জলের সাথে খেলা যার, জলেই যার বসবাস, সে আমাদের ভুবন, ভুবন বেদে। ওর সঙ্গী একটি নৌকা আর চল্লিশোর্ধ্ব বউ রুক্মিণী বালা। সাপ ধরে, বীণ বাজায়, কখনও একা, কখনও বউসহ। বেদে-বহরের সাথে দূরান্তে চলে যায়। কখনও সাভার-মানিকগঞ্জ, কখনওবা ঢাকার বিক্রমপুর, সোনারং তালতলা বেতকার ঘাটে।
বেতকার ঘাট থেকেই তরুণ বয়সে ভুবন একদিন ঢাকায় গিয়েছিল। সর্দার সাথে ছিল। সর্দারই নিয়ে গিয়েছিল তাকে।
বলেছিল– দ্যাখ ভুবন এটাই রাজধানী। এই এলাকার নাম গুলিস্তান।
চকবাজার গিয়েছিল রাতে সেখানে থেকেই পরদিন সর্দারের সাথে থেকে তাবিজ-তাগা-বীণের সরঞ্জাম কিনে বাসে উঠেছিল। তারপর বাস থেকে নেমে আবার নৌকায়।
এভাবে মাঝেমাঝে সর্দারের সাথে রাজধানী ঢাকার রাস্তা চিনেছে। ঢাকা তার ভালো লাগে। চোখে ধাঁধা লাগে। এত লোক, কত বিচিত্র দোকানপাট!
ভুবনের বিয়ে সর্দার দেন রুক্মিণীর সাথে। রুক্মিণী ভালো মেয়ে, সারাক্ষণ চোখেমুখে হাসি লেগেই আছে। সাপ ধরতে যায় না, ধরতে চায় না। শুধু বেলোয়ারি কাচের চুড়ি বিক্রি করে। সেজন্য মাল আনতে ভুবনকে চকে যেতে হয়। সর্দার চলে গেছে অন্য গাঙ্গে। সে আবার এক ঘাটে বেশি দিন থাকতে চায় না, ভেসে বেড়াতে ভালোবাসে।
এরই মধ্যে রুক্মিণীর ছেলে হলো। তাই ঘাট ছেড়ে ভুবন কোথাও গেল না। এখন চৈত্র চলছে। আষাঢ় এলে ভাসা জলে নাও ভাসাবে এই হলো ভুবনের মনের ইচ্ছে।
বউ বলে– নাও ভাসাও। ভুবন আলসেমি করে জবাব দেয় না। ওর স্বভাবটাই আলসে গোছের। নৌকার গলুইয়ে শুয়ে শুয়ে বাঁশি বাজায়। রোদ তেতে উঠলে ছইয়ের নিচে ঢোকে। ছোট খোকার মুখ দেখে আর হাসে। খোকার ছোট ছোট হাত দুটো নিজের দু’হাতের মধ্যে নিয়ে খেলে।
কখনও খুনশুটি করে বলে– আজ বাপ-ব্যাটার খাবার বন্ধ। কাজ নাই কাম নাই, শুধু শুয়ে শুয়ে বাঁশি বাজানো?
