মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন সুমা খাতুন। বাসা থেকে কলেজের হাঁটা পথে দূরত্ব আধাঘণ্টা। যাতায়াতের সুবিধার জন্যই সাইকেল চালানো শেখেন। তখন ভাবনা ছিল পরিবেশবান্ধব বাহনটিতে আসা-যাওয়ায় তেমন বাড়তি খরচ হবে না আর শরীরও সুস্থ থাকবে। সেই সাইকেল চালানোর দক্ষতাই যে কিছুদিন পর তাঁকে স্বাবলম্বী করবে– এটি কখনোই তাঁর ভাবনাতে আসেনি।

সুমা জানান, পলিটেকনিকে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় পারিবারিক কারণে নিজে উপার্জন করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ছিল না বাড়তি তেমন কোনো দক্ষতাও। ফেসবুকে একদিন একটি পোস্ট দেখলেন। জানলেন, নারী রাইডার নেবে অনলাইনে খাবার ও গ্রোসারি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফুডপান্ডা’। ফেসবুক পেজে মেসেজ করলেন। জানতে পারলেন, কাজ করা যাবে নিজের সুবিধামতো সময়ে। সাইকেল চালানো জানলে আর স্মার্টফোন থাকলেই শুরু করা যাবে কাজ। সুমার কাছে এ যেন সুবর্ণ সুযোগ। ঝটপট নিবন্ধন করে কাজ শুরু করলেন। সেই থেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী তিনি। পড়াশোনা আর জীবনযাপনের খরচ নিজের আয় থেকেই মেটাচ্ছেন।

২০২২ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করা মনি। সঙ্গে থাকেন মা-বাবা আর চার ভাইবোন। বাবার কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা। পরিবারের খরচ জোগাতে মা-বাবা একটি চায়ের দোকান চালান ধানমন্ডিতে। সাত সদস্যের পরিবারের খরচ আর মাথার ওপর ঋণের চাপ। ছোট দোকানের আয় থেকে প্রয়োজনীয় খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয়। বড় মেয়ে মনি তাই কাজ খুঁজতে থাকেন। পড়েছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ফলে এ যোগ্যতায় সম্মানজনক কোনো কাজও মিলছিল না। একদিন জানতে পারলেন হেঁটেই নাকি ফুডপান্ডায় খাবার ডেলিভারি দিয়ে আয় করা যায়। সাত-পাঁচ না ভেবে নিবন্ধন করে যোগ দিলেন ওয়াকার হিসেবে। এর কিছুদিন পর সাইকেল চালিয়ে কাজ করা শুরু করলেন। দায়িত্ব নিলেন বাবার ঋণের টাকা শোধ করার।

সুমা বা মনির মতো অসংখ্য নারী রাইডার সারাদেশেই প্ল্যাটফর্মটিতে কাজ করেন। অনলাইনে খাবার ও গ্রোসারি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্ল্যাটফর্মটিতে কাজ করা রাইডারদের ৮৫ শতাংশই সাইকেল চালিয়ে খাবার সরবরাহ করেন। রয়েছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন রাইডারও।