গলায় রকমারি গহনা

আসমাউল হুসনা
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৫:৪০
সময়টা ফিউশনের। নান্দনিক গহনার পাশাপাশি বোহেমিয়ান ধারার গহনা চলছে। কিছু কিছু গলার গহনায় সাবেকিয়ানার প্রভাবও স্পষ্ট। গলার বাহারি ধরনের গহনা নিয়ে লিখেছেন আসমাউল হুসনা
কানের দুলের সঙ্গে গলার সেটের প্রচলন অনেক আগে থেকে। তবে আজকাল কানে দুল না পরেও অনেকে গলায় পরছেন চোকার, মালা কিংবা পেনড্যান্ট। এটি ফ্যাশনে নিয়ে আসছে অন্যমাত্রা। পাথর, ধাতব, কাঠ, মাটি কিংবা অন্য যে কোনো উপকরণের গলার হার এখন ট্রেন্ডে আছে। গলায় জড়িয়ে থাকা পঞ্চচিপ বা পাঁচ স্তরের মালা, তিন স্তরের রানিহার, হাঁসুলি, জড়োয়া, চোকার, নবরত্ন হার, চন্দ্রহার, সীতাহার, অর্ধহার, লহর চেইনের নকশায় প্রকাশ পায় সাবেকিয়ানা। একটা সময় গলার গহনায় সোনা-রুপার প্রাধান্য থাকলেও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এর নকশা ও ম্যাটেরিয়াল। কড়ি, সুতা, টারসেল, কাঠ, মাটি, ক্লে ব্যবহার হচ্ছে গলার গহনায়। পারস্যের মিনাকারি কাজও শোভা পাচ্ছে গলার হারে।
টারসেল হার: এ সময়ের গহনার নতুন সংস্করণ টারসেল বসানো গহনা। সুতার তৈরি টারসেল এতদিন ধরে পোশাকের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। সম্প্রতি গহনার অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। কখনও মেটালের চেইন, কখনও পাথর আবার কখনও কাপড়ের সঙ্গে যুক্ত করে টারসেল দিয়ে বানানো হচ্ছে এসব মালা।
মিনাকারি: মিনাকারি নকশায় প্রকাশ পায় রাজকীয় আভিজাত্য। সোনার গহনা রঙিন করে তোলে এই মিনাকারি। হারের মাঝের অংশে লাল, সবুজ ফুল সাজানো হয় মিনাকারি কাজে। বর্তমানের নজরকাড়া কিছু মিনাকারি নকশার গহনা হলো পাউডার ব্লু বা ভেলভেট চোকার, জহরতখচিত হার, ময়ূরখচিত নেকলেস, মিন্ট গ্রিন প্রিন্সেস নেকলেস, বেগুনি কালার নেকলেস, পদ্ম বা পাখি মোটিফের নেকলেস, কলকা মোটিফের নেকলেস ইত্যাদি।
মুক্তার মালা: রানী এলিজাবেথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তার মালার ইতিহাস। মুক্তার মালা তাঁর খুব প্রিয় ছিল। আর্মাডা পোর্ট্রেট নামে ছবিটিতে এলিজাবেথের গলায় অনেক মুক্তার মালা দেখা যায়। মুক্তা পছন্দ করতেন মোগল সম্রাটরাও। মুক্তার মালা গলায় সম্রাট আকবরের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। অনলাইনভিত্তিক মুক্তার প্রতিষ্ঠান পার্ল আর্টসির সানজিদা আলম সম্পা বলেন, ‘মুক্তার গহনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ডিজাইনে নিত্যদিন আনা হচ্ছে পরিবর্তন। আসল মুক্তার সঙ্গে আসল পাথর ব্যবহার করেও করা হচ্ছে ডিজাইন। হালকা থেকে ভারী সব ধরনের মুক্তার গহনাই তৈরি করছি।’ যে কোনো হালকা সাজ পোশাকে মুক্তার মালা খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে যায়। মুক্তা মানে সাদা রং বোঝালেও মুক্তাতে রয়েছে হালকা গোলাপি ভাব। বর্তমানে মুক্তা চাষ হয় বলে বেগুনি, সবুজ রং দেখা যায় মুক্তায়। সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, পশ্চিমা পোশাক সবকিছুর সঙ্গে মুক্তার মালা গলায় গহনা হিসেবে ফুটে ওঠে।
