- ফিচার
- সমুদ্র খননে হুমকির মুখে পৃথিবী
সমুদ্র খননে হুমকির মুখে পৃথিবী

পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় সাগর-মহাসাগরকে। এরাই পৃথিবীতে অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা। সমুদ্রের অবদান, প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে প্রতি বছর ৮ জুন পালন করা হয় ‘বিশ্ব সমুদ্র দিবস’। একুশ শতকের বিশ্বে সমুদ্র অর্থনীতির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। আর সমুদ্র অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো ডিপ সি মাইনিং বা গভীর সমুদ্র থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলন। কিন্তু পরিবেশবাদীরা এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলনের ফলে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
ইতোমধ্যে ভারত সমুদ্রের গভীরে খননের জন্য ৪ হাজার ৭৭ কোটি রুপি অনুমোদন দিয়েছে। দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় এই বিশেষ অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ ২০০১ সালে সমুদ্র খননের জন্য ৩১টি অনুমতি দিয়েছিল। ২০২১ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ নাউরু ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পর পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই গভীর সমুদ্র খনন করার অনুমতি দিয়েছে।
গভীর সমুদ্রে খননের মূল আগ্রহ থাকে পলিমেটালিক নোডুলসের ওপর। এতে বিভিন্ন ধরনের ধাতু এবং অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ থাকে। আইইউসিএনের তথ্যমতে, এই খননের দ্বারা নির্গত পলির বরফ শত শত কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে এবং প্রাণীদের শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন হতে পারে। বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে হাজারো প্রজাতির।
গভীর সমুদ্রে খননের প্রবক্তারা যুক্তি দেন যে, বায়ু টারবাইন এবং সৌর প্যানেলের মতো সবুজ প্রযুক্তি এবং মোবাইল ফোনের মতো ডিভাইসগুলোর জন্য আমাদের যে প্রচুর পরিমাণে ধাতু প্রয়োজন, তা পেতে আমাদের সমুদ্রের সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, যদি গভীর সমুদ্রে জীবাশ্ম জ্বালানি নিষ্কাশন এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ২০৬৫ সালের মধ্যে গভীর মহাসাগরগুলো আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর চাহিদার ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ সরবরাহ করতে পারে।
২০২১ সালে, প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের ১৬০টি সদস্য রাষ্ট্রের অধিকাংশই গভীর সমুদ্রে খননের ওপর স্থগিতাদেশের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ৪৪টি দেশের ৭০০ জনেরও বেশি বিজ্ঞান ও নীতি বিশেষজ্ঞ গভীর সমুদ্রে খনন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। গভীর সমুদ্রে খননের ফলে অনেক মাইক্রো অরগানিজম ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। সমুদ্রতল থেকে ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার ওপরের সক্রিয় প্রাণী ও উদ্ভিদ জগৎ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই এলাকায় যে কোনো ধরনের পুনর্গঠন হতে হাজার হাজার বছর সময় লাগবে।
মন্তব্য করুন