরও জানান, সাপ কী অবস্থায় আছে, পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে তিনি উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। গাছপালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। বন্যপ্রাণী থাকার আবাসস্থল দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই ওরা লোকালয়ে চলে আসে খাবারের সন্ধানে। এই প্রেক্ষাপটে সাপ যেন বাসায় না আসে সে জন্য বাড়ির চারদিক পরিষ্কার রাখতে হবে। ঝোপঝাড় কেটে ফেলতে হবে। ইট বা কাঠ স্তূপ করে রাখা যাবে না। ইঁদুর তাড়াতে হবে এবং ইঁদুরের গর্ত ভরাট করে ফেলতে হবে। তা না হলে ইঁদুর খেতে সাপ চলে আসতে পারে।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে সাপের কামড়ে মৃত্যুঝুঁকি অনেক কম থাকে। তবে আমাদের দেশে এমন রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম নিশ্চিত করা দরকার। অথচ সব উপজেলায় অ্যান্টিভেনম নেই। আবার থাকলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ। প্রশিক্ষিত চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে।
রাকিব ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সংগঠনের ব্যানারে তিনি সচেতনতাবিষয়ক সভা-সেমিনারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে সাপের দংশনে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সবরকম সহযোগিতার চেষ্টা করেন। ভবিষ্যতে তিনি ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে আরও জোরালোভাবে বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করে যেতে চান বলে জানান।
মন্তব্য করুন