সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকর। কড়া রোদে তাকাতে হলে বারবার চোখ সংকুচিত করতে হয়। এতে চোখের নিচে ভাঁজ পড়ে যায়। রোদে গেলে সানগ্লাস নিন। এতে আরামে থাকবে চোখ। এটি যে কেবল চোখ সুরক্ষিত রাখে এমনটা নয়; মানানসই রোদচশমা একজন মানুষের ব্যক্তিত্বও ফুটিয়ে তুলতে পারে সহজেই। রোদচশমা পরতে হবে মুখের আদল, পোশাকের ধরন, পোশাকের রং, চুলের কাটিং, পরিবেশ, চুলের রং ইত্যাদির সঙ্গে মানিয়ে। নয়তো ঠিক জমবে না।

প্রয়োজনে হোক কিংবা ফ্যাশন– রোদচশমার ব্যবহার কিন্তু এক-দু’দিনের নয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সর্বপ্রথম চীনে রোদচশমার প্রচলন শুরু। প্রাচীন চীনে চশমার মতো একটি ফ্রেম বানিয়ে তাতে দুই চোখের ওপর রঙিন কাচ লাগিয়ে রোদের হাত থেকে চোখ দুটি রক্ষা করার কৌশলের উদ্ভব হয়েছিল। যদিও তখন থেকে চীনে এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে রঙিন চশমা ব্যবহার করা হতো। কোনো অপরাধের বিচারকাজ চলার সময় বিচারকরা সাধারণত এমন ধরনের রঙিন চশমা ব্যবহার করতেন। রঙিন চশমা পরে থাকলে কোনো অভিযুক্ত কিংবা সাক্ষী তাঁর চোখের অভিব্যক্তি বুঝতে পারত না। বিচারকাজের স্বচ্ছতার জন্যই সাধারণত প্রাচীন চীনের বিচারালয়গুলোয় বিচারকদের এই রঙিন চশমা পরার ব্যাপারটি প্রচলিত ছিল।

বর্তমানে শিশু থেকে বুড়ো সব বয়সী মানুষ রোদচশমা ব্যবহার করে থাকে। বেগুনি, সাদা, কমলা, নীল, পানি রংসহ অনেক রঙের রোদচশমা এখন বাজারে এসেছে। নতুন সংযোজন হিসেবে আছে বর্ডারযুক্ত রোদচশমা। তরুণ-তরুণীদের পছন্দের তালিকায় আছে ডলসি অ্যান্ড গাব্বানা, প্রাডা, জর্জিও আর্মানি, পলিস ইত্যাদি। এ ছাড়া আমেরিকান আর্মি, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, অ্যাডিডাস, কেলভিন ক্লেন, ওকলে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় রোদচশমা পাওয়া গেলেও ভালো মানের রোদচশমার জন্য বসুন্ধরা সিটি, এলিফ্যান্ট রোড সেরা।

রোদচশমা কেনার ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন যেসব বিষয়
চোখের সুরক্ষা : সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও ধুলাবালি থেকে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রোদচশমা ক্রয় করুন। ইউভি ৪০০-এর লেবেলযুক্ত রোদচশমা চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। সুতরাং কেনার আগে এটি নিশ্চিত করুন। এ ছাড়া পোলারাইজড লেন্সযুক্ত রোদচশমা সূর্যের কড়া আলো থেকে চোখ রক্ষা করে। তা ছাড়া এই লেন্সযুক্ত রোদচশমায় আশপাশের সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। ড্রাইভিংয়ের ক্ষেত্রেও এটি খুব কার্যকর।

চশমার ম্যাটেরিয়াল: রোদচশমা কেনার আগে অবশ্যই ম্যাটেরিয়াল দেখে নেবেন। না হলে ফ্রেমের কারণে চশমা পরে অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। তাই হালকা ধরনের ফ্রেম বাছাই করুন, যা ক্যারি করা সহজ।

লেন্সের বিভিন্ন রং: ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চশমার লেন্সের বিভিন্ন রং বাছাই করতে পারেন। বাদামি, হলুদ, নীল, সবুজ, গোলাপি, ধূসর রংগুলো গ্ল্যামার হিসেবে পছন্দ করতে পারেন।

গড়ন অনুযায়ী ফ্রেম: মুখের গড়নের সঙ্গে মানানসই না হলে রোদচশমা আপনার চোখকে সুরক্ষিত রাখলেও আপনাকে স্টাইলিশ করে তুলবে না। মুখের আকার বড় হলে বড় ফ্রেম নিন। মুখের গড়ন ছোট হলে ছোট ফ্রেম নিন। একেবারে চোখের মাপে নয়, ওভারসাইজড রোদচশমা ভালো। এতে চোখের নিচে কালি পড়ে না, দ্রুত রিঙ্কল পরাও কিছুটা আটকানো যায়।

মান যাচাই: রোদচশমা কেনার আগে মান যাচাই করুন। কম দামে মানহীন চশমা না কেনাই ভালো। বিশেষ করে শিশুদের জন্য মেলার দোকান, ট্রেন, বাস থেকে রোদচশমা কিনবেন না।

পোশাকের মতো রোদচশমায়ও সারাবছর চলে ফ্যাশন আর ট্রেন্ড। তবে রোদচশমা ব্যবহারের বিশেষ কিছু নিয়ম আছে, যা সবার মেনে চলা উচিত। ঘরোয়া অনুষ্ঠান, মার্কেট, ইনডোর ইভেন্টে রোদচশমা খুলে রাখা সৌজন্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। কারও সঙ্গে কথা বলার সময়ও এটি খুলে রেখে কথা বলুন। অফিসিয়াল কোনো কাজে একরঙা ফ্রেম ও গ্লাস ব্যবহার করুন। ঘোরাঘুরির জন্য ব্যবহার করুন মৌসুম উপযোগী ও স্টাইলিশ রোদচশমা। সব সময় চুলের সঙ্গে চশমা আটকে রাখা যথেষ্ট রুচিহীনতার পরিচয় দেয়। রোদচশমা সব সময়ই যে দামি হতে হবে, এমনটা নয়। তবে মানসম্মত রোদচশমা ব্যবহার করাই উত্তম।