বউ তুই বোকা, ভুবন জবাব দেয়। এই সুন্দর পুতুল রেখে কোন হার্মাদ কাজে যায়! তুই যা, আজ থেকে ছেলে আমার। আমি ওকে পাহারা দেব।
এরকমই চলছিল।
ছোট সর্দার এইবার বেদে-বহর গোটায়। ভুবনদের যেতেই হয় সোনারংয়ের ঘাট ছেড়ে দেলভোগের দিকে। রুক্মিণীর ছেলে বড় হয়, হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে হাঁটা শিখে ফেলে। সংসারের চাহিদা বাড়তে থাকে। সে কারণে মাল কিনতে ভুবনের রাজধানী যাওয়া বেড়ে যায়।
একদিন শাপলা চত্বরে বীণ বাজিয়ে যাওয়ার সময় দুই-একজন মানুষ পয়সা ছুড়ে দেয় ভুবনের দিকে। ছোট ছোট টোকাই ছেলেমেয়ে সেগুলো কুড়িয়ে তার পকেটে পুরে দেয়। ভুবন বুঝতে পারে, এভাবেও তো একটা আয় হয়। রাজধানীতে সে এখন একটু ভোরেই চলে আসে, ব্যাংক কলোনি, নটরডেম কলেজ, ফকিরাপুল হয়ে গুলিস্তান পৌঁছে বীণ বাজাতে বাজাতে। দোহারের বাসে ওঠে। নিমতলা বেদেবহরে চলে আসে সময়মতো। মাঝে মাঝে ছেলেকেও নিয়ে আসে ভুবন। বউ রুক্মিণী ছেলেকে ছাড়তে চায় না, ভুবন বলে সর্দারের মতো আমিও খোকাকে সব চেনাব। আমি না চেনালে কে চেনাবে ওকে? গাঙ্গের এই ভেসে বেড়ানো জীবন একদিন উঠে গেলে ওকে তো চলতে হবে। পথঘাট চিনে রাখা ভালো।
বউ বলে– তুমি যা পাগল মানুষ, কোনদিন ছেলেকে হারায়ে আসবে।
–বোকা বউ! নিজের ছেলেরে কেউ হারায়?
মার্চ মাস শুরু হয়ে গেছে। কী জানি কী হলো ভুবনের। একদিন দেখে হেঁটে হেঁটে এক লোক রাস্তায় বাঁশের লাঠিতে সাজানো নানা সাইজের পতাকা বিক্রি করছে। সামনে স্বাধীনতা দিবস। ছেলে বায়না ধরে ওকে একটা পতাকা কিনে দিতে হবে। সে নৌকার ছইয়ে এই পতাকা ওড়াবে। ভুবন কিনে দেয়।
ভুবন ঢাকায় যায়। ঢাকার চাকচিক্য শিক্ষিত মানুষের চলাফেরা ওর ভালো লাগে। ছেলেকে পড়ালেখা করাতে ইচ্ছে করে। সাপ ধরা বাদ দিয়ে আজকাল পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বীণ বাজাতে ভালো লাগে ওর। তাতে যা আয় হয় তাতেই সে খুশি। চওড়া রঙের একটা জামা তৈরি করে। সাদা ধবধবে লুঙ্গি পরে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। কাঁধে লম্বা একটা ঝোলা রাখে। ভুবনের ছেলে বাবাকে এই পোষাকে দেখলেই সাথে রওনা হওয়ার বায়না ধরে। রাজধানীতে এলেই স্কুল-কলেজের সামনে বীণ বাজিয়ে ভালো পয়সা মেলে। কিন্তু ঢাকার বাইরে সারাদিন বীণ বাজালেও কেউ একটি পয়সা ভুবনকে দেয় না।
একদিন বিশাল এক বাড়ির সামনে বাঁশি বাজাচ্ছিল ভুবন। ‘মেরা মন দোলে ...’ গানের সুর ভুবনের খুব প্রিয়। মন দিয়ে সে এই সুরে নিজেই মগ্ন হয়ে বীণে ধুন তুলেছে। ছোটদের সাথে বড়রাও জড়ো হয়েছে ভুবনের চারপাশে। এমন সময় ছেলে বলল, বাবা জল খাব। এই বাড়িটা থেকে খেয়ে আসি। ভুবন মাথা নেড়ে সায় দেয়।
