- ফিচার
- দূষণ এড়াতে ‘সবুজ কংক্রিট’
দূষণ এড়াতে ‘সবুজ কংক্রিট’

শহরের বড় বড় বাড়িঘরের ভিত্তি গড়ে ওঠে কংক্রিটে ভর করে। এটি আমাদের চারপাশেই রয়েছে, অথচ অদৃশ্য। ইতালির সালের্নো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী কংক্রিট নিয়ে বিস্তর গবেষণা করছেন। সাধারণ কংক্রিটের উপাদান হলো পানি, সিমেন্ট, বালু, নুড়ি ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা এর সঙ্গে যোগ করেছেন ‘রিসাইকল্ড ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবার’ বা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত নানা ধরনের আঁশ বা তন্তু। এর উদ্দেশ্য– আরও বেশি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কংক্রিট তৈরি করা।
এই গবেষক দলের সদস্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এনজো মার্তিনেলি বলেন, ‘আমরা দেখার চেষ্টা করছি, কংক্রিটে সাধারণ ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবারের পরিমাণ কমিয়ে তার বদলে কীভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পোপযোগী তন্তু ব্যবহার করা যায় এবং কংক্রিটের মান ও স্থিতিস্থাপকতার হানি না ঘটিয়ে তা করার চেষ্টা চলছে।’
রিসাইকল্ড পদার্থে সমৃদ্ধ এই পরীক্ষামূলক কংক্রিট বিভিন্নভাবে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়। বেঁকিয়ে, চাপ দিয়ে, টেনে লম্বা করে ও চিরে দেখা হয়, চরম পরিস্থিতিতে ওই কংক্রিটের কী প্রতিক্রিয়া হয়। আর্জেন্টিনার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আন্তোনিও কাজিয়ানো সে জন্য সব ধরনের স্ট্রেস টেস্টের ব্যবস্থা করেছেন। এ গবেষক জানান, ‘আমরা বুঝেছি যে, রিসাইকল্ড ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবারের মূল সমস্যা হলো তার জ্যামিতি। বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে তাদের জ্যামিতি আর নিয়মমাফিক বা মসৃণ নয়। কাজেই সেগুলো সিমেন্টের সঙ্গে ভালোভাবে মেশে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবার আরও ভালোভাবে মেশে। যার অর্থ– আমরা এমন এক কংক্রিট তৈরি করতে পারি, যার যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো আরও বেশি শক্তিশালী; সেই কারণে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য।’
যান্ত্রিক পরীক্ষা ছাড়াও গবেষকরা কম্পিউটার সিমিউলেশনের মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করেন, চরম পরিস্থিতিতে কংক্রিটের ভেতর কী ঘটে। তুকুমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হোসে গিয়ের্মো এৎসে বলেন, ‘একাধিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে– যেমন কংক্রিটের ভেতরে প্রতিটি উপাদানের অনমনীয়তা, কংক্রিটের ভেতরকার আকার, রসায়ন, অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা, আর্দ্রতার পরিমাণ, কংক্রিটে কতটা ফাইবার আছে ও কী ধরনের ফাইবার– এসব প্যারামিটার দিয়ে আমরা কংক্রিটের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করি।’
বিজ্ঞানীদের আশা– তাঁদের গবেষণার ফলে শিগগিরই কলকারখানায় ‘সবুজ কংক্রিট’ তৈরি হবে। একটি কারখানায় প্রতি বছর ৬০ হাজার ঘনমিটার কংক্রিট তৈরি হয়। ওই কোম্পানির ম্যানেজাররা বলছেন, তারা টেকসই, বিকল্প কংক্রিট উৎপাদন করতে রাজি। কংক্রিট তৈরির ওই কোম্পানির কোয়ালিটি ম্যানেজার মাউরো মেলে বলেন, ‘‘আমরা ইতোমধ্যে আমাদের কংক্রিটে ১০০ শতাংশ রিসাইকল্ড পানি ব্যবহার করি। আমরা খুব খুশি হয়ে রিসাইকল্ড ফাইবারের মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য ‘অ্যাগ্রেগেট’ ব্যবহার করব, যদি তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের উপযোগী হয়।’’
প্রসঙ্গত, সিমেন্ট আর পানি ছাড়া কংক্রিটে যা কিছু থাকে, পরিভাষায় তার নাম ‘অ্যাগ্রেগেট’। কিন্তু সেই অ্যাগ্রেগেটে যদি পুরোনো ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবার, এমনকি পুরোনো টায়ার বা প্লাস্টিকের টুকরো ঢোকানো থাকে, তাহলে তার নাম হয় ‘সবুজ কংক্রিট’।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এনজো মার্তিনেলি আরেকটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন, ‘‘উদ্ভিদ তন্তু দিয়ে সমৃদ্ধকৃত সবুজ কংক্রিট পুরোনো বাড়িঘর মজবুত করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে– যেমন ঐতিহাসিক বাড়িঘর। এটি একটি ভালো, টেকসই বিকল্প; কেননা এটি এমন সব পদার্থ থেকে তৈরি, পরিবেশের ওপর যাদের প্রভাব অনেক কম ও পরিবর্তনীয়। যেহেতু কংক্রিট বাড়ির কাঠামো তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে না, সেহেতু প্রয়োজনে অন্য কংক্রিট দিয়ে তা পালটে দেওয়া যাবে।’
পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পোপযোগী তন্তু ও উদ্ভিদজাত তন্তু ছাড়াও বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে পুরোনো গাড়ির টায়ার ও পুরোনো প্লাস্টিক ব্যবহার করে উচ্চমানের সবুজ কংক্রিট তৈরির আশা করছেন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
মন্তব্য করুন