‘এদেশে কোনো ব্যান্ডের পাঁচ দশক টিকে থাকা অবিশ্বাস্য ঘটনা। কেননা, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এদেশে ব্যান্ড মিউজিক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিভিন্ন সময় লাইনআপের পরিবর্তন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংগীতে পরিবর্তন, শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করে যাওয়া– সবই চ্যালেঞ্জিং।

সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই সোলস এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছে। তাই ব্যান্ডের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারা আমাদের জন্য হবে অন্যরকম ভালো লাগা আর প্রেরণার।’ বললেন সোলসের কণ্ঠশিল্পী নাসিম আলী খান। সত্তরের দশক থেকে যে মানুষটি সোলসের অজস্র ঘটনা, সৃষ্টি, দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন, পরম মমতা আর ভালোবাসায় ব্যান্ডকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন; তাঁর মুখে এমন কথা শুনতে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু, নকীব খান, পিলু খানের মতো গুণী শিল্পী ও মিউজিশিয়ান যখন ব্যান্ড ছেড়েছেন, তখনও সোলস থেমে থাকেনি।

সুব্রত বড়ুয়া রনি, পান্থ কানাই জুয়েল, সোহেল, আজাদ, আলী, র‍্যালি, সাজেদসহ আলোচিত মিউজিশিয়ানরা দলত্যাগ কিংবা মারা যাওয়ার পরও থমকে যায়নি সোলসের কার্যক্রম। বরং প্রথম দেশীয় ব্যান্ড হিসেবে ৫০ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করছে ব্যান্ডটি। তাই এখন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের পালা। ক’দিন আগেই ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী ও লিড গিটারিস্ট পার্থ বড়ুয়া বলেছিলেন, বড়  আয়োজনের মধ্য দিয়েই সোলসের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের ইচ্ছা আছে।’ অবশেষে পার্থ সেই কথা রাখতে যাচ্ছেন। দলের সবাইকে নিয়ে উদযাপন করতে যাচ্ছেন ব্যান্ডের ৫০ বছর পূর্তি। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি গুলশান ক্লাবে আনুষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেই ঘোষণাও দেওয়া হয়ে গেছে। এ উপলক্ষে এদিন উন্মোচন করা হয়ছে সোলসের নতুন লোগো।

আনুষ্ঠানিক এ আয়োজনে সোলসের বর্তমান সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও ব্যান্ডের সাবেক সদস্য পিলু খান, র‍্যালি, গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গীসহ অনেকে। এদিন নাসিম আলী খান, পার্থ বড়ুয়া ছাড়াও ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্য মীর মাসুম, আশিক, রিয়েল– সবার চোখে-মুখে নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করার আনন্দ আভা ভেসে উঠেছিল। বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার উদ্যমও দেখা গেছে। সোলস সদস্যদের কথায়, তাঁরা ভাগ্যবান, সোলসকে নিয়ে পাঁচ দশকের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারায়। এই দীর্ঘ সময়ে বহুবার লাইনআপে পরিবর্তন এসেছে।

পুরোনো সদস্যদের অনেকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এরপরও সোলস নতুন গান, অ্যালবাম প্রকাশনা ধরে রাখার পাশাপাশি, স্টেজ, টিভি, রেডিওসহ প্রতিটি মাধ্যমে সক্রিয় ছিল। সংগীত সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে গেছে। সক্রিয়তা ধরে রেখেই উদযাপন করতে যাচ্ছে সুবর্ণজয়ন্তী। এজন্য তাঁরা দলের সাবেক ও বর্তমান প্রত্যেক সদস্য, ভক্ত-শ্রোতা, পৃষ্ঠপোষক থেকে শুরু করে নেপথ্যে থেকে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন; তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।

সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন নিয়ে পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘গত ৫০ বছর শ্রোতারা সোলসকে যেভাবে ভালোবেসেছে, তা তুলনাহীন। তাই ৩০টি জনপ্রিয় গানের রিমেক এবং ২০টি নতুন মৌলিক গানসহ একে একে মোট ৫০টি গান প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এ ছাড়া বড় পরিসরে কনসার্ট ছাড়াও বছরজুড়ে দেশ-বিদেশে নানা ধরনের আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।’ তাঁর এই কথা থেকে স্পষ্ট, দেশের প্রথম ব্যান্ড হিসেবে শুধু সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন নয়, আরও কয়েক দশক ব্যান্ড বিশ্বজুড়ে রাজত্ব করবে– এই বাসনা দলের সবার।

সোলস-এর অ্যালবাম

সুপার সোলস্ [১৯৮২]
কলেজের করিডোরে [১৯৮৪]
মানুষ মাটির কাছাকাছি [১৯৮৬]
ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট [১৯৮৮]
এ এমন পরিচয় [১৯৯৩]
আজ দিন কাটুক গানে [১৯৯৫]
অসময়ের গান [১৯৯৮]
মুখরিত জীবন [২০০১]
তারার উঠোনে [২০০৩]
টু-লেট [২০০৪]
ঝুট-ঝামেলা [২০০৬]
জ্যাম [২০১১]
মিক্সড অ্যালবাম–
ধুন [১৯৯৭]
সিক্স ব্যান্ড নাইনটি নাইন [১৯৯৯]
বাগানে গোলাপ নেই
[১৯৯৭, রেনেসাঁর সঙ্গে]