বাড়িটার নিচতলায় একটা পাইপ থেকে জল ঝরছিল। ছেলের কথায় সায় দিয়ে বীণ বাজাতে বাজাতে ভুবন সামনে এগিয়ে যায়। লোকেরা পয়সা ছুড়ছিল ওপর থেকে, উঁচু বাড়িগুলো থেকে পড়ছিল খুচরো টাকাপয়সা। এভাবে কতক্ষণ কাটল খেয়াল নেই। হঠাৎ মনে পড়ল খোকা সাথে নেই। ভুবন বীণ বাজানো বন্ধ করে পিছিয়ে যায়। কিন্তু ছেলেকে আর খুঁজে পায় না।
হায় হায়! ছেলে কোথায়! দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। আলো জ্বলে ওঠে রাস্তায়, বাসাবাড়িতে। ভুবন ধারকাছের সবাই জিজ্ঞেস করে, খোঁজে। কেউ ওর ছেলের সন্ধান দিতে পারে না। রাতে সে আর নৌকায় ফেরে না। পরদিন ঝোলাঝুলি নিয়ে অভুক্ত অসুস্থ ভুবন একা নৌকায় ফেরে। রুক্মিণী কেঁদে আকুল।
ভুবন পরপর আরও কয়েকদিন ওই বাড়িটার সামনে গিয়ে বসে থাকে, ছেলেকে খোঁজে, কিন্তু পায় না। কেমন এলোমেলো লাগে সব। ঘটনা দেখে শুনে ছোট সর্দার কিছুই বলে না। সবই বিধি-বিধান।
ওরা নৌকা ভাসায় আরও দূরান্তে, উত্তাল মেঘনার দাউদকান্দি ঘাটের দিকে।
এরপর কেটে যায় অনেক দিন। পুত্রহারা রুক্মিণী ভেসে বেড়ায় এঘাট-সেঘাট, মার্চের পতাকা বিক্রির দিন এলে ভুবন আবারও রাজধানীতে ঢোকে, সেই চেনা গলিতে যায়, বীণ বাজায়। পাশে আরও উঁচু ভবন হয়েছে। এখন আর কেউ পয়সা ছোড়ে না, ইট-পাথরের টুকরার মতো ভারী কিছুতে বেঁধে টাকা ছোড়ে। ভুবন টাকা কুড়ায় না, শুধু হেঁটে চলে যায় মনে মনে ছেলেকে খোঁজে।

অয়ন নটরডেম কলেজ প্রথম বর্ষের ছাত্র। বিজ্ঞান বিভাগ। সুরের নেশা আছে ওর। কবিতা লেখে ইংরেজি ভাষায়। নামকরা ইংরেজি দৈনিকের পাতায় ছাপা হয়। ইন্টারনেটে মিউজিকের ওয়েবসাইট খুঁজে গিটারে ধুন তোলে, ভাবে একদিন জিমি হেনরিক্স হবে। সবচেয়ে কম বয়সে সে পৃথিবী মাত করবে। সারাক্ষণ ওর স্বপ্ন, ব্রিটেনে যাবে, মিউজিক অ্যান্ড লিটারেচার পড়বে। মা যে কেন তাকে সায়েন্স দিল!
কলেজ সেদিন ছুটি। ভরদুপুরে অয়ন নবম তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাউথ অর্গান বাজাচ্ছিল। নিচে মিষ্টি সুরে বীণের শব্দ, রংচঙের পোশাকে এক বুড়োটে টাইপ লোক বীণ বাজিয়ে যাচ্ছে। অয়ন ওপর থেকে তাকে দ্যাখে, লোকেরা তাকে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে বীণওয়ালা কোনো টাকা নিচ্ছে না। সেদিন অয়নের মাথায় এক অদ্ভুত চিন্তা ঢুকে পড়ে। দু-এক দিন বাদে ওদের কলেজের সামনে পুলিশ বক্সের কাছে অয়ন এক ঘাটে বেশি দিন থাকতে চায় না। দেখে আবার সেই লোক বীণ বাজিয়ে যাচ্ছে। অয়ন তার পিছু নেয়। সুযোগ বুঝে ডেকে ওঠে— শুনুন!