গামছায় তৈরি হার: বর্তমান প্রজন্মের কাছে গামছা ম্যাটেরিয়ালে তৈরি গলার মালা খুবই পছন্দ। কুর্তি, কামিজের সঙ্গে এটি খুব মানানসই। গামছা ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গে যুক্ত করা হয় কড়ি ও পুঁতি। হ্যান্ড পেইন্টেড মালা: ফ্যাশনেবল মানুষগুলো হ্যান্ড পেইন্টেড মালা বেশি পছন্দ করেন। নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায় এর মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন ঋতু, ঘটনা, প্রকৃতি, ফুলের প্রতিচ্ছবি খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় হ্যান্ড পেইন্টেড মালায়। কাঠের ওপর করা হয় এই হ্যান্ড পেইন্ট। মাটির মালা: মাটি মানেই প্রকৃতির খুব কাছের। মাটির তৈরি মালায় বিভিন্ন রং ও নকশা এঁকে ফ্যাশন উপযোগী করে তোলা হয়। পহেলা বৈশাখ, পালা-পার্বণে এটি বাঙালিয়ানাকে তুলে ধরে। গোল্ড প্লেটেড: সোনার দাম এখন লাগামহীন। তবে বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঙালিদের সোনার গহনার একটি আক্ষেপ থেকেই যায়। সোনা না হলেও সোনার মতো নকশায় তৈরি হচ্ছে গোল্ড প্লেটেড গহনা। সীতাহার, কণ্ঠহার না হলে যেন বিয়ের সাজই পরিপূর্ণ হয় না।
ধাতব পাথর: সোনার ওপর কুন্দন, পান্না, রুবিসহ নানা রকমের দামি পাথর বসিয়ে চিরাচরিত সোনার হারের রূপ বদলে দেওয়া হচ্ছে বর্তমানে। অ্যান্টিক মালা অথবা কয়েক লেয়ারের চেইনের সঙ্গে ঝোলানো বিভিন্ন ধরনের পেন্ডেন্ট পরতে পারেন সাদামাটা পোশাকের সঙ্গে। ক্যাজুয়াল স্টাইলে বেশ মানিয়ে যাবে এটি। নব্বইয়ের দশকের প্রিয় অ্যাক্সেসরিজ চোকার নেকলেস এখন অনেকের পছন্দের শীর্ষে। এই চোকারের মধ্যে আছে নানা ধরন। কোনোটি একদম সমান মখমলের একটি ফিতা বা নেটের লেইসের হয়ে থাকে। পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে এটি সবচেয়ে বেশি মানায়। কুন্দন ও মুক্তার কাজের ঝুল দেওয়া চোকারগুলো শাড়ির সঙ্গে সুন্দর মানায়। গলার ধরন অনুযায়ী হার বাছাই করলে ভালো দেখাবে। সে ক্ষেত্রে যাদের ভরাট গলা, তারা গলা ভরা একটি নেকলেস পরতে পারেন। দেখতে বেশ ভালো লাগবে। লম্বা গলাতেও ভরাট নেকলেস হাঁসুলি পরতে পারেন। গলার দৈর্ঘ্য কম হলে লম্বা ঝুলের হার পরলে ভালো দেখাবে। ছোট-বড় প্রায় সব শপিংমলের পাশাপাশি অনলাইন পেজগুলোতেও বিভিন্ন ডিজাইন ও ম্যাটেরিয়ালের তৈরি গলার গহনা পাওয়া যায়। অনলাইন পেজ রওনাক ক্রিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা রওনক জাহান বলেন, মানুষ মাত্রই নতুনকে পছন্দ করে। নতুন ও একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি গলার মালাগুলোই সবাই গ্রহণ করছে। প্রতিটি গহনা বানানোর সময় ব্যক্তির রুচি, উপলক্ষ ও আবহাওয়া বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে হালকা গহনাতেই বেশি ঝুঁকছে সবাই।
গহনার যত্ন
ব্যবহারের পর যে কোনো উপকরণের গলার হার, লকেট কিংবা পেনডেন্ট টিস্যুতে পেঁচিয়ে রেখে দেবেন। মুক্তার হার ও চোকার মখমল কাপড়ে পেঁচিয়ে বক্সে রাখুন। ধাতবের গলার গহনায় সরাসরি পারফিউম স্প্রে করা থেকে বিরত থাকুন। গহনায় যেন পানি না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। পান্না পাথরের গলার মালা কিংবা হার যেন হাত থেকে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ, পান্না খুব ঠুনকো ও নরম পাথর। ময়লা হলে সুতি কাপড়ের সাহায্যে গহনা মুছে নিন। স্বর্ণ ও হীরা ছাড়া অন্যান্য গলার হারে ভুলেও সাবান-পানি লাগাবেন না।