শুরু হলো ভুবনের সঙ্গে আলাপ। অল্প সময়েই দু’জনের মধ্যে ভাব জমে ওঠে। ফুটপাতে বসে অয়ন মুগ্ধ হয়ে ভুবণের বীণ শোনে। অয়নের বন্ধুরা এই ঘটনা দেখে বলে– তুই একটা পাগল।
অয়ন ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে এক দিন ভুবনের নৌকায় চলে যায়। ঢাকা থেকে নিমতলা মাত্র ত্রিশ মিনিটের পথ। সেখানে খানিক সময় কাটিয়ে বিকেলে আবার ফিরে আসে। মা বলে কিরে খোকা– তোর কুইজ কেমন হলো। ব্রিটিশ এডুকেশন ফেয়ার আগামী সোমবার। ইন্টারনেটে নাম এন্ট্রি কর।
অয়ন মার কথা সব শোনে, কিছু বলে না। পরে বিজ্ঞপ্তি দেখে নিজের নাম এন্ট্রি করে। কখনও মার কথার অবাধ্য হয়নি। কিন্তু কিছু বিষয় সে নিজের মধ্যে চেপে যায়। যেমন সে যে ভুবনের সাথে তার নৌকায় যায় ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে, সেটা বলে না মায়ের কাছে। ভুবন তাকে এরই মধ্যে দাদাবাবু ডাকতে শুরু করেছে— দাদাবাবু! যাবে আজ? অয়ন নৌকায় গেলে রুক্মিণীও খুশি হয়। সকালে গেলে সন্ধ্যায় ফিরে আসে অয়ন। কখনও রুক্মিণী নৌকায় থাকে কখনও থাকে না। তবে ভুবন থাকে। অয়ন গেলে সে থাকে অয়নের পাশে পাশে। ভাত রাঁধে, ডিম ভাজে। অসম বয়সের ভিন্ন সমাজের দু’জন মানুষ নৌকায় ভাসতে ভাসতে একসাথে বসে ভাত খায়। অয়ন যেদিন নৌকায় যায়, ভুবনের কাছ থেকে কতকিছু যে চিনে আসে! আশফল, বুনোলতা, বিষ-ব্যথার নিরসনে গাছের লতা, শিঙ্গা!
অয়ন নৌকায় গেলে গলুইতে বসে, শুয়ে ওর মাউথ অর্গান বাজায়। কখনও হঠাৎ করেই সে আনমনা হয়ে যায়। আকাশ-মেঘ দেখে, পানকৌড়ির ডুবসাঁতার দেখে। ভুবন তাকে এগুলো শিখিয়েছে– কোনটা ভুবন চিল, কোনটা পানকৌড়ি, কোনটা ডাহুক। অবশ্য বাসায় ওর মা-ও তাকে অনেক কিছু টিভি দেখে শিখিয়েছে। বাবা যেমন ওকে চিনিয়েছে গানবাজনার দিকটা।
ছুটির দিনে কোন কোন সকালে দেরিতে নাশতা সেরে ওর বাবা ড্রইংরুমের মেঝের কার্পেটে হারমোনিয়াম নিয়ে বসত। অয়নকে বলত ডুগি-তবলাটা ধরত বাজান। অয়ন পাক্কা বাধকের মতো টান টান বসে ওর বাবার গানের তালে তালে সংগত করার চেষ্টা করত। ওর মা, দিদি তখন শ্রোতা হয়ে বাবা-ছেলের কৃত্রিম তারিফ করে বলত– বাহ্ বেশ বেশ।
অয়ন একটু আত্মভোলা গোছের হয়ে বেড়ে উঠেছে। জামাকাপড়, টাকাপয়সা কিছুই গুছিয়ে রাখে না। একবার ওর পকেটে একটি একশ টাকার নোট ছিল; ওর মা খেয়াল করেনি, কাজের বুয়াও দেখেনি। প্যান্ট ধোয়ার পর লন্ড্রি থেকে একদম ইস্ত্রি হয়ে এসেছে ওই মণ্ড হয়ে যাওয়া টাকা।
ভুবন অয়নকে একদিন একটা লতা দেখিয়ে বলেছিল— এটা নিশিগন্ধার লতা দাদাবাবু। অনেকে সর্পগন্ধাও বলে। সাপে কামড়ালে এই লতা চিবালেই ভালো হয়ে যায় সাপে কাটা মানুষ।
অয়ন সায়েন্টিফিক কোনো না ব্যাখ্যা করেই ওই লতা যত্ন করে পকেটে রেখে দেয়। সে ভুবনকে কষ্ট দিতে চায় না। কোনো মানুষকেই সে কষ্ট দিতে রাজি নয়।
দেখতে দেখতে একদিন অয়নের ব্রিটেনের মিউজিকে পড়ার ভিসা চলে আসে। আন্ডারগ্র্যাড লেভেলের একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়ে যায় অয়ন। আসছে বসন্তে সে চলে যাবে স্কটল্যান্ড। ভুবন এবং রুক্মিণীকে সব বুঝিয়ে বলা যায় না, শুধু বলে বিদেশ যাচ্ছি।
ভুবন বলে— ওইখানে কি নৌকা আছে?
— আছে, তবে এ রকম না। এ দেশ থেকে চালিয়ে যাওয়া যাবে না। উড়ালপথে যেতে হবে।
ভুবন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অয়নের দিকে। আনমনা হয়ে যায়। সে তার হারিয়ে যাওয়া খোকার কথা মনে করতে চায় না, তবু মনে আসে। খোকা না হারালে হয়তো এতদিনে অয়নের মতো বড় হতো। অয়ন দাদাবাবুকে তার খুব মনে ধরেছিল। বড়লোকের ভালো ছেলে। চেহারা পোশাকে সাধারণ। সেও চলে যাবে দূর কোনো অজানা দেশে! আর কি কোনো দিনও তার দেখা পাবে?
কৃষ্ণপক্ষের সন্ধ্যা নামছে চটজলদি। বহরের সব নৌকায় হারিকেনের আলো জ্বালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বেদে-বেদেনিরা। ভুবনের মনের অবস্থা বুঝতে পারে রুক্মিণী।
তুমি আলো জ্বালাও— রুক্মিণী বলে। আমি তোমার দাদাবাবুকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে নৌকা থেকে নামে অয়ন, পেছনে রুক্মিণী। নৌকা থেকে নেমে পাড়ে উঠে বড় সড়ক পর্যন্ত যাওয়ার পথ ছিল না, অথচ সবাই পায়ে পায়ে হেঁটে একটা সরু পথ বানিয়ে নিয়েছে। দু’পাশে সামান্য ঝোপঝাড়। অয়ন রুক্মিণী কখনও সরু পথে গা ঘেঁষে পাশাপাশি আবার কখনও আগে-পিছে করে হাঁটতে থাকে। ঝিঁঝি পোকার ডাকে, জোনাকিরা তাদের ছোট ছোট আলো দিয়ে ওদের পথের দু’পাশে এক মায়াময় আলো-আঁধারি সন্ধ্যার আয়োজন করে ফেলেছে।
রুক্মিণীর বিষণ্ন হৃদয়, বিষণ্ন ম্লান মুখ অয়নেরও। বাসে ওঠে অয়ন। রুক্মিণী অপলক তাকিয়ে থাকে। আশীর্বাদের দৃষ্টিস্নাত হয়ে অয়ন যাত্রীর ভিড়ে ঢুকে যায়। চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত ঢাকামুখী বাসের  চলে যাওয়া দেখে রুক্মিণী।
ভুবন ভাবে, সে আর এই ঘাটে থাকবে না। এখানে থাকলে তার খোকার স্মৃতি আর অয়ন দাদাবাবুর স্মৃতি কাঁদাবে। এমনিতে রুক্মিণী রাত নিশুতি হলেই ছেলের জন্য কাঁদে। রাতের সেই কান্না ঘাটের সব নৌকায় ঢেউ হয়ে মৃদু লয়ে ছড়িয়ে পড়ে। একটা কৃষ্ণ গহ্বরে প্রবেশ করে ভুবন।
অবশেষে একদিন লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করে। অয়ন নামার আগে অবরোহণ কার্ড বের করার জন্য পকেটে হাত দিলে কার্ডের সাথে বেরিয়ে আসে ভুবনের দেওয়া শুকনো একটা লতা। সর্পগন্ধা, নিশিগন্ধা। ভুবন বলেছিল— সর্পে দংশন করলে সাততাড়াতাড়ি এই লতা খেলে মরা মানুষও জ্যান্ত হয়ে যায়!
অয়ন সযত্নে ফের ওয়ালেটের মধ্যে শুকনো লতাটা রেখে দেয়।

বিষয় : গল্প শিখা ইসলাম

মন্তব্য